নিউইয়র্ক     শনিবার, ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বঙ্গভবনে বিদায়ের সুর, প্রস্তুতি বরণেরও

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৩ | ০১:২৮ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০৭ মে ২০২৩ | ০১:৩২ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
বঙ্গভবনে বিদায়ের সুর, প্রস্তুতি বরণেরও

জাকির হোসেন লিটন : আগামী সোমবার (২৪ এপ্রিল) শপথ নিতে যাচ্ছেন বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। দেশের ২২তম এ রাষ্ট্রপতিকে বরণ করে নিতে এরই মধ্যে নতুন করে সেজেছে পুরো বঙ্গভবন। ফুলে ফুলে আর নানা চিত্রকর্মে সেজেছে বঙ্গভবন আঙিনা। উৎসব আমেজ আর সাজসাজ রব বিরাজ করছে সবখানেই। পাশাপাশি বাজতে শুরু করেছে বিদায়ের করুণ সুর। নতুন রাষ্ট্রপতির শপথের পরপরই বিদায় নেবেন বর্তমান রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। নতুন রাষ্ট্রপতিকে বরণের পাশাপাশি প্রথমবারের মতো টানা দুই মেয়াদ পূর্ণ করে ইতিহাস গড়া এ রাষ্ট্রপতিকে বিদায় জানাতেও গ্রহণ করা হচ্ছে নানা আনুষ্ঠানিকতার। অনুষ্ঠানটিকে স্মরণীয় করে রাখতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

বঙ্গভবনের একাধিক সূত্র জানায়, সবচেয়ে বেশি মেয়াদে এ ভবনের বাসিন্দা ছিলেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। আঙিনার প্রতিটি পরতে পরতে ছিল তার বিচরণ। তিনি কখনো নীরবে-নিভৃতে একা একা সময় কাটাতেন না। সময় পেলেই আঙিনায় ঘুরে বেড়াতেন। খোশগল্পে মেতে উঠতেন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে; কিন্তু তার বিদায়ের খবরে সব জায়গায় যেন এখন বিমর্ষতার ছাপ। যেন বিদায়ের করুণ সুর বাজছে সবখানে। সবসময় আমুদে ও প্রাণোচ্ছ্বল এ রাষ্ট্রপতির বিদায়ের কথা চিন্তা করে বিষণ্নতার ছাপ পড়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মনে।

সোমবার(২৪ এপ্রিল) নতুন রাষ্ট্রপতির শপথের পর দুপুর সাড়ে ১২টায় আনুষ্ঠানিক বিদায় শুরু হবে বর্তমান রাষ্ট্রপতির। কোনো রাষ্ট্রপতিকে বিদায় জানাতে এই প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হচ্ছে রাজসিক বিদায় সংবর্ধনার। অনুষ্ঠানটিকে স্মরণীয় করে রাখতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বঙ্গভবনের ক্রেডেনশিয়াল গ্রাউন্ডে বিদায়ী গার্ড অব অনার প্রদানের মধ্য দিয়ে মূল অনুষ্ঠান শুরু হবে। শেষে তৎকালীন রাষ্ট্রপতির গার্ড অব অনার বঙ্গভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতিতে ফুলে সজ্জিত একটি খোলা জিপে ফোয়ারা এলাকা থেকে প্রধান ফটকের দিকে যাত্রা করবেন। প্রধান ফটকে স্যালুট গার্ড প্রদান করবে প্রেসিডেন্সিয়াল গার্ড রেজিমেন্ট। বঙ্গভবনের সব কর্মকর্তারা দুই দলে ভাগ হয়ে গাড়ির সামনে দড়ি টেনে দাঁড়াবেন। তারপর এটি সামনে অগ্রসর হবে। বঙ্গভবনের ভেতরে সব কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং পিজিআর সদস্যরা ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দেবেন এবং সদ্য সাবেক রাষ্ট্রপতি বঙ্গভবনকে বিদায় জানিয়ে খোলা জিপে বঙ্গভবন থেকে প্রস্থান করবেন। বঙ্গভবনে তার দীর্ঘ অবস্থানের সমাপ্তি শেষে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর (এসএসএফ) তত্ত্বাবধানে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে একটি ভিভিআইপি মোটর শোভাযাত্রায় নগরীর নিকুঞ্জ এলাকায় নতুন বাসভবনের উদ্দেশে রওনা হবেন তিনি।

গত ১৭ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সম্মানে বঙ্গভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এক বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, তিনি রাষ্ট্রপতি হলেও নিজেকে সবসময় দেশের একজন সাধারণ মানুষ হিসেবেই মনে করতেন। রাষ্ট্রপতির পদকে দায়িত্ব হিসেবে বিবেচনা করে তিনি তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন।

এদিকে বিদায়ের করুণ সুরের মধ্যেও নতুন রাষ্ট্রপতিকে বরণের প্রস্তুতি চলছে বঙ্গভবনজুড়েই। ধোয়া-মোছা শেষে সাজ সাজ রব সবখানে। নতুন রাষ্ট্রপতির পছন্দ-অপছন্দ বিবেচনায় নিয়ে সাজানো হচ্ছে বঙ্গভবনের প্রতিটি কক্ষ। দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতির শপথের প্রস্তুতি প্রায় শেষ। মোঃ আবদুল হামিদের উত্তরসূরি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিন ওই দিন সকাল ১১টায় শপথ নেবেন। শপথ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এরই মধ্যে ১ হাজার ২৩৮ জনকে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রপতির শপথ অনুষ্ঠান বঙ্গভবনে হয়। রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী, শপথ অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্ব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের আপন বিভাগের। আর অতিথিদের দাওয়াত দেওয়া থেকে শুরু করে প্রটোকল-সংক্রান্ত সার্বিক দায়িত্ব পালনের নেতৃত্বে থাকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বঙ্গভবনকেন্দ্রিক অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা ও আপ্যায়নের নেতৃত্ব দেয় আপন বিভাগ। নতুন রাষ্ট্রপতির শপথ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে অন্তত পাঁচটি কমিটি গঠন করা হয়। গত ৬ মার্চ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মাহমুদুল হাসান খানের নেতৃত্বে সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির মূল কাজ শপথ অনুষ্ঠান উপলক্ষে গঠিত বাকি চারটি উপকমিটির কার্যক্রম সমন্বয় করা এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে সার্বিক চিত্র অবহিত করা। অন্য কমিটিগুলো হলো, অতিথি তালিকা প্রণয়ন কমিটি, আমন্ত্রণপত্র প্রাপ্তি যাচাই কমিটি, আসন ব্যবস্থাপনা কমিটি ও অভ্যর্থনা কমিটি।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী নতুন রাষ্ট্রপতিকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন। শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। শপথ গ্রহণের পর পরই রাষ্ট্রপতির শপথ গ্রহণ এবং কার্যভার গ্রহণ-সংক্রান্ত দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

বঙ্গভবন সূত্রে জানা গেছে, নতুন রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে কৌতূহলের অন্ত নেই বঙ্গভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে। নতুন রাষ্ট্রপতির পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে তাদের আগ্রহের শেষ নেই। কারণ, শপথের পর ওই দিনই সপরিবারে বঙ্গভবনে উঠবেন নতুন রাষ্ট্রপতি। সেই লক্ষ্যে এরই মধ্যে সব কিছু সাজানো গোছানো হয়ে গেছে। নতুন রাষ্ট্রপতিকে বরণের জন্য যা যা দরকার সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছেন বঙ্গভবনের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। নতুন রাষ্ট্রপতির আগমনকে ঘিরে সব জায়গা এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসব আমেজ বিরাজ করছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন জানান, ২৪ এপ্রিল সকাল ১১টায় নতুন রাষ্ট্রপতির শপথ নেওয়ার পরই দুপুর সাড়ে ১২টায় বিদায় অনুষ্ঠান শুরু হবে। শপথ ও বিদায়ের সার্বিক প্রস্তুতি এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। এই প্রথম কোনো রাষ্ট্রপতিকে এত বড় আয়োজন করে বিদায় দেওয়া হচ্ছে। সূত্র কালবেলা

সুমি/পরচিয়

শেয়ার করুন