নিউইয়র্ক     শনিবার, ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রযুক্তির দুনিয়ায় তুলকালামের আভাস দিচ্ছে এক্সিটন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৩ | ০৩:০২ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৩ | ০৩:০২ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
প্রযুক্তির দুনিয়ায় তুলকালামের আভাস দিচ্ছে এক্সিটন

শিল্পীমাত্রই জানেন ক্যানভাসে কোথায় রং থাকবে তা যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ কোথায় রং থাকবে না, তা। এ দুইয়ের মেলবন্ধেই হয় সফল চিত্রকর্ম। শিল্পের ভাষায় এই রংহীন অঞ্চলকে বলা হয় নেগেটিভ স্পেস। যখন এটি পদার্থের দুনিয়ায় প্রবেশ করে, তখন এই ফাঁকা অঞ্চলই হোল নামে পরিচিত। বিশেষত অধপরিবাহীর দুনিয়ায় এই ফাঁকা অঞ্চল ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। আজকের এই সেমিকন্ডাকটরের দুনিয়া চলছে ইলেকট্রন ও হোলের সমন্বয় দিয়ে। আর এই তড়িৎ আধানের সমন্বয়ের সাথে যদি যুক্ত হয় চৌম্বকীয় ধর্ম, তাহলে? বিজ্ঞানীরা বলছেন, সে ক্ষেত্রে আজকের প্রযুক্তির দুনিয়াই আমূল বদলে যাবে। আসবে নয়া প্রযুক্তি।

কোনো পদার্থের ধর্ম তাতে উপস্থিত ইলেকট্রনের সংখ্যা দ্বারা নির্ধারিত হয়। আরও ভালো করে বললে, ইলেকট্রন আদান–প্রদান বা ইলেকট্রন ত্যাগ বা গ্রহণের প্রবণতা দিয়ে নির্ধারিত হয় ওই পদার্থ আদৌ তড়িৎ পরিবাহী হবে কি–না।

এবার আসা যাক অধপরিবাহী বা সেমিকন্ডাক্টরের দুনিয়ায়। কোনো পদার্থের মধ্যে থাকা ইলেকট্রন যদি আলোকশক্তি শোষণ করে উত্তেজিত হয়, তখন তা উচ্চস্তরে যায়। পেছনে পড়ে থাকে ফাঁকা অঞ্চল। আগেই বলা হয়েছে, এই ফাঁকা অঞ্চলই হোল। উভয়ের চার্জ বিপরীত। এই ইলেকট্রন ও হোলের গতিই নির্ধারণ করে দেয় সেমিকন্ডাক্টরের সক্ষমতা। আবার ইলেকট্রন ঋণাত্মক, আর হোল ধনাত্মক। বিপরীত চার্জের হওয়ায় তাদের মধ্যে আকর্ষণ বল কাজ করে। ফলে এক ধরনের বন্ধন তৈরি হয় তাদের মধ্যে। এই ক্ষণস্থায়ী বন্ধনযুক্ত জোড়কেই বলে এক্সিটন। এ বন্ধনের মাত্রা আবার নির্ধারণ করে দেয় পদার্থের অপরিবাহিতার ধর্মটি।

আজকের দুনিয়ার সোলার প্যানেল, ফটোডিটেক্টর, সেন্সর বা টেলিভিশন ও ডিজিটাল ডিসপ্লেতে ব্যবহৃত লাইট এমিটিং ডায়োড দাঁড়িয়ে আছে এই এক্সিটনের ওপর। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই এক্সিটনের মধ্যে থাকা বন্ধন মূলত তড়িৎযোজী বন্ধন বা আয়নিক বন্ধন। এতে ক্রিয়াশীল বলকে তাই স্বাভাবিকভাবেই সাধারণভাবে কুলম্ব ইন্টারেকশন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। কিন্তু এখন বিজ্ঞানীরা বলছেন, আরও এক ধরনের বল ক্রিয়াশীল। আর সেটি চৌম্বক বল।

এ সম্পর্কিত একটি গবেষণা প্রতিবেদন সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে বিখ্যাত জার্নাল নেচার ফিজিক্স–এ। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির একদল গবেষক সম্প্রতি এক্সিটনের মধ্যে চৌম্বক বল থাকার প্রমাণ পেয়েছেন। শুধু তাই নয়, প্রয়াত পদার্থবিদ জন হুবার্ডের নামে নামকরণ করা এ ধরনের এক্সিটনের মধ্যে থাকা চৌম্বক বল কীভাবে তৈরি হয়, তাও শনাক্ত করেছেন তাঁরা।

গবেষক দলের নেতৃত্ব দেন ওমর মেহিও। ক্যালটেকের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ডেভিড সিহ ও ডোনাল্ড এ গ্লেসারের অধীনে পিএইচডি করেছেন। নিজেদের আবিষ্কার সম্পর্কে গবেষণা বিষয়ক অনলাইন পোর্টাল সায়েন্সডেইলিকে তিনি বলেন, উন্নত স্পেকট্রোস্কোপের মাধ্যমে তাঁরা চৌম্বক বল দ্বারা আবদ্ধ এক্সিটনের সৃষ্টি ও ক্ষয় দুইই শনাক্ত করেছেন।

মেহিও বলেন, অধিকাংশ ইনসুলেটরে ইলেকট্রন ও হোলের মধ্যে যে বন্ধন কাজ করে, তা অনেকটা হাইড্রোজেন পরমাণুতে থাকা ইলেকট্রন ও প্রোটনের অনুরূপ। কিন্তু কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে এই বন্ধনটি তড়িৎযোজীর বদলে চৌম্বকীয় বলে আবদ্ধ থাকে। এ ধরনের ইনসুলেটরকে মট ইনসুলেটর বলে।

কেন এই আবিষ্কার গুরুত্বপূর্ণ? গুরুত্বপূর্ণ কারণ, এটি প্রযুক্তির দুনিয়ায় নিয়ে আসতে পারে বড় ধরনের পরিবর্তন। পরিবর্তন শুধু নয়, প্রযুক্তি দুনিয়াকেই আমূল বদলে দিতে পারে এটি। কারণ, মট ইনসুলেটর সুনির্দিষ্ট তাপ–চাপসহ ভিন্ন পরিস্থিতিতে আবার পরিবাহী হিসেবে কাজ করতে পারে। আবার এ ধরনের ইনসুলেটর সাধারণ চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের কাছে মোটাদাগে অদৃশ্য হিসেবে বিবেচিত হবে। ফলে এক্সিটনের মধ্যে এই চৌম্বকীয় বলকে নিয়ন্ত্রণ করা গেলে, বা তার ওপর প্রভাব বিস্তারের কৌশল আয়ত্ত করতে পারলে অভিনব সব প্রযুক্তি ধরা দিতে পারে।

বিশেষত ন্যানোপ্রযুক্তির দুনিয়ায় যে কোয়ান্টাম ডট প্রভাব বিস্তার করেছে, সেখানেই বড় বদল নিয়ে আসতে পারে এই চৌম্বক এক্সিটন। তথ্যপ্রবাহ তো বটেই, তথ্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও এটি রাখতে পারে বড় ভূমিকা।

মেহিওর ভাষ্যে চলে যাওয়া যাক আবার। ওমর মেহিও বলছেন, হুবার্ড এক্সিটন ও তাদের মধ্যকার বন্ধনকৌশল বলছে চেনা এক্সিটনিকসের (এক্সিটন প্রযুক্তি) দুনিয়ায় এক বড় ওলট–পালট আসতে যাচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে একেবারে অভিনব প্রযুক্তির এক নয়া বাস্তুসংস্থানের দেখা পেতে যাচ্ছে বিশ্ব। একই কণায় এক্সিটন ও চৌম্বক ধর্মের উপস্থিতি একেবারে নতুন এক দিগন্তের উন্মোচন ঘটাতে পারে, যেখানে এ দুইয়েরই প্রয়োজন পড়ে।

শেয়ার করুন