নিউইয়র্ক     রবিবার, ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নীরবে দমন করা হচ্ছে গণতন্ত্রকে, বাংলাদেশে লাখ লাখ মানুষ বিচারাধীন বলেছে নিউইয়র্ক টাইমস

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ০৩:৪০ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ০৩:৪০ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
নীরবে দমন করা হচ্ছে গণতন্ত্রকে, বাংলাদেশে লাখ লাখ মানুষ বিচারাধীন বলেছে নিউইয়র্ক টাইমস

গত রোববার (৩রা সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত প্রতিবেদনটির তথ্য সংগ্রহে প্রভাবশালী মার্কিন দৈনিক নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার প্রতিবেদক মুজিব মার্শাল ও চিত্রগ্রাহক অটল লুক দুইবার বাংলাদেশ সফর করেন।

ওয়ার্ল্ড/এশিয়া/বাংলাদেশ-ডেমোক্রেসী-ইলেকশন শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রকে পর্যায়ক্রমে শ্বাসরুদ্ধ করে ১৭ কোটি মানুষের এই দেশটির কোর্টগুলোকে লোকারণ্য করে তোলা হয়েছে।

প্রায় প্রতিদিনই বিরোধী দলগুলোর হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থককে সাধারণত অস্পষ্ট ও অসঙ্গতিপূর্ণ বিভিন্ন অভিযোগে বিচারকের সামনে হাজির হতে হচ্ছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্বাচনের মাত্র কয়েকমাসে আগে এটা করা হচ্ছে, যাতে তারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রভাব রাখতে না পারে।

প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের হিসাব অনুযায়ী, তাদের ৫ মিলিয়ন (৫০ লাখ) সদস্যের মধ্যে প্রায় অর্ধেককে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় জড়ানো হয়েছে। সবচেয়ে সক্রিয় নেতা ও সংগঠকদের একেকজনের বিরুদ্ধে ডজন, এমনকি শতাধিক মামলা রয়েছে। রাজনৈতিক সভা সমাবেশ ও গভীররাতে কর্মসূচী নির্ধারণ নিয়ে আলোচনার পরিবর্তে তাদের ব্যস্ত থাকতে হয় আইনজীবীদের চেম্বারে, আদালতের কাঠগড়ায়।

সম্প্রতি কোনো এক সকালে , বিএনপির এক নেতা সাইফুল আলম নীরবকে হাতকড়া পরিহিত অবস্থায় ১০ তলা ম্যাজিস্ট্রেট ভবনে হাজির করা হয়। সাইফুল আলম নীরব ৩১৭ থেকে ৩৯৪টির মতো মামলার আসামী। তিনি ও তার আইনজীবীরাও জানেন না মামলা কয়টি।

সাম্প্রতিক বছরগুলো বাংলাদেশ পরিচিত তার অর্থনৈতিক সাফল্যের গল্পে। শক্তিশালী রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্প, যার মাধ্যমে ডলার প্রবাহ অব্যাহত, নারীদের ক্ষমতায়ন ও লাখ লাখ বেকারের কর্মসংস্থান সম্ভব হয়েছে। এক সময় এ দেশটিকে আমেরিকানরা বলতো তলাবিহীন ঝুড়ি, দুর্ভিক্ষ ও রোগশোকের দেশ, দৃশ্যতঃ কয়েক যুগের অভ্যুত্থান পাল্টা অভ্যূত্থান ও হত্যাকাণ্ড থেকে বেরিয়ে এসেছে।

কিন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সমন্বয় সাধনের প্রচারণা, যার লক্ষ্য বিরোধী নেতৃবৃন্দ, বিশ্লেষক ও এ্যাক্টিভিস্টদের মতে দক্ষিণ এশিয়ার প্রজাতন্ত্রকে একটি একদলীয়রাষ্ট্রে পরিণত করা।

গত ১৪ বছরেরও বেশি সময়ের শাসনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশটির সেনাবাহিনী, পুলিশ- সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দখল এং অনুগতদের দিয়ে ক্রমবর্ধমানভাবে বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করছেন।

তিনি এসব প্রতিষ্ঠানে ভিন্নমতের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছেন। তার টার্গেটের মধ্যে আছে শিল্পী, সাংবাদিক ও এ্যাক্টিভিস্ট এবং এমনকি নোবেলবিজয়ী ড. ইউনূস। তিনি তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক প্রচারণা চালিয়েছেন।

আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের আগে দেশ আরেকটি উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মুখে।

বিরোধী দলগুলো এই নির্বাচনকে দেখছে শেষ লড়াই হিসাবে।

শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠরা বলছে, তারা ‘বিএনপিকে জিততে দেবে না’। একজন বলেছেন, তারা ক্ষমতায় আসলে আমাদের হত্যা কববে।

সম্প্রতি শেখ হাসিনার কার্যালয়ে এক সাক্ষাতকারে বিচারবিভাগকে ব্যবহার করে বিরোধী দলকে হয়রানির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি একজন সহযোগীকে দিয়ে একটি ছবির এ্যালবাম আনিয়ে দেখালেন; যাতে ছিল ভয়াবহ চিত্র: অগ্নিসংযোগ, বোমাসহ অন্যান্য হামলায় অঙ্গহারা অনেকের ছবি।

আদালতের মামলাগুলো সম্পর্কে ‘এটা রাজনৈতিক নয়, এটা রাজনৈতিক নয়’, বিএনপির বর্বরতার চাক্ষুস প্রমাণ দেখিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এগুলো তাদের অপরাধের জন্যে।’

বিএনপি নেতারা বলছেন, ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকে তাদের ৮০০ জন সদস্য নিহত হয়েছে আরও ৪০০ জনের বেশি নিখোঁজ হয়েছে।

শেখ হাসিনা এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিলো তার দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে একই আচরণ করা হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মী হত্যা ও কারাবাসের শিকার হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারাই এটা শুরু করেছে।’

শেখ হাসিনা বিরোধীদের বিরুদ্ধে হামলা জোরদার করেছেন যেহেতু সাম্প্রতিক কয়েক বছরের মধ্যে বর্তমানে তিনি রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় রয়েছেন।

বিশ্বব্যাপি অতিমারী পরিস্থিতিতে চাহিদার হ্রাসের পরবর্তীতে বাংলাদেশের রপ্তাানিমুখী পোশাক শিল্প কেবলমাত্র ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে, এমতাবস্থায় ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনে খাদ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে এসব আমদানি করতে ডলার সংকটে পড়ে গেছে দেশটি।

শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এটা আমাদের অর্থনীতিতে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেছে।’

শেখ হাসিনা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি নাকচ করার পর বিরোধী দল খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি ও বিদ্যুত সংকটকে সুযোগ হিসাবে নিয়ে ব্যবহার করে কারচুপির নির্বাচন আতঙ্কে রাজপথে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে।

জুনে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এক বিশাল সমাবেশে বিএনপি নেতার অবাধ নির্বাচন ও রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি দাবি করেছে।

পুলিশ পিছু হটে বিরোধী দলকে মিছিল সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে এবং ক্ষমতাসীন দল পাল্টা সমাবেশ করেছে- যেখানে নেতারা স্বীকার করেছেন যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতন্ত্র পর্যবেক্ষণ করছে। মার্কিন সরকার শেখ হাসিনা সরকারের সিনিয়র নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের উপর স্যাংশন দিয়েছে এবং ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছে। বেশ কয়েকটি মার্কিন ও ইউরোপীয় প্রতিনিধি দল সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাংলাদেশ সফর করে গেছেন।

বিএনপির সমাবেশের পরবর্তী কয়েক সপ্তাহ পর বিচলিত শেখ হাসিনা শক্তি প্রয়োগের পথে ফিরে আসলেন। যখন বিরোধী দলের সদস্যরা আরেক বড় সমাবেশের অনুষ্ঠানের চেষ্টা করে তখন পুলিশ লাঠিচার্জ ও কাঁদুনে গ্যাস ব্যবহার করে এবং ৫০০ জনের বিরুদ্ধে নতুন মামলা দেয়।

এ দমন অভিযান প্রমাণ করেছে যে, এমনি কি পশ্চিমাদের সতর্কবার্তাও এশিয়ার দুই জায়ান্ট চীন ও ভারতের সুসম্পর্ক বজায় রাখা নেত্রীর উপর সামান্যই প্রভাব ফেলেছে।

শেয়ার করুন