নিউইয়র্ক     শুক্রবার, ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিউইয়র্কের চার্চ-ম্যাকডোনাল্ড এখন লিটল বাংলাদেশ

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২২ | ০৮:২৯ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২২ | ০২:৪৪ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
নিউইয়র্কের চার্চ-ম্যাকডোনাল্ড এখন লিটল বাংলাদেশ

নিউইয়র্ক : নিউইয়র্কে আরেকটি নতুন ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশী কমিউনিটি। সিটির ব্রুকলীনের ‘চার্চ-ম্যাকডোনাল্ড এভিনিউ’ এখন লিটল বাংলাদেশ। দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হলো বাংলাদেশী কমিউনিটির।

রোববার (১৬ অক্টোবর) অপরাহ্নে উৎসবমুখর পরিবেশে ‘চার্চ-ম্যাকডোনাল্ড এভিনিউ’ ইন্টারসেকশনে ‘লিটন বাংলাদেশ’-এর নেম ফ্রেম টাঙ্গিয়ে তা উন্মোচনের মধ্যদিয়ে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে (কাউন্সিল ডিষ্ট্রিক্ট ৩৯) নির্বাচিত প্রথম বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত মুসলিম কাউন্সিলওম্যান ও সিটি কাউন্সিলের ইমিগ্রেশন কমিটির চেয়ারম্যান শাহানা হানিফ।

এসময় নিউইয়র্ক সিটির কম্পট্রোলার ব্র্যান্ড লান্ডার, ষ্টেট অ্যাসেম্বলী মেম্বার রবের্র্ট ক্যারোল, নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটে নিযুক্ত কনসাল জেনারেল ড. মনিরুল ইসলাম, নিউজার্সীর রাজ্যের ফ্রাঙ্কলিন টাউনশীপ সিটির কাউন্সিলওম্যান বাংলাদেশী-আমেরিকান শেপা উদ্দিন, কুইন্স ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ডিষ্ট্রিক্ট এট লার্জ এটর্নী মঈন চৌধুরী, বাংলাদেশ সোসাইটির নবনির্বাচিত সভাপতি আবদুর রব মিয়া, বাংলাদেশ মুসলিম সেন্টারের সভাপতি আবুল হাশেম, গ্রেটার নোয়াখালী সোসাইটি ইউএসএ’র সাধারণ সম্পাদক জাহিদ মিন্টু, বিপার এ্যানী ফেরদৌস প্রমুখ ছাড়াও শাহানা হানিফের বাবা মোহাম্মদ হানিফ ও মা রেহেনা হানিফ আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, স্থানীয় প্রবাসীদের ধারণা ব্রুকলীনে বিশ হাজারোধীক বাংলাদেশীর বসবাস। প্রায় দুই দশক আগে থেকেই এলাকাবাসীর স্বপ্ন ছিলো এই এলাকায় সড়কের নাম হোক বাংলাদেশের নামে। এই শহরের চার্চ-ম্যাকডোনাল্ড এভিনিউর ইন্টারসেকশন-কে ‘লিটল বাংলাদেশ’ নামকরনের জন্য সিটি কাউন্সিলে ইতিপূর্বে বিল উত্থাপন করেন প্রথম নির্বাচিত সিটি কাউন্সিলওমেন শাহানা হানিফ। পরবর্তীতে বিলটি পাশ হয় এবং অবশেষে শাহানা হানিফের হাত ধরেই নাম ফ্রেম উন্মোচনের মধ্য দিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশীদের স্বপ্ন পূরণ হলো।

‘লিটন বাংলাদেশ’-এর নেম ফ্রেম উন্মোচনের আগে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শাহানা হাফিন। এরপর অতিথিবৃন্দ সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে কমিউনিটির পক্ষ থেকে শাহানা হানিফকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান কমিউনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট নজরুল ইসলাম নজরুল। বিপার শিল্পীরা নৃত্য প্রদর্শণ করেন।

অনুষ্ঠানে অরো বক্তব্য রাখেন ডা. লোটাস আহমেদ, শেহাব চৌধুরী, খালেদা আকতার রুবি, নতুন প্রজন্মের নওরিন সোমাহা প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে ব্রুকলীনে জন্ম নেয়া এবং বড় হয়ে উঠা কাউন্সিলওম্যান শাহানা হানিফ তার অনুভূতির কথা জানিয়ে বলেন, আমি আমার বাবার (মোহাম্মদ হানিফ) লিটল বাংলাদেশ রেস্টুরেন্ট দেখে ছোটবেলা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম এবং ভেবেছিলাম যদি কখনো সুযোগ পাই তবে এই চার্চ-ম্যাকডোনাল্ড এলাকার নাম ‘লিটল বাংলাদেশ’ হিসেবে নামকরণ করব। আজ আমার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।

তিনি বলেন, ব্রুকলীনের মানুষ আমাকে ভালবেশে ভোট দিয়ে সিটি কাউন্সিলে নির্বাচিত করেছেন। ফলে আমি আমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পেরে নিজেকে গর্ববোধ করছি।

তিনি বলেন, আজকে এই মহতী দিনে আগামী প্রজন্মের জন্য আমরা একটা ইতিহাস তৈরি করে রেখে যেতে পেরেছি।

অনুষ্ঠানে কনসাল জেনারেল ড. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘লিটল বাংলাদেশ’ নামফলক স্থাপনের মাধ্যমে আজ নতুন এক ইতিহাস সৃষ্টি হলো নিউইয়র্কে। এজন্য তিনি কাউন্সিল সদস্য শাহানা হানিফকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, তার নেতৃত্বের কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। এর মাধ্যমে বোঝা যায় যে, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশীরা একটা সুদৃঢ় অবস্থান তৈরি করছে এবং বিশ্ব মঞ্চে বাংলাদেশের গুরুত্ব বাড়ছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ-আমেরিকার কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপনের প্রাক্কালে আজকের আয়োজন প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য গর্বের, আনন্দের। ‘লিটন বাংলাদেশ’-এর নেম ফ্রেম উন্মোচন অনুষ্ঠানে বিশষ্ট ব্যক্তিবর্গ সহ সর্বস্তরের বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী উপস্থিত ছিলেন এবং করতালির মধ্য দিয়ে গোটা এলাকা উৎসবমুখর করে তুলেন। কেউ কেউ বাংলাদেশ ও আমেরিকার জাতীয় পতাকা হাতে অনুষ্ঠানে যোগ দেন। অনুষ্ঠানে বক্তারা বাংলাদেশী কমিউনিটির অগ্রযাত্রার প্রশংসার পাশাপাশি দীর্ঘ পথ পক্রিমায় নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে কমিউনিটির অর্জনের কথা তুলে ধরেন। কেউ কেউ বলেন, শাহানা হানিফ একদিন এই সিটির মেয়র হবেন।

অনুষ্ঠানে কমিউনিটির বিশিষ্টজনদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডা. মাসুদুল হাসান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবী কাজী আশরাফ হোসেন নয়ন, ড. প্রদীপ কর, ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ন্যাশনাল কমিটির সদস্য এবং বাংলাদেশী আমেরিকান ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্টের চেয়ারম্যান খোরশেদ খন্দকার, আবুল হাশেম, রেফায়েত চৌধুরী, আবু তাহের, মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, কাজী শাখাওয়াত হোসেন আজম, চন্দন দত্ত, খালেদা খানম, শামসুদ্দিন আজাদ, ইঞ্জিনিয়ার ফারুক, ফিরোজ আহমেদ, এস এম ফেরদৌস, জাহাঙ্গীর সোহরাওয়ার্দী, আনোয়ার হোসেন, মোহাম্মদ হায়দার ও মনির আহমেদ প্রমুখ।

এদিকে ‘লিটন বাংলাদেশ’-এর নেম ফ্রেম উন্মোচন রোববার দিনভর চার্চ-ম্যাকডোনাল্ড এভিনিউ-এ উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজমান ছিলো। এ উপলক্ষে ‘লিটল বাংলাদেশ’ নমে একটি সুভেনিরও প্রকাশ করা হয়।

উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে ‘লিটন বাংলাদেশ’ সংক্রান্ত একটি সর্বসম্মতিক্রমে পাশ করা হয় কাউন্সিলর শাহানা হানিফের বিশেষ উদ্যোগে। তার উত্থাপিত বিলটি (০৮৮০-২০২২) বিগত ১৪ জুলাই ৪৭-০ ভোটে সিটি কাউন্সিলে পাশ হয়। ফলে চার্চ-ম্যাকডোনাল্ড নামের ইন্টারসেকশন-কে ‘লিটল বাংলাদেশ’ নামকরণ ঘোষণা করা হয়।

আরো উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে নিউইয়র্ক সিটির কুইন্সের জ্যামাইকার হিলসাইড অ্যাভিনিউ ও হোমলন স্ট্রিটের ইন্টারসেকশন-কেও ‘লিটল বাংলাদেশ’ হিসেবে নামরকরণ করা হয়। ব্রুকলীনের চার্চ-ম্যাকডোনাল্ডের ইন্টারসেকশন ‘লিটল বাংলাদেশ’ নামকরণের ঘোষণায় নিউইয়র্ক সিটির দুটি এলাকার নামকরণ করা হলো ‘লিটল বাংলাদেশ’।

ইতিপূর্বে নিউইয়র্কের বাংলাদেশী অধুষ্যিত জ্যাকসন হাইটসের ৭৩ স্ট্রীটটি ‘বাংলাদেশ ওয়ে’ নামে একটি সড়ক করার উদ্যোগ নিয়েছে জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশী বিজনেস অ্যাসোসিয়েশন (জেবিবিএ)। সংগঠনের কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে নিউইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। প্রস্তাবটি পাস করাতে জোর চেষ্টা ও লবি চলছে বলে জেবিবিএ’র কর্মকর্তারা বার্তা সংস্থা ইউএনএ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন।

এর অগে ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের থার্ড স্ট্রিট ও আলেকজান্দ্রিয়া অ্যাভিনিউয়ের মাঝে অবস্থিত একটি এলাকাকে লস অ্যাঞ্জেলস শহর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ‘লিটল বাংলাদেশ’ নামে স্বীকৃতি দেয়া হয়। এটি শহরটিতে বসবাসকারী বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রাণকেন্দ্র।

এছাড়া ২০১৯ সালের ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সী রাজ্যের প্যাটারসন সিটির ইউনিয়ন অ্যাভিনিউ সড়কের নাম পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ বুলেভার্ড’ রাখা হয়। তারও আগে দূর্বৃত্তের হালায় ওজনপার্কে নিহত দৈনিক ইনকিলাব-এর ফটে সাংবাদিক মিজানুর রহমান-এরনামে স্থানীয় ফরবেল স্ট্রীটের একাংশের নামকরণ ‘মিজানুর রহমান ওয়ে’ করে সিটি প্রশাসন। ব্রঙ্কসের স্টালিং এভিনিউর নাম হয়েছে ‘বাংলা বাজার’। ২০০১ সালে ১১ সেপ্টেম্বরের ঘটনায় নিহত বাংলাদেশী ‘নূরুল-শাকিলা’ দম্পতির নামেও সিটির একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়। -ইউএনএ

শেয়ার করুন