নিউইয়র্ক     মঙ্গলবার, ১৪ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৩১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাঁচ মাস পর ইউক্রেন ছাড়ল শস্যবাহী প্রথম জাহাজ

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২২ | ১২:২২ অপরাহ্ণ | আপডেট: ১০ আগস্ট ২০২২ | ১০:০৯ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
পাঁচ মাস পর ইউক্রেন ছাড়ল শস্যবাহী প্রথম জাহাজ

বৈশ্বিক খাদ্য সংকট প্রশমনে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় মস্কো-কিয়েভ চুক্তির আওতায় ইউক্রেনের বন্দর থেকে শস্যবাহী প্রথম জাহাজ ইউক্রেনীয় বন্দর ছেড়েছে। এর মাধ্যমে যুদ্ধের কারণে গত পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে বিশ্বজুড়ে বন্ধ থাকা শস্য রপ্তানি সোমবার থেকে পুনরায় শুরু করল ইউক্রেন।

তুরস্ক এবং ইউক্রেনের কর্মকর্তারা বলেছেন, স্থানীয় সময় সোমবার ভোরের দিকে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় ওডেসা বন্দর ছেড়েছে শস্যবাহী প্রথম জাহাজ।

গত ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনের বন্দরগুলো অবরুদ্ধ করে রেখেছে রাশিয়া। পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে বিশ্বের অন্যতম দুই প্রধান খাদ্য ও জ্বালানি রপ্তানিকারক দেশের মধ্যে চলে আসা যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে খাদ্য ও জ্বালানি সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

বৈশ্বিক এই সংকটের সমাধানে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় গত ২২ জুলাই কিয়েভ এবং মস্কোর কর্মকর্তারা ইউক্রেনে আটকা আড়াই কোটি টন গম ও ভুট্টা বিশ্ববাজারে সরবরাহের লক্ষ্যে তুরস্কে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। চুক্তি অনুযায়ী, ইউক্রেন থেকে খাদ্যশস্য রপ্তানি শুরু হওয়ায় বৈশ্বিক খাদ্য সংকট এবং বিশ্ববাজারে খাদ্যশস্যের দাম কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।

শস্যবাহী জাহাজটি ইউক্রেন ছাড়ার আগে তুরস্কের এক বিবৃতিতে বলা হয়, সিয়েরা লিওনের পতাকাবাহী জাহাজটি লেবাননে নোঙর করবে। আগামী সপ্তাহগুলোতে আরও চালানের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

চুক্তির আওতায় ইউক্রেনের খাদ্যশস্য রপ্তানির কাজ তদারকির জন্য তুরস্কের ইস্তাম্বুলে যৌথ সমন্বয় কেন্দ্র (জেসিসি) চালু করা হয়েছে। জেসিসি বলেছে, জাহাজটি প্রায় ২৬ হাজার টন ভুট্টা পরিবহন করছে এবং ২ আগস্ট সেটি তুরস্কের জলসীমায় পৌঁছাবে। ইউক্রেনের শস্য নিয়ে প্রথম যে জাহাজটি লেবাননের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছে সেটির নাম রাজোনি। ১৯৯৬ সালে তৈরি এই জাহাজের দৈর্ঘ্য ১৮৬ মিটার এবং প্রস্থ ২৫ মিটার। জাহাজটির ৩০ হাজার টন মালামাল পরিবহনের সক্ষমতা রয়েছে।

ইউক্রেনের অবকাঠামো মন্ত্রী আলেকজান্ডার কুব্রাকভ ফেসবুকে লিখেছেন, বিশ্বের ক্ষুধা ঠেকানোর জন্য অংশীদারদের সাথে ইউক্রেন আজ আরেকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। বন্দরগুলো সচল হওয়ায় ইউক্রেনের অর্থনীতিতে কমপক্ষে ১ বিলিয়ন বৈদেশিক মুদ্রা রাজস্ব যোগ হবে। একই সঙ্গে এর মাধ্যমে ইউক্রেনের কৃষি খাতের জন্য আগামী বছরের পরিকল্পনার সুযোগও তৈরি হবে।

কুব্রাকভ বলেছেন, আগামী কয়েক সপ্তাহে ওডেসা অঞ্চলের বন্দরগুলো থেকে আরও অন্তত ১৬টি জাহাজ ইউক্রেন ছাড়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ইউক্রেনে আটকে থাকা শস্য বহনকারী বিভিন্ন বাণিজ্যিক জাহাজ যেন নিরাপদে কৃষ্ণসাগরে চলাচল করতে পারে, সেজন্য তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় একটি যৌথ সমন্বয় কেন্দ্র খোলা হয়। সেই কেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে জাতিসংঘ, রাশিয়া ও তুরস্ক।

কূটনীতিকদের মতে, চুক্তিতে ট্রানজিটে থাকাকালীন কোনও চালান অথবা বন্দরগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হবে না বলে সম্মত হয়েছে রাশিয়া। যদিও চুক্তি সাক্ষরের পরদিনই ওডেসা বন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল রাশিয়া। অন্যদিকে, ইউক্রেন মাইন পেতে রাখা সাগর দিয়ে কার্গো জাহাজ পরিবহনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

বহুল আকাঙ্ক্ষিত এই চুক্তিতে পৌঁছাতে সময়ে লেগেছে প্রায় দুই মাস, আর এই চুক্তির স্থায়িত্ব হবে ১২০ দিন। তবে উভয়পক্ষ রাজি হলে চুক্তির মেয়াদ নবায়ন করা হতে পারে।

রাশিয়ার অবরোধের কারণে ইউক্রেনের খাদ্যশস্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বৈশ্বিক খাদ্য সংকট তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে গম-ভিত্তিক তৈরি রুটি এবং পাস্তার মতো অন্যান্য খাদ্যপণ্যের দাম অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া রান্নার তেল এবং সারের দামও বিশ্বজুড়ে বেড়েছে।

ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের তিন বন্দর— ওডেসা, চর্নোমোরস্ক এবং পিভডেনি রপ্তানির কেন্দ্রে রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শেয়ার করুন