প্রিগোজিনের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রিগোজিন মেধাবী মানুষ ছিলেন। তবে দুর্ভাগ্য নিয়ে এসেছিলেন তিনি।’
রাশিয়ায় বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ভাড়াটে যোদ্ধাদের গ্রুপ ওয়াগনার প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের মৃত্যুর প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর মুখ খুললেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। প্রিগোজিনের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রিগোজিন মেধাবী মানুষ ছিলেন। তবে দুর্ভাগ্য নিয়ে এসেছিলেন তিনি।’
গতকাল বুধবার মস্কো থেকে ১০০ কিলোমিটার উত্তরে সেন্ট পিটার্সবার্গগামী একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়। ওউ দুর্ঘটনায় বিমানের তিনজন ক্রু-সহ দশ যাত্রীর সবাই নিহত হন। বিমানটিতে প্রিগোজিনও ছিলেন বলে যাত্রী তালিকা থেকে জানা যায়।
তবে তার মৃত্যুর বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা যায়নি। এ নিয়ে কোনো কথাও বলেননি পুতিন। ফলে বিষয়টি নিয়ে এক প্রকার ধোঁয়াশা ছিলই। তবে আজ এ বিষয়ে মুখ খুলেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
বৃহস্পতিবার (২৪ আগষ্ট) একটি টেলিভিশন চ্যানেলে দেয়া ভাষণে নিহতদের সবার প্ররিবারের প্রতি সমবেদনা জানান পুতিন। বিমানটিতে প্রিগোজিনের থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, ‘লোকটি জীবনে কিছু ভুল করেছেন। তবে অনেক কিছু অর্জনও করেছিলেন।
‘আমি প্রিগোজিনকে অনেক বছর ধরে চিনি। সেই নব্বইয়ের দশকে আমাদের পরিচয়।’
ইউক্রেন যুদ্ধে ওয়াগনার যোদ্ধাদের ভুমিকার কথা তুল ধরে পুতিন বলেন, ‘ইউক্রেনে নব্য-নাৎসিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বড় ভূমিকা রেখেছেন ওয়াগনার যোদ্ধারা। আমরা সেগুলো জানি এবং তাদের এ প্রতিদান আমরা কখনও ভুলব না।’
‘তিনি (প্রিগোজিন) খুবই মেধাবী ছিলেন, মেধাবী ব্যবসায়ী ছিলেন তিনি। তিনি শুধু আমাদের দেশের জন্যই কাজ করেননি, দেশের বাইরেও, বিশেষ করে, আফ্রিকাতে তার কাজের পরিধি বিস্তৃত ছিল। সেখানে তিনি তেল, গ্যাস, মূল্যবান ধাতু ও পাথরের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি কাজ করতেন ফলাফলের সঙ্গে।’
পুতিন বলেন, ‘আমি যতদূর জানি, গতকালই তিনি আফ্রিকা থেকে (রাশিয়া) ফেরেন। এখানে ফিরে তিনি রাশিয়ার সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাতও করেন।’
এ ঘটনার তদন্তে ইতোমধ্যে কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘ইতোমধ্যে প্রাথমিক তদন্ত শুরু হয়েছে। এটি সফলভাবে সম্পন্ন করা হবে। এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
‘দেখা যাক, তদন্তে কী উঠে আসে। বিশেষজ্ঞ ও প্রযুক্তির সহায়তায় জেনেটিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলমান।’
তবে তদন্ত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সময় লাগবে বলে জানান পুতিন।
ওয়াগনার প্রধান প্রিগোজিনসহ সাত যাত্রী নিয়ে বুধবার মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গের উদ্দেশে উড়াল দেয়ার ২০ মিনিটের মধ্যে বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে বিমানটিতে থাকা তিনজন ক্রুসহ ওই সাতজনই নিহত হন।
ওয়াগনার-ঘনিষ্ঠ টেলিগ্রাম চ্যানেল গ্রে জোন জানায়, মস্কোর উত্তরে টিভার অঞ্চলে বিমানটিকে গুলি করে নামায় রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনী। বিমানটি ভূপাতিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আগুন ধরে যায়।
এটিকে দুর্ঘটনা হিসেবে মানতে নারাজ প্রিগোজিনের অনুসারীরা। প্রো-ওয়াগনার মেসেজিং অ্যাপ চ্যানেলে তাদের দাবি, বিমানটিকে ইচ্ছাকৃতভাবে নামানো হয়েছে। এমনকি বিমানে রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষা বাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র হামলাও চালিয়ে থাকতে পারে।
ওয়াগনার প্রধান নিহত হওয়ার খবর বিভিন্নভাবে চারদিকে ছড়ালেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এটিকে পুতিনের পক্ষ থেকে দেয়া শাস্তি হিসেবেই দেখছেন। কারণ হিসিবে তারা বলছেন, প্রিগোজিন বিদ্রোহ ঘোষণার মধ্য দিয়ে ২৩ বছরের শাসনামলে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের ভিত্তি সবচেয়ে বেশি নড়বড়ে করে দিয়েছিলেন।