নিউইয়র্ক     শনিবার, ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশে বাইরের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে চীন : শেখ হাসিনা-শি জিনপিং বৈঠক

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৩ | ০৪:৪৩ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ২৭ আগস্ট ২০২৩ | ০৪:৪৩ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
বাংলাদেশে বাইরের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে চীন : শেখ হাসিনা-শি জিনপিং বৈঠক

বাংলাদেশে বাইরের হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে চীন। দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ব্রিকস সম্মেলনের বাইরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে চীনা প্রেসিডেন্ট এই মন্তব্য করেন। হোটেল হিলটন স্যান্ডটনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রী কন্যা ও ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের বিষয়ভিত্তিক অ্যাম্বাসেডর এবং অটিজম ও নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন শি’র উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘আপনি ব্রিকসে যোগ দিতে পারলে আমি আপনাকে (শেখ হাসিনা) সবসময় সমর্থন করবো।

চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে বাংলাদেশকে সহায়তা করবে চীন। আমরা এই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা চাই না।

মোমেন জানান, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার সরকার রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমিতে প্রত্যাবাসন করতে চায়। কারণ, তারা এই অঞ্চলের শান্তির জন্য হুমকি হয়ে উঠছে। তাদের মধ্যে অনেকেই অবৈধ মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায় জড়িয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘উন্নয়নের জন্য শান্তি অপরিহার্য।’

চীনের প্রেসিডেন্ট রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশকে সবসময় সমর্থন দিয়ে যাবে এবং বাংলাদেশের জ্বালানি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও অবকাঠামো উন্নয়নে সহায়তা করতে তার দেশের আগ্রহের কথা জানান।

শি জিনপিং বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলায় পরিণত করতে সহযোগিতারও আশ্বাস দেন। তিনি আরও বলেন: ‘একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’ গড়ার স্বপ্নকে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়িত করতে চীন আপনাকে সাহায্য করবে।’
প্রধানমন্ত্রী চীনা অর্থায়নে পরিচালিত কিছু প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে শি জিনপিংয়ের সহায়তা চেয়েছেন যা এখন তহবিল সংকটের জন্য আটকে রয়েছে। চীনা প্রেসিডেন্ট বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন।

আলোচনাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে প্রতি বছর প্রায় দুই হাজার কোটি ডলারের চীনা পণ্য আমদানি করেছে, যেখানে চীন মাত্র ৭০ কোটি মার্কিন ডলারের বাংলাদেশি পণ্য আমদানি করেছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট আশ্বস্ত করেছেন চীন-বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ঘাটতি হ্রাস করার উদ্যোগ নেবেন।

তিনি জানান, চীনের বাজারে ৯৮ শতাংশ বাংলাদেশি পণ্যে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশে কিছু চীনা বিনিয়োগ এলে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য ব্যবধান কমবে। তিনি দুই দেশের মধ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) স্বাক্ষরের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

উত্তরে, চীনা প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘আমরা দেশগুলোর মধ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেবো।’
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আগামী অক্টোবরে পদ্মা রেল সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করতে চীনের প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। জবাবে চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি অবশ্যই আপনার দেশে আসবো। তবে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সফরের সময় নির্ধারণ করা হবে।’

মোমেন জানান, শি জিনপিং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকেও চীন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
জবাবে শেখ হাসিনা বলেছেন, তিনি চীন সফর করবেন, তবে সময় লাগতে পারে। কারণ, জাতীয় নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে। তিনি নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত থাকবেন।

এদিকে শেখ হাসিনা চীনের প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের চীনে পড়াশোনার সুযোগ বাড়ানোর আহ্বান জানান এবং শি জিনপিং বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাস দেন।

ওদিকে সিনহুয়ার খবরে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চীনা প্রেসিডেন্টের বৈঠকে শি জিনপিং বলেন, জাতীয় সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় বাংলাদেশকে সমর্থন করে চীন। যাতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ ঐক্য ও স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে পারে, অর্জন করতে পারে উন্নয়ন ও পুনরুজ্জীবন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দৃঢ়ভাবে ‘এক চীন নীতি’ মেনে চলে বাংলাদেশ। আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বাড়াতে চীনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রশংসা করে। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করতে প্রস্তুত বাংলাদেশ। এ ছাড়া ব্রিকসের মতো বহুপক্ষীয় ব্যবস্থায় সহযোগিতা জোরদার করতেও প্রস্তুত রয়েছে বাংলাদেশ। ব্রিকসের কার্যপদ্ধতি উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য নতুন উন্নয়নের সুযোগ নিয়ে আসবে বলে বিশ্বাস করে বাংলাদেশ।

এই সাক্ষাতে অন্যান্য খাতের মধ্যে অবকাঠামো, তথ্যপ্রযুক্তি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও কৃষি সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান চীনা প্রেসিডেন্ট। শি জিনপিং বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে প্রচলিত বন্ধুত্বের কথা তুলে ধরেন। বলেন, ২০১৬ সালে উভয় পক্ষ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বে উন্নীত করেছে। এতে উভয় পক্ষের সহযোগিতা আরও গভীর হয়েছে। চীন ও বাংলাদেশ এখন নিজস্ব উন্নয়ন ও নবশক্তি সঞ্চারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন কৌশলে সমন্বয়ে আগ্রহী চীন।

শি জিনপিং আরও বলেন, প্রত্যেকের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে একে অন্যকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে এমন কাজ অব্যাহতভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে চালিয়ে যেতে চায় চীন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, উভয় পক্ষের উচিত হবে কৌশলগত যোগাযোগ শক্তিশালী করা। বিভিন্ন বিভাগ ও বিভিন্ন পর্যায়ের মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বিনিময় জোরদার করা। পাশাপাশি তিনি ব্যক্তি পর্যায়ে যোগাযোগ শক্তিশালী করার আহ্বান জানান। দুই দেশের জনগণের মধ্যে বন্ধন ও সাংস্কৃতিক বিনিময় জোরদার করার কথা বলেন। বাংলাদেশ নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে যোগ দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তিনি অভিনন্দন জানান। বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বহুপক্ষীয় বিষয়ে সমন্বয় ও সহযোগিতা জোরদার করতে চায় চীন। আন্তর্জাতিক সমতা ও ন্যায়বিচারের পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশগুলোর স্বার্থ রক্ষায় চীন আগ্রহী।

সিনহুয়া আরও বলেছে, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সফর করেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এ বিষয়টি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেছেন, তার ওই সফর দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক হয়ে আছে। কোভিড-১৯ মহামারির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের লড়াইয়ে চীন যে অমূল্য সমর্থন দিয়েছে তা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহায়তার প্রশংসা করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। চীনের এই অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহায়তা বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং জনগণের জীবনমানের উন্নতিতে সহায়ক হয়েছে বলে তিনি তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা বলেন, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশ-চীন সুসম্পর্ক। একই সঙ্গে একে অন্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না- এর ওপর ভিত্তি করে এই সম্পর্ক। এ সময় বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের ১০ম বার্ষিকী উপলক্ষে শি জিনপিংকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী হাসিনা। বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য নতুন দরজা উন্মুক্ত করে দিয়েছে বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতা। এ সময় তিনি চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করতে প্রস্তুত বলে জানান।

শেয়ার করুন