নিউইয়র্ক     রবিবার, ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিএনপির অঙ্গসংগঠনে নেই চেইন অব কমান্ড

বাংলাদেশ ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০২৩ | ১১:৫৭ অপরাহ্ণ | আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২৩ | ১১:৫৭ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
বিএনপির অঙ্গসংগঠনে নেই চেইন অব কমান্ড

বিএনপি।ছবি : সংগৃহীত

ক্ষমতাসীন সরকারের অবিলম্বে পদত্যাগ, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে টানা আন্দোলনে মাঠে আছে বিএনপি ও সমমনা দল এবং জোটগুলো। চলমান আন্দোলনকে আগামী মে-জুন মাসে এক দফার আন্দোলনে পরিণত করতে নানামুখী তৎপরতা চলছে। কঠোর আন্দোলনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বিভিন্ন দল ও জোটের সঙ্গে সখ্য গড়ে বাড়ানো হচ্ছে মিত্রের সংখ্যা। একই সঙ্গে বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন ও বিএনপির সাংগঠনিক ইউনিট পুনর্গঠনের মাধ্যমে শক্তিশালী করার কথাও রয়েছে। যেসব কমিটির মেয়াদ শেষ বা নতুন কমিটি দরকার, সেগুলোও হওয়ার কথা। কিন্তু চূড়ান্ত আন্দোলনের সময় ঘনিয়ে এলেও দল গোছানোর কাজ শেষ করতে পারেনি বিএনপি। পাশাপাশি দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য রয়েছে। আন্দোলনের প্রধান রসদ জোগানদাতা বিএনপির দুই সহযোগী ও ৯টি অঙ্গসংগঠনের সাংগঠনিক অবস্থা বেহাল। চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ায় বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। বারবার উদ্যোগ নিয়েও অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো পুনর্গঠন শেষ হয়নি। ফলে চলমান সরকার পতন আন্দোলনের সফলতা নিয়েও উদ্বেগ-আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। অবশ্য বিএনপির শীর্ষ নেতা ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা বলছেন, কমিটি পূর্ণাঙ্গ থাক না থাক আন্দোলনে কোনো প্রভাব পড়বে না। এরই মধ্যে সারা দেশে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ, সরকারের পদত্যাগের দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে তার প্রমাণ মিলেছে। কেননা দেশের কঠিন এ মুহূর্তে প্রত্যেক নেতাকর্মী পদপদবির কথা ভুলে ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।

জানা যায়, একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর পুরোদমে দল পুনর্গঠন শুরু করে বিএনপি। তন্মধ্যে মূল দল ও অঙ্গসংগঠনের কমিটি হালনাগাদের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিএনপির ৯টি অঙ্গসংগঠন হচ্ছে—জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মুক্তিযোদ্ধা দল, কৃষক দল, মৎস্যজীবী দল, তাঁতী দল, ওলামা দল, জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) ও মহিলা দল। সহযোগী সংগঠন ২টি হলো—জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল। এসব সংগঠনের বেশিরভাগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি থাকলেও মেয়াদ নেই। তন্মধ্যে যুবদল কিছুটা সক্রিয়। দীর্ঘ সময়েও জেলা শাখা কমিটি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কমিটি হালনাগাদ শেষ করতে না পারায় অনেক ত্যাগী ও যোগ্য নেতাকর্মী দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন। অনেকে বিদেশে পাড়িও জমিয়েছেন। কেউ কেউ দীর্ঘদিন পর অঙ্গসংগঠনে পদ পেলেও নামকাওয়াস্তে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করে দায় সারছেন। ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান কালবেলাকে বলেন, বিএনপি ও সব অঙ্গসংগঠন আগের চেয়ে বেশি সুসংগঠিত। তারা গণতন্ত্র, ভোটাধিকার এবং ১০ দফা দাবি আদায়ে খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত।

ছাত্রদল নিয়ে দ্বিধায় বিএনপি : বিএনপির আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি ছাত্রদল। অথচ রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের কার্যক্রম নেই বললেই চলে। সংগঠনে চলছে আধিপত্য বিস্তারের লড়াই। যদিও এই ছাত্রদলকে সামনে রেখেই আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সফলতা পেয়েছিল বিএনপি। বিগত ১৪ বছর সেই সুনাম ধরে রাখতে পারেনি ছাত্রদল। গড়ে তুলতে পারেনি বড় কোনো আন্দোলন। এমনকি পেছনে থেকে বিএনপিকে আন্দোলনে সহায়তা করতেও দেখা যায়নি। সামনে এক দফার আন্দোলনে ছাত্রদলের বর্তমান নেতৃত্ব বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারবে কি না তা নিয়ে সন্দেহে পড়েছেন বিএনপির হাইকমান্ড। কেননা ছাত্রদলের শ্রাবণ-জুয়েল নেতৃত্বাধীন কমিটির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর বিএনপিকে দ্বিধায় ফেলে দেয়। ফলে দীর্ঘ সাড়ে ৬ বছর ধরে শূন্য থাকা বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক পদে গত ৮ জানুয়ারি ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি রকিবুল ইসলাম বকুলকে দায়িত্ব দেন সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমান। তিনি ছাত্রদলকে সুসংগঠিত করতে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। এরই মধ্যে ছাত্রদলের কমিটি ভেঙে দেওয়ার কথাও শোনা যাচ্ছে।

জানা যায়, ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে সভাপতি ও সাইফ মাহমুদ জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক করে প্রথমে সুপার ফাইভ এবং গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বরে ৩০২ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় কমিটিতে আরও ৮৯ জনকে পদ দেওয়া হয়। এখন আরও ৭২ থেকে ৮০ জনকে নতুনভাবে পদ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। মূলত সভাপতি শ্রাবণ ও সাধারণ সম্পাদক জুয়েলের অনুসারীদের পদায়ন করতেই এই উদ্যোগ। ছাত্রদল নেতারা বলছেন, এখন ‘টু-লেট’ দিয়ে পদ দেওয়া হচ্ছে। সূত্র জানায়, সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে জমেছে অভিযোগের স্তূপ। সভাপতি শ্রাবণের বিরুদ্ধে অভিযোগ— তিনি সবাইকে নিজের অনুগত না হলে খুব বেশি কথা বলেন না। সিনিয়রদের অনুপস্থিতিতে তাদের নিয়ে বিভিন্ন বাজে ও অশালীন মন্তব্য করেন। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক জুয়েল কেবল তার নিজ এলাকা বরিশালের ছেলেদের প্রাধান্য দেন। ছাত্রলীগের সঙ্গে আঁতাত করে চলেন।

এদিকে কমিটিতে পদবাণিজ্যের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের আহ্বায়ক পাভেল শিকদার সম্প্রতি তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এটা কি শুধু শ্রাবণদেরই ছাত্রদল? আমাদের না? অযোগ্য লোকদের থানা কলেজের নেতৃত্বে আনার জন্য শুরু থেকেই ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ১৮টি ইউনিটের প্রতিটিতে কেন লেংটাভাবে হস্তক্ষেপ করতে হবে শ্রাবণের? সভাপতি হইলে কি সব পারে? সভাপতি হইলেই কি তার চিন্তাভাবনা নিখুঁত?’ এ ধরনের পোস্ট করায় গত শুক্রবার তার পদ স্থগিত করে ৩ দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা চেয়েছে ছাত্রদল। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রদল সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ কালবেলাকে বলেন, আমরা ছাত্রদল অতীতের মতোই বিএনপির ভ্যানগার্ড হিসেবে মাঠে থাকব। সংগঠনের প্রয়োজনে ছাত্রদলে নতুনভাবে পদ দেওয়া হতে পারে। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন। সবাইকে বলব, এবারের আন্দোলন বাংলাদেশের অস্তিত্ব ও স্বাধীনতা রক্ষা, মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, আসুন সকল ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন গড়ে তুলে দেশকে রক্ষা করি।

যুবদল : ২০২২ সালের ২৭ মে সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুকে সভাপতি ও আব্দুল মোনায়েম মুন্নাকে সাধারণ সম্পাদক করে আট সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় (আংশিক) কমিটি দেওয়া হয়। এর প্রায় ১১ মাস পর গত ২২ ফেব্রুয়ারি ২৫১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে এ কমিটি নিয়ে বিতর্ক ওঠে। এমন কিছু ব্যক্তি পদ পেয়েছেন, যারা বিগত দিনে কোনো কর্মসূচিতে ‘সক্রিয়’ ছিলেন না। আর্থিক লেনদেনের বিনিময়ে তাদের পদ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। শুধু তা-ই নয়, ছাত্রদলের সাবেক বেশ কয়েকজন ত্যাগী নেতাকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে না রাখায় কমিটি বাতিলের দাবিতে তারা বিক্ষোভ-সমাবেশ করছেন। পদবঞ্চিতদের অভিযোগ, যুবদল সভাপতি টুকু ও সাধারণ সম্পাদক মুন্না নিজেদের অনুসারীদেরই কমিটিতে প্রাধান্য দিয়েছেন। তবে যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু কালবেলাকে বলেন, আমরা দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত আছি। কেউ কোনো অভিযোগ করলে সেসব ভিত্তিহীন।

প্রস্তুতি শেষ করছে স্বেচ্ছাসেবক দল : জানা যায়, গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর এসএম জিলানীকে সভাপতি ও রাজিব আহসানকে সাধারণ সম্পাদক করে স্বেচ্ছাসেবক দলের পাঁচ সদস্যের কেন্দ্রীয় (আংশিক) কমিটি ঘোষণা করা হয়। একই দিনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের আংশিক কমিটি হয়। পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হলেও গত ৩ জানুয়ারি রাতে সংগঠনের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নতুন কমিটি দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটি এখনো পূর্ণাঙ্গ হয়নি। তবে পূর্ণাঙ্গ কমিটির খসড়া তালিকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে পাঠানো হয়েছে। তিনি যাচাই-বাছাই করছেন। পূর্ণাঙ্গ কমিটি কবে ঘোষণা হবে, সেটা নির্ভর করছে তারেক রহমানের নির্দেশের ওপর। এবারের কেন্দ্রীয় কমিটি হবে ১৮১ বা ১৯১ সদস্যবিশিষ্ট। ফলে পুরোনো কিছু মুখ বাদ যাবেন। ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের পদায়ন করা হবে।

আরও জানা যায়, আসন্ন পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদপ্রত্যাশীরা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে নানাভাবে যোগাযোগ রাখছেন। অনেক সময় সভাপতি-সম্পাদক পদপ্রত্যাশীদের সঙ্গে রুঢ় আচরণ করেন। যে কারণে হযবরল অবস্থা তৈরি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসানের বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর ছুড়ছেন তারা। এ বিষয়ে রাজীব আহসান বলেন, আমরা গণতান্ত্রিকভাবে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখব। সব জেলা কমিটি প্রস্তুত। যে কোনো সময় কেন্দ্রীয় কমিটি হবে এবং আমরা আরও শক্তিশালী হবো। স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী কালবেলাকে বলেন, স্বেচ্ছাসেবক দল আগামী দিনের আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত। কমিটি গঠন চলমান প্রক্রিয়া। কমিটির বিষয়টি আন্দোলনে প্রভাব ফেলবে না। তিনি আরও বলেন, সাবেক নেতাদের মধ্যে যারা সক্রিয়, তাদের অনেকেই নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে থাকবেন। তবে অনেক নতুন মুখও আসবে। খারাপ আচরণের অভিযোগকে অমূলক বলে দাবি করেন তিনি।

‘ঘরে বসে গেছে’ মহিলা দল : বিএনপির অঙ্গসংগঠনগুলোর অন্যতম হচ্ছে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল। ‘চেতনায় নারী, বিপ্লবে নারী, গণতন্ত্র ফেরাতে আমরাই পারি’ এ স্লোগানকে ধারণ করে ১৯৭৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় সংগঠনটি। দেশের নারীদের অধিকার আদায় ও বিভিন্ন দুঃসময়ে এ সংগঠনের ভূমিকাও ছিল প্রশংসনীয়। ২০১০ সালে নূর-ই-আরা সাফা সভাপতি এবং শিরিন সুলতানা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এ কমিটির নেতৃত্বে নারী ধর্ষণ, লাঞ্ছনাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সোচ্চার ছিল মহিলা দল। কিন্তু ওই কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের সহধর্মিণী আফরোজা আব্বাসকে সভাপতি ও সুলতানা আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করে পাঁচ সদস্যের মহিলা দলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর আর কাউন্সিল করতে পারেনি। ২০১৯ সালের ৪ এপ্রিল সংগঠনটির ২৬৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়, যা বর্তমানে মেয়াদোত্তীর্ণ। এরপরও বিভিন্ন জেলা শাখা কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ৭৭টি সাংগঠনিক জেলা শাখার মধ্যে প্রায় সবকটিই নতুনভাবে ঘোষণা করা হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ না থাকায় সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছে।

সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড স্থবির হওয়ার পেছনে মেয়াদহীন কমিটি ও সাধারণ সম্পাদকের রুঢ় আচরণ দায়ী বলে মহিলা দলের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেত্রী আলাপকালে জানিয়েছেন। তাদের মতে, ৭ বছর আগে মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটি হয়েছে। সবাই এখন নতুন কমিটি চায়। দীর্ঘদিন ধরে যারা কষ্ট করে দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছে, তারাও চাচ্ছে একটা পদ ও পরিবর্তন। কিন্তু মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহম্মেদের রুঢ় আচরণে নতুনরা ক্ষুব্ধ। তিনি ছাত্রদল করা মেয়েদের ভালোভাবে নিতে পারেন না। নন পলিটিক্যাল ব্যক্তির মতো আচরণ করেন। কাজের বুয়ার সঙ্গেও মানুষ এমন ব্যবহার করে না। এ কারণে কেন্দ্রীয় মহিলা দল এখন ঘরে বসে গেছে।

সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতার কথা স্বীকার করে মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ কালবেলাকে বলেন, চলমান আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে মহিলা দলও মাঠে আছে। হামলা-মামলা খাচ্ছে। তবে আলাদাভাবে তেমন কর্মসূচি পালন হয় না। অনেকের মনে পদ নিয়ে সামান্য মান-অভিমান থাকায় এ সমস্যা দেখা দিয়েছে। এর মানে আমরা ঘরে ঢুকে যাইনি। অনেক জেলা কমিটি হয়ে গেছে। তারা কর্মসূচি পালন করছে। তিনি বলেন, মহিলা দলে ছাত্রদলের সাবেক নেত্রী হাতেগোনা কয়েকজন আছে। সবার সঙ্গেই ভালোভাবে যোগাযোগ হয়। তাছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটি মেয়াদহীন হলেও এটি বিএনপির হাইকমান্ড দেখবেন বলেও তিনি জানান।

জাসাস : জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) তাদের ঐতিহ্য হারাচ্ছে। গত ১৫ বছরে জাসাসের কর্মকাণ্ড নেই বললেই চলে। ২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ড. মামুন আহমেদ ও হেলাল খান নেতৃত্বাধীন কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। এরপর যেই হেলাল খানকে নিয়ে বেশি অভিযোগ তাকে আহ্বায়ক ও জাকির হোসেন রোকনকে সদস্য সচিব করে ২০২১ সালের ৬ নভেম্বর ৭১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা হয়। তবে জাসাসের নতুন কমিটি গঠনের পর ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়। নেতাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। অযোগ্য ও নিষ্ক্রিয়দের দিয়ে কমিটি করা হয়েছে দাবি করে তা বিলুপ্ত চেয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে চিঠি দেন বিক্ষুব্ধ একটি গ্রুপ। জাসাস সূত্র জানায়, আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক হেলাল খানের নিষ্ক্রিয়তার কারণে ওই কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। বছরের ১১ মাসই তিনি আমেরিকায় অবস্থান করেন। আর সদস্য সচিব যাকে করা হয়েছে, তার অতীত জীবনে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অবদান রয়েছে বলে জানা নেই। ৭১ সদস্যবিশিষ্ট যে কমিটি করা হয়েছে, সেখানে নিষ্ক্রিয় নেতারা অধিকাংশ পদ পেয়েছেন। বাদ দেওয়া হয়েছে অনেক ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকে। সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারি মাসে জাসাস জাতীয় সম্মেলন করলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারের দিন। এ বিষয়ে জাসাসের সভাপতি হেলাল খানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

শ্রমিক দল : শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি আদায় আর উৎপাদন বৃদ্ধি এবং দেশকে আত্মনির্ভরশীল হিসেবে দাঁড় করানোর লক্ষ্যে ১৯৭৯ সালের ৩ মে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল। শ্রমিক ইস্যুতে বিভিন্ন আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে শ্রমিক দল; কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না হওয়ায় সংগঠনটি নাজুক হয়ে পড়েছে। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১৯ ও ২০ এপ্রিল জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের জাতীয় কাউন্সিল হয়। আনোয়ার হোসাইন ও নূরুল ইসলাম খান নাসিম নেতৃত্বাধীন শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটি বর্তমানে মেয়াদোত্তীর্ণ। তাছাড়া সেক্রেটারি নাসিম বহুদিন নিষ্ক্রিয় ও অসুস্থ। দীর্ঘদিনেও নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি না হওয়ায় কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। নতুন কমিটিতে পদ পেতে আগ্রহী শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় নেতা হুমায়ুন কবির, কাজী মো. আমীর খসরু, আবুল খায়ের খাজা, মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অবস্থান করছেন। তৃণমূল থেকেও নতুন কমিটি গঠনের দাবি জোরালো হচ্ছে। মেয়াদহীন কমিটির কারণে তৃণমূল কমিটি গঠনে চলছে টাকার বিনিময়ে পদ বাণিজ্য।

মুক্তিযোদ্ধা দল: বিএনপির অন্যতম অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল। ‘মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র, মুক্ত করো গণতন্ত্র’ স্লোগানকে ধারণ করে ১৯৯২ সালের ২৫ আগস্ট এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে দলটির তৎকালীন নেতা বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) অলি আহমদের তত্ত্বাবধানে রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়; কিন্তু অলি আহমদ পরে বিএনপি থেকে বেরিয়ে গিয়ে এলডিপি নামে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন, যা বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে ছিল দীর্ঘদিন। মুক্তিযোদ্ধা দলের সর্বশেষ কাউন্সিল হয় ২০১৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর। ১৯১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন ইশতিয়াজ আজিজ উলফাৎ ও সাদেক খান। মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি হলেও সর্বশেষ গত ২৭ মার্চ রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘মুক্তিযোদ্ধা গণসমাবেশ’ করেছে সংগঠনটি। মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খান কালবেলাকে বলেন, গঠনতন্ত্র মোতাবেক আমাদের মেয়াদ নেই। নানা কারণেই সম্মেলন হয়নি। তবে রোজার পরে কাউন্সিলের চিন্তা আছে।

ওলামা দল : ধর্মীয় বিভিন্ন ইস্যুতে সক্রিয়ভাবে কর্মসূচি পালন করে থাকে জাতীয়তাবাদী ওলামা দল। মাওলানা শাহ নেছারুল হককে আহ্বায়ক ও অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম তালুকদারকে সদস্য সচিব করে ২০১৯ সালের ৫ এপ্রিল ১৭১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা হয়। কিন্তু অদ্যাবধি পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। ফলে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না সংগঠনটি। জানতে চাইলে ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা শাহ মোহাম্মদ নেছারুল হক ফোন রিসিভ করেননি। তবে ওলামা দলের সিনিয়র সহসভাপতি কাজী মো. সেলিম রেজা কালবেলাকে বলেন, ওলামা দল বিএনপির নেতৃত্বে সব আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় ভুমিকা পালন করছে। তবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় কিছু সমস্যা তো আছেই। তিনি বলেন, নেতৃত্ব শক্তিশালী করতে পূর্ণাঙ্গ ও নতুন কমিটি দরকার।

তাঁতী দল : ২০১৯ সালের ৬ এপ্রিল আবুল কালাম আজাদকে আহ্বায়ক ও মো. মজিবুর রহমানকে সদস্য সচিব ১২৮ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। যা মেয়াদোত্তীর্ণ।

মৎস্যজীবী দল : ২০১৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম মাহতাবকে আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক নেতা আব্দুর রহিমকে সদস্য সচিব করে ১৫৪ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। আব্দুর রহিম বলেন, নতুন কমিটি না হওয়ায় জনশক্তি ক্ষয় হচ্ছে।

কৃষক দল : ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর হাসান জাফির তুহিনকে সভাপতি ও ছাত্রদলের সাবেক নেতা শহীদুল ইসলাম বাবুলকে সাধারণ সম্পাদক করে বিএনপির অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের ২৩১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। বর্তমানে এই সংগঠনটি বিভিন্ন কর্মসূচিতে নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়ার চেষ্টা করছে। সূত্র : দৈনিক কালবেলা

এসএ/এমএএস/এমউএ/টিএ/পরিচয়

শেয়ার করুন