নিউইয়র্ক     বুধবার, ১৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্র হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের সংবাদ সম্মেলন

দাবি না মানলে হাঙ্গার স্ট্রাইক!

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ মে ২০২৩ | ১১:৪৩ অপরাহ্ণ | আপডেট: ০৫ মে ২০২৩ | ১১:৪৮ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
দাবি না মানলে হাঙ্গার স্ট্রাইক!

বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সামপ্রদায়িক সন্ত্রাস বন্ধে তিনটি দাবি না মানা হলে হাঙ্গার স্ট্রাইকে যেতে বাধ্য হবে যুক্তরাষ্ট্র হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ। গত ২৮ এপ্রিল নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি নবেন্দু বিকাশ দত্ত এ ঘোষণা দেন।

যুক্তরাষ্ট্র হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক দ্বিজেন ভট্টাচার্য্যের পরিচালনায় এবং সভাপতি নবেন্দু বিকাশ দত্তের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঐক্য পরিষদের নেতা বিষ্ণু গোপ। পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সভাপতি ডা. টমাস দুলু রায় ও রণবীর বড়ুয়া, মানবাধিকার নেতা শিতাংশু গুহ প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে পঠিত লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ১৯৮৮ সালে এরশাদ মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার ভিত্তিতে রচিত ১৯৭২ সালের শাষনতন্ত্রের অন্যতম মূলনীতি ধর্মনিরপেক্ষতাকে বিসর্জন দিয়ে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণার অব্যবহিত পর দাউদকান্দি ঋষি পাড়ায় আক্রমণকারী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীরা ঘোষণা করেছিল “এই দেশ আবার পাকিস্তান হয়ে গেছে, কাফেরদের এদেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে।” তখন থেকে নিয়মিতভাবে সংখ্যালঘু বিরোধী সামপ্রদায়িক সন্ত্রাসের কার্যক্রমটি অব্যহত রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ২০১২ সালে রামু, ২০১৩ সালে নন্দীরহাট, ২০১৬-তে নাসিরনগর, ২০১৭ সালে রংপুরের গঙ্গাছড়া, ২০১৯ সালে ভোলার বোরহানুদ্দীন, ২০২১ সালে কুমিল্লা, চট্টগাম ও নোয়াখালী সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় এবং সম্প্রতি ঠাকুরগাঁয়ে সংঘটিত ঘটনাবলী সম্পর্কে আপনারা সম্যক আবগত আছেন। তাই সেগুলোর বিবরণ দেওয়া প্রয়োজন মনে করিনা। বাংলাদেশ থেকে সংখ্যালঘু নাগরিকদের বিতাড়নের উদ্দেশ্য ও কলা-কৌশল অভিন্ন, তাই সেই বিবরণও দিচ্ছি না।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন চলছে। কারণ ১৯৭২ সাল থেকে এ’ পর্যন্ত কোন সরকারই সংখ্যালঘু নির্যাতকদের বিচার করেনি। ধর্মীয় মৌলবাদী এবং উগ্রপন্থী ঐসব নির্যাতনকারীরা জানে যে, সংখ্যালঘু নারী ধর্ষণ, খুন, বা সন্ত্রাসের মাধ্যমে তাদের পুরো গ্রাম উৎখাত করে ফেললেও (যেমন, ১৯৯২ সালের ১০ই এপ্রিল পার্বত্য চট্টগ্রামের লোগাং ম্যসাকার) বিচার হবে না। তাই তারা তাদের ঘোষিত লক্ষ্য দেশকে আফগানিস্তানের মত একটি শারিয়া-শাসিত ইসলামিক অমিরাতে রূপান্তরিত করতে নির্ভয়ে সংখ্যালঘু নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে।

১৯৭২ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সংঘটিত নির্যাতনের ঘটনাবলীর হোতাদের তদন্ত করে কোন তালিকা এখনও করা হয়নি। তবে ২০০১ সালের অক্টোবরে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে সংঘটিত বর্বর আক্রমানের ৫৮,০০০ কেইস লিপিবদ্ধ আছে মানকাধিকার কর্মী শাহরিয়ার কবিরের বই এবং জজ সাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত প্রোব কমিশন রিপোর্টে। তৎপরবর্তী কালের হাজার হাজার ঘটনা বিশদভাবে খবরের কাগজে প্রকাশিত হয়েছে এবং সেগুলোর অপরাধীদের তালিকা সরকারের কাছে রয়েছে। অথচ ব্যতিক্রম হিসেবে হাতেগুনা যায় এমন কয়েকটি কেইসে অভিযুক্তদের ছাড়া, সরকার সচরাচর সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচার করে না।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, অবিরাম এই বর্বর নির্যাতনে দেশত্যাগে বাধ্য হওয়ায় সংখ্যালঘুরা ১৯৭১ সালে যে স্থলে মোট জনসংখ্যার ১৯.৭% ছিল আজ ২০২৩ সালে সেটা নেমে এসে দাঁড়িয়েছে ৯.১% এ। আর পার্বত্য চট্টগ্রামে সেটা ১৯৪৭ সালে যে স্থলে ছিল ৯৮.৬% আজ ২০২৩ সালে সেটা নেমে এসে দাঁড়িয়েছে ৪৮%-এ।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচার হয়না, সেখানে সংখ্যালঘু সুরক্ষার জন্য কোন বিশেষ আইন নেই। এমনকি প্রচলিত আইনেও তাদের বিচার করা হয় না, দু’একটি লোক-দেখানো ব্যতিক্রম ছাড়া। বন্ধুগন, আওয়ামী লীগ ও তার জোটভুক্ত দলসমূহ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা। মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে, ওনার জোটভুক্ত দলের সাংসদবৃন্দ, এবং সরকারী কর্মকর্তারা নিয়মিতভাবে দাবি করে এসেছেন যে, তারা সেকুলার ডেমোক্র্যাসি এবং দেশের সকল নাগরিকের সম-অধিকারে বিশ্বাসী। তবে কেন তাঁদের শাসনামলে নির্যাতিত হয়ে সংখ্যালঘু নাগরিকদের দেশত্যাগ করতে হচ্ছে?

সরকার চাইলে দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ করা সম্ভব। ২০২২ সালের পুজোয় অঘটন ঘটেনি, কারণ সরকার কঠোর ছিলো। আইন করে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শূন্য-সহনশীলতার নীতি অবলম্বন করলেই সেটা বন্ধ করা সম্ভব। বিচার এবং শাস্তির ভয় থাকলে মৌলবাদী ও উগ্রপন্থীরা দেশের হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃস্টান ও আদিবাসীদের টার্গেট করে সন্ত্রাস চালাতে সাহস করবে না।

তাই প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান সংসদের কাছে আমাদের দাবি এবং সনির্বন্ধ অনুরোধ এই যে, তাঁরা যেন আগামী নির্বচনের আগেই সংখ্যালঘু নির্যাতন প্রতিরোধে কঠোর আইন প্রণয়ন পূর্বক, চিহ্নিত সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করে দেশের বিপন্ন সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব সুরক্ষার টেকসই ব্যবস্থা গ্রহন করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আমরা মনে করি যে, নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহন করে সংখ্যালঘু নির্যাতনের নিরন্তর চলমান, অমানবিক প্রক্রিয়া বন্ধ করা সম্ভব:

(১) বর্তমান সংসদে একটি সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন পাশ করা, যার অন্তর্ভুক্ত থাকা চাই (ক) হেইট স্পীচ্ ও ক্রাইম আইন, যে আইনের অধীনে সরকার-বাদী-মোকদ্দমার মাধ্যমে সকল সংখ্যালঘু নির্যাতকের বিচার হবে; (খ)সংখ্যালঘু নির্যাতকদের বিচারের জন্য প্রতি জেলায় একটি দ্রুত-বিচারের ক্ষমতা সম্পন্ন আদালত প্রতিষ্ঠা করা।

(২) জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা।

(৩) বাতিলকৃত শত্রু (অর্পিত) সম্পত্তি আইনে অধিগৃহীত সকল সম্পত্তি প্রকৃত মালিককে দ্রুত ফিরিয়ে দেওয়া।

সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইনের ঈপ্সিত ফল পাওয়ার জন্য নিম্নেক্ত কয়েকটি সম্পূরক পদক্ষেপও গ্রহন করতে হবে : (ক) ১৯৭২ সালের সংবিধান পুনরুজ্জিবীত করা,(খ) জজ্ সাহাবুদ্দীন কমিশন রিপোর্টের সুপারিশ অনুযায়ী অবিলম্বে সংখ্যালঘু নির্যাতকদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা; (গ)একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন পূর্বক ২০০৬ থেকে এপর্যন্ত সংঘটিত সকল সংখ্যালঘু নির্যাতনের অপরাধীদের তালিকা করে সংশ্লিষ্ট আদালতের কাছে হস্তান্তর করা; (ঘ) নির্যাতন প্রক্রিয়ায় ক্ষতিগ্রস্তদের যথেষ্ট পরিমান ক্ষতিপূরণ দিয়ে তাঁদের পুনর্বাসন এবং শারীরিক ও মানসিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা; (ঙ) একটি বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন করা; (চ)পার্বত্য ভূমি কমিশনের দ্রুত, যথাযথ বাস্তবায়ন; (ছ) দেবোত্তর সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ আইন করা; (জ) সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীসমূহের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করা; এবং, (ঝ) ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আদলে সংখ্যালঘু ধর্মীয় ফাউন্ডেশেন গঠন করা।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আমাদের দাবীনামার কয়েকটি অবশ্য ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিশ্রুতিও বটে। আর আমারা যে প্রস্তাবগুলো করেছি সেগুলো মোটেও নতুন কিছু নয়। পাশের দেশ ভারতে জাতীয় সংখ্যালঘু আইন তো আছেই, একটি সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ও রয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্রে হেইট ক্রাইম আইন রয়েছে যার বলে কেউ বর্ণবাদী বা ধর্মীয় সন্ত্রাসের শিকার হলে ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিস সরাসরি হস্তক্ষেপ করে সন্ত্রাসীকে ফেডারেল অপরাধে অপরাধী হিসেবে ত্বরিৎ বিচারের ব্যবস্থা করে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে উক্ত প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন হলে দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ হবে, এবং তখন দেশের সংখ্যালঘু নাগরিকরা ভয়হীন, স্বাভাবকি জীবন যাপন করতে সক্ষম হবে।প্সংগঠনের প্রেরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তি অনুসারে

সুমি/পরিচয়

শেয়ার করুন