নিউইয়র্ক     বৃহস্পতিবার, ১৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পুতিনের সাবমেরিন কৌশল কী ?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২৩ | ০৮:২৩ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২৩ | ০৮:২৩ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
পুতিনের সাবমেরিন কৌশল কী ?

কৃষ্ণ সাগরে রাশিয়ার একটি সাবমেরিন। ফাইল ছবি : রয়টার্স

সমুদ্রের পানির নিচে রাশিয়ার সামর্থ্য নিয়ে ক্রমশ উদ্বেগ বাড়ছে ন্যাটো সদস্যদের। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আঘাতে সক্ষম সাবমেরিনের উৎপাদন বাড়াচ্ছে রাশিয়া। রাশিয়ার বর্তমান সাবমেরিন কর্মকাণ্ড শীতলযুদ্ধের সময়কার মতোই বিপজ্জনক।পুতিনের সাবমেরিন বহর ন্যাটোর জন্য কতটা হুমকি? ইউক্রেনে স্থল ও আকাশপথে যুদ্ধ চলছে। তবে রাশিয়ার একটি অদৃশ্য হুমকি নিয়ে পশ্চিমাদের উদ্বেগ বাড়ছে, হয়ত এটি আরও বিপজ্জনক।

গত কয়েক বছর ধরে মস্কো একাধিক সাবমেরিন নির্মাণ করেছে। যেগুলোর যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আঘাতের সক্ষমতা রয়েছে। ন্যাটো সদস্যরা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাবমেরিন বহরের কর্মকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে শুরু করেছেন।

বিশ্বের বৈচিত্র্যময় সাবমেরিন বহরের একটি পরিচালনা করছে রাশিয়ার নৌবাহিনী। এসব সাবমেরিনের কয়েকটি পারমাণবিক ওয়ারহেডযুক্ত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে পারে। এগুলোকে মস্কো পারমাণবিক যুদ্ধ ঠেকানোর জন্য মূল চাবিকাঠি হিসেবে মনে করে।

বিশেষজ্ঞরা বলছে, যুদ্ধের পরিস্থিতিতে রাশিয়ার সাবমেরিন বহর দেশটির উত্তেজনা ব্যবস্থাপনার একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। অন্য ভাবে বললে, মস্কোর পারমাণবিক বোমাবাহী সশস্ত্র সাবমেরিন পশ্চিমা শত্রুদের অন্যান্য খাতের সুবিধা কাজে লাগানো থেকে ঠেকিয়ে দিতে পারে।

১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকেই নিজেদের সাবমেরিন বহরের আধুনিকায়নে কাজ করে আসছে রাশিয়া। গত ডিসেম্বরে পুতিন বলেছেন, রাশিয়ার উচিত আরও বেশি পারমাণবিক সাবমেরিন নির্মাণ করা উচিত। যা আগামী কয়েক দশকে রাশিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

সেন্ট পিটার্সবুর্গভিত্তিক ইউনাইটেড শিপবিল্ডিং করপোরেশনের প্রধান আলেক্সেই রাখমানভ গত সপ্তাহে বলেছেন, এই বছরের শেষ দিকে রাশিয়ার নৌবাহিনী আরও দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েন করবে।

পানির নিচের ক্যাবলের জন্য হুমকি

ন্যাটো সদস্যদের মধ্যে একটি উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে। আর তা হলো পানির নিচে বৈশ্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ দিয়ে ক্যাবল ও অবকাঠামোকে নিশানা করতে পুতিন তার সাবমেরিন বহর কাজে লাগাতে পারেন।

২০ জানুয়ারি ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছিলেন, তিনি চান তার দেশ সমুদ্রের তলদেশে ১৯ হাজার ৬০০ ফুট পর্যন্ত সুরক্ষিত করার সক্ষমতা অর্জন করুক যাতে পানির নিচে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়।

রাশিয়া ম্যারিটাইম স্টাডিড ইন্সটিটিউট (আরএমএসআই)-এর মতে, সাগরে নিজের শক্তিকে রাশিয়া তার অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ, জাতীয় নিরাপত্তা ও অপর রাষ্ট্রকে প্রভাবিত করার সঙ্গে যুক্ত করে বিবেচনা করে।

রুশ সেনাবাহিনী ও মহাসাগরের অর্থনৈতিক ইস্যু নিয়ে গবেষণা করা সংস্থাটির প্রধান মাইকেল পিটারসন বলেছেন, বিশ্বজুড়ে পানির নিচের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এখন গুরুতর হুমকির মধ্যে রয়েছে। গত এক দশক ধরে রাশিয়া সমুদ্রের তলদেশে যুদ্ধের সামর্থ্য বাড়াচ্ছে।

পিটারসন বলেন, রাশিয়ার গভীর সমুদ্র গবেষণার জন্য একটি সংস্থাও গড়ে তুলেছে। এটি রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে এবং রুশ নৌবাহিনীর মেধাবীদের এতে নিয়োগ দেওয়া হয়। সংস্থাটির কাছে বেলগোরোদ নামের একটি সাবমেরিন রয়েছে। যা পারমাণবিক চালিত টর্পেডো ছুড়তে পারে। রয়েছে একাধিক সাবমেরিন, যেগুলো আড়িপাতার যন্ত্র স্থাপন বা গভীর সমুদ্রের ক্যাবলে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে। চাইলে তারা সমুদ্রের তলদেশে সেন্সরও স্থাপন করতে পারবে।

তিনি আরও বলেন, কল্পনা করতে পারেন রাশিয়া যদি ট্রান্সআটলান্টিক ইন্টারনেট ক্যাবল যদি রাশিয়া বিচ্ছিন্ন করে দেয় তাহলে কী ঘটবে? এর ভয়াবহ আর্থিক প্রভাব থাকবে এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ মহাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটাই সীমিত হয়ে পড়বে।

ন্যাটোর দুর্বলতা

গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্রবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল টরি বাডাকিন বলেছেন, সমুদ্রের গভীরে ইন্টারনেট ডেটা সঞ্চালনকারী ক্যাবল হলো বিশ্বের প্রকৃত তথ্য ব্যবস্থা। রাশিয়া যদি এগুলোর ক্ষতিসাধনের চেষ্টা করে তাহলে যুদ্ধের কর্মকাণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

পিটারসন মনে করেন, এটি একটি নতুন কর্মকাণ্ড। এক্ষেত্রে রাশিয়া মনে করে দেশটি সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। সমুদ্রের গভীরে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর সুরক্ষা নিশ্চিত করা কঠিন। এমন দুর্বলতা সব সময় কাজে লাগাতে চায় রাশিয়া। ন্যাটো ও রাশিয়ার ভবিষ্যৎ সংঘাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হতে পারে এই ক্ষেত্রটি।

নরওয়েজিয়ান ডিফেন্স ইউনিভার্সিটি কলেজের অধ্যাপক নিয়র্ড ওয়েগের একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ থিংক ট্যাংক। এতে বলা হয়েছে, নরওয়ে উত্তর সাগরে টহল অনেকটাই বাড়িয়েছে।

ওয়েগ বলেছেন, নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইনে নাশকতা ছিল উল্লেখযোগ্য। রাশিয়া ইউরোপে সরবরাহ প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। নরওয়ে রুশ গ্যাসের বড় রফতানিকারক। ফলে অবশ্যই সংঘাতের সময় এসব পানির নিচের স্থাপনা ঝুঁকিতে থাকবে। নরওয়েজিয়ান হোম গার্ড যেভাবে এগুলোকে সুরক্ষা দিচ্ছে তাতে এই ঝুঁকির প্রতিফলন ঘটছে। ন্যাটোর ব্রিটিশ নৌযান টহল দিচ্ছে। তারা আগের চেয়ে বেশি সতর্ক।

ন্যাটো-রাশিয়া সংঘাত

পুতিন বারবার অভিযোগ করে আসছেন, ইউক্রেন যুদ্ধে ন্যাটো সরাসরি অংশগ্রহণ করছে। সমুদ্রের গভীরের স্থাপনা নিয়ে যে হুমকির আশঙ্কা করা হচ্ছে এতে করে সামরিক জোটটির সঙ্গে রাশিয়ার সংঘাতের আশঙ্কা আরও বাড়ছে।

পিটারসনের মতে, ন্যাটোর বিরুদ্ধে রাশিয়ার যেকোনও সম্ভাব্য যুদ্ধ হবে মূলত স্থলযুদ্ধ। তবে রাশিয়ার কৌশলের কারণে তা আকাশ ও সমুদ্রেও বিস্তৃত হতে পারে। ন্যাটোর বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ কেমন হতে পারে তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধে। এই যুদ্ধে দেখা গেছে, কিছু দুর্বলতা থাকলেও রাশিয়া গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আঘাতে সক্ষম। কয়েকটি যুদ্ধজাহাজ হারালেও নিজেদের কার্যকরিতার প্রমাণ দিয়েছে রুশ নৌবাহিনী। পিটারসন মনে করেন, রাশিয়ার বর্তমান সাবমেরিন কর্মকাণ্ড শীতলযুদ্ধের সময়কার মতোই বিপজ্জনক। নিউজউইক অবলম্বনে।

শেয়ার করুন