নিউইয়র্ক     শনিবার, ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাকিস্তান-তালেবান সম্পর্কের অবনতি!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৩ | ০১:০০ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১২ জুন ২০২৩ | ০১:০০ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
পাকিস্তান-তালেবান সম্পর্কের অবনতি!

আফগানিস্তানে আবারও ক্ষমতায় ফিরেছে তালেবান। ২০২১ সালের আগস্টে মার্কিন এবং বিদেশি সেনারা দেশটি ছেড়ে যাওয়ার পরপরই কাবুলে দেখা গিয়েছিল—পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইর তত্কালীন প্রধান লেফটন্যান্ট জেনারেল ফৈজ হামিদকে। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে তালেবান নেতৃত্বের সঙ্গে তার আলোচনার ছবি ভাইরাল হয়েছিল। পাকিস্তান প্রথম ব্যাক চ্যানেলের মাধ্যমে সদ্য ক্ষমতায় ফেরা তালেবান নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় গিয়েছিল। তালেবানকে হাতের নাগালে রাখার একটি প্রচেষ্টা ছিল পাকিস্তানের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের সেই চেষ্টা বুমেরাং হয়েছে। তালেবানের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক এখন অবনতির দিকে। ইসলামাবাদের পুতুল হিসেবে নিজেদের দেখাতে চাইছে না তালেবান।

তালেবান ক্ষমতায় ফেরার পর বির্তকিত আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তে সংঘর্ষ নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাকিস্তানের একটি থিঙ্ক ট্যাংকের মতে, আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে সীমান্ত অঞ্চলটিতে সন্ত্রাসী হামলা প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে, যা দ্রুত অবনতিশীল নিরাপত্তা পরিস্থিতির ইঙ্গিত দেয়।

গত জানুয়ারিতে পেশোয়ারের একটি মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ৫৯ জন নিহত হন। এই ঘটনার পর পাকিস্তান ও তালেবানের মধ্যে বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। প্রথমে তেহরিক-ই-তালেবান এই হামলার দায় স্বীকার করেছিল। কিন্তু পরে তারা জানায়, এই বিস্ফোরণের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু পাকিস্তানের কিছু মন্ত্রী তেহরিক-ই-তালেবানকে দায়ী করে আফগানিস্তানের তালেবানকে সঠিক দায়িত্ব পালন করতে বলেন। এর জবাবে আফগান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি বলেন, পাকিস্তান যেন পেশোয়ার বিস্ফোরণের জন্য কাবুলকে দায়ী না করে। আফগানিস্তানে কোনো জঙ্গি ঘাঁটি নেই। আফগানিস্তানের মাটি কোনো জঙ্গি সংগঠনকে ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না। মুত্তাকির বক্তব্য ছিল, পাকিস্তান যেন নিজের ছাদের বরফ অন্যদের ছাদে না ফেলে। এটা পাকিস্তানের নিজস্ব সমস্যা। তারা যেন পেশোয়ার বিস্ফোরণের তদন্ত করে ভালো করে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মমতাজ জাহুরা বলেন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার ক্ষেত্রে পাকিস্তান প্রত্যাশা করে আফগানিস্তান তাদের দিকে হাত বাড়িয়ে দেবে। আমরা নিরপরাধ মানুষের মৃত্যুকে খুবই গুরুত্ব দেই। প্রত্যাশা করি, আমাদের প্রতিবেশী দেশও তাই করবে। তিনি আরো বলেন, আমরা সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলার প্রশ্নে একে-অপরের বিরুদ্ধে আঙুল তোলায় বিশ্বাস করি না। আমরা চাই, জঙ্গিরা যেন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য আফগানিস্তানের ভূমি ব্যবহার করতে না পারে। তালেবানকে এই লক্ষ্যে কাজ করে দেখাতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাকিস্তানে ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠছে তেহরিক-ই-তালেবান-পাকিস্তান। কিন্তু এই গোষ্ঠীকে পাকিস্তান প্রশাসন নিজেদের বন্ধু মনে করে না। আফগানিস্তানের তালেবান এই গোষ্ঠীকে গুরুত্ব দেয়। গত এক বছরে আফগান তালেবান যোদ্ধাদের প্রায় ১০০ জন পাকিস্তানে এসে এই গোষ্ঠীতে যোগ দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই গোষ্ঠী ইসলামিক অনুশাসনের পাকিস্তান চায়। গত এক বছরে পাকিস্তানে তারা একের পর এক আত্মঘাতী বিস্ফোরণ চালিয়েছে। ১০০-র বেশি বেসামরিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তেহরিক-ই-তালেবানের সঙ্গে পাকিস্তানি সরকারের দূরত্ব যত বাড়ছে, আফগানিস্তানের তালেবান প্রশাসনের সঙ্গেও পাকিস্তানের দূরত্ব বাড়ছে। আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের একটি বড় অংশ মনে করে, পাকিস্তান সর্বার্থে ইসলামিক রাষ্ট্র নয়। কারণ তার জন্মের ইতিহাস ঔপনিবেশিক। পাকিস্তানের প্রশাসনিক ভিত্তিও ইসলামিক নয়। ফলে এই পাকিস্তানকে তারা কখনোই বন্ধু বলে মনে করে না। এদিকে আমেরিকার সঙ্গে পাকিস্তান সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে। যার জেরে বর্তমান তালেবান প্রশাসনের শীর্ষ নেতৃত্বের একটি অংশ দীর্ঘদিন পাকিস্তানের জেলে থেকেছে। তারা পাকিস্তানের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখতে চায়। অন্যদিকে পাকিস্তানের ভেতর গোলযোগ শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তালেবান প্রশাসন পাকিস্তানের কাছ থেকে বিশেষ কোনো সুবিধা পাওয়ারও আশা দেখছে না।

ব্যাক চ্যানেলের সাহায্যে তালেবান বরং ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করছে। সম্প্রতি বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়েছে। তালেবান শীর্ষ নেতৃত্ব প্রকাশ্যেই ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন। আফগান বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ারও আবেদন জানানো হয়েছে ভারতের কাছে। তালেবানের ভারতবিরোধী নীতিতে লাভবান হচ্ছিল পাকিস্তান। তবে ভারতবিরোধী হয়ে সরকার চালানো সহজ হবে না, এমনটি ভালোভাবেই বুঝতে পারছে তালেবান। আফগানিস্তান পুনর্গঠনে ভারতের আর্থিক সহায়তাও চাইতে পারে তালেবান।

এই পরিস্থিতিতে উপমহাদেশের রাজনৈতিক সমীকরণ বদলাতে শুরু করেছে বলে বিশেষজ্ঞদের একাংশের অভিমত। আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর ভারতের প্রথম আশঙ্কা ছিল, পাকিস্তানের মাধ্যমে তালেবান যোদ্ধারা কাশ্মীরে ঢুকবে। এর আগে আফগানিস্তানে তালেবান শাসন-পর্বে তেমনই ঘটেছিল। ফলে পাকিস্তানের সঙ্গে বর্তমান তালেবানের সম্পর্ক যাতে তিক্ত হয়, ভারত বরাবর তেমনই চেয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি খানিকটা তেমনই। পাকিস্তানের এক বিশ্লেষকও তার সরকারকে বলেছেন, আফগানিস্তানের ক্ষমতায় থাকা তালেবান আর অতীতে যে তালেবানকে ইসলামাবাদ মোকাবিলা করেছে, তারা এক নয়। সূত্র ডয়চেভেলে

সাথী/পরিচয়

শেয়ার করুন