নিউইয়র্ক     শুক্রবার, ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশে দেশে ঈদ যাপন

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২৩ | ০৬:০০ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২৩ | ১০:১৭ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
দেশে দেশে ঈদ যাপন

আমির খসরু সেলিম : ঈদ। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসব। মাসব্যাপী সিয়াম সাধনের পরই আসে আকাঙ্ক্ষিত দিন। বছর ধরেই মানুষ যেন অপেক্ষায় থাকে এ দিনটির জন্য। বাংলাদেশে এই দিনকে আনন্দমুখর করে তোলার জন্য অনেক আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশের মতো ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও নেপালেও ঈদের আগের রাত ‘চাঁদরাত’ নামে পরিচিত। চাঁদরাতে শুরু হওয়া এই আনন্দের আমেজ আর উৎসব চলে টানা তিন দিন। এই দেশগুলোতে ঈদের আনন্দের চিত্র মোটামুটি একইরকম। ঈদ যাপনে নাগরদোলা, চড়কি, সার্কাস, ম্যাজিক শো, নাটক, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান- এসবেরও সমাবেশ দেখা যায়।

সৌদি আরব : এখানে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয় ভিন্ন আঙ্গিকে। পুরুষরা ‘কান্দর’ নামের সাদা পোশাক পরে। নারীরা এই দিনে ‘থাউব’ নামের বিশেষ পোশাক পরে।

তুরস্ক : সাংস্কৃতিক প্রাচুর্যের এ দেশে অত্যন্ত জমকালোভাবে উদযাপন হয় ঈদ। ঈদের দিনকে তুর্কিরা ‘রামাদান বেরামি’ বা রামাদান উৎসব ও ‘সেকার বেরামি’ বা মিষ্টির উৎসব বলে। ছোটরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করে। বড়দের ডান হাতে চুম্বনের মাধ্যমে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করা হয়।

ইন্দোনেশিয়া : মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দেশে ঈদের দিনকে বলা হয় ‘হারি রায়া ঈদুল ফিতরি’। ‘লেবারান’ হিসেবেও পরিচিত। ঈদের দিনে অতীতের কৃতকর্মের জন্য আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুদের কাছে ক্ষমা চায়। ঈদের এই বিশেষ দিনটিতে নারীরা পরে ‘কেবায়া কুরঙ্গ’ আর পুরুষরা পরে ‘বাজু কোকো’, যা এ দেশের ঐতিহ্যবাহী পোশাক।

মালয়েশিয়া : এদের ঐতিহ্য অনুযায়ী বিভিন্ন মুখরোচক খাবার রান্না হয় ঘরে ঘরে। খাবার তালিকায় থাকে মাংসের তৈরি ‘রেনডাং’, কাবাব বা ‘কেটুপাত’, ‘ডোডল’ বা এক ধরনের মিষ্টি। এ ছাড়া সে দেশের বিশেষ ঐতিহ্য বাঁশের মধ্যে রান্না করা ভাত, যা ‘লেমাং’ নামে পরিচিত। এ ছাড়া ঈদের নামাজ, কুশল বিনিময়, সালামি দেওয়া, কবর জিয়ারত তো আছেই।

মিসর : পিরামিডের এই দেশ ঈদ যাপনের ক্ষেত্রে অন্য দেশের চেয়ে এগিয়ে। একটানা চার দিন ঈদ উদযাপন হয়। মজাদার সব মাছের রান্না উৎসবকে করে তোলে রঙিন। নীলনদের দেশটির অন্যতম একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার হলো ‘ফাত’, যা ভাত, মাংস, পেঁয়াজ, ভিনেগার সবকিছুর মিশ্রণে রান্না করা হয়।

ইরাক : রমজান এবং ঈদের সঙ্গে সম্পর্কিত প্রতিটি উৎসবে এরা খেজুরের ওপর গুরুত্ব দিয়ে থাকে। ‘ক্লাইচা’ নামের একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার না থাকলে এদের অনুষ্ঠানই যেন অপূর্ণ থাকে। ক্লাইচা হলো এক ধরনের কুকি, যা বাদাম, খেজুর এবং গুলকন্দ দিয়ে বানানো হয়।

সোমালিয়া : আফ্রিকার এই দেশটিতে ঈদ মানেই লোভনীয় খাবারের আয়োজন। এদের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি ‘হালভো’ খুব জনপ্রিয়, যা বানানো হয় তেল, চিনি, কর্নস্টার্চ এবং হরেকরকমের মসলা মিশিয়ে। তাদের ঈদের অনুষ্ঠানে হালভো আবশ্যক।

নাইজেরিয়া : আফ্রিকায় মুসলিম অধ্যুষিত এই দেশে ঈদ উদযাপন হয় আতশবাজি, ড্রাম ও বাঁশি বাজিয়ে।

ইংল্যান্ড : ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় ঈদ উৎসব পালিত হয় লন্ডনের ওয়েস্টফিল্ড স্কয়ারে। মুসলিম এবং অমুসলিম সম্প্রদায়ের স্বাগত জানানো হয়। যেখানে অতিথিরা বিভিন্ন বিনোদন এবং খাবারের স্টলে ভোজ উপভোগ করতে পারেন। এছাড়াও রয়েছে রান্নার প্রদর্শনী, একটি ফ্যাশন শো এবং বিউটি মাস্টারক্লাস, সেইসাথে একটি ইসলামিক আর্ট গ্যালারি যেখানে সমস্ত সংস্কৃতি প্রেমীরা একত্রিত হতে পারে এবং ঐতিহ্য শেয়ার করতে পারে।

আফগানিস্তান : এখানে ঈদকে দুই রকম নামে ডাকা হয়। সেখানকার ফার্সিভাষীরা ঈদকে বলে ‘ঈদ-ই-রমজান’, আর পশতুভাষীরা বলে ‘কোচনাই আখতার’। ঈদের দিনে এরা অতিথিদের খেতে দেন ‘জালেবি’ নামের বিশেষ খাবার। অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ফাঁকা ময়দানে পুরুষরা একত্রিত হয়ে একজন আরেকজনের দিকে সিদ্ধ ডিম ছোড়ে। আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে ঈদের বার্তা পৌঁছে যায় সবার কাছে, সহজেই। দূরের আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা হয় ‘ভিডিও কলে’। সবমিলিয়ে এ আনন্দের সঙ্গে একাত্ম হয় কোটি কোটি মানুষ।

শেয়ার করুন