নিউইয়র্ক     শনিবার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অনলাইনে ফাঁদ পেতে মানবপাচার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৩ | ০৩:৫০ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৩ | ০৩:৫০ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অনলাইনে ফাঁদ পেতে মানবপাচার

মানবপাচারকারীরা এখন আর কোনও এলাকায় সাধারণত যান না। অনলাইনেই কার্যসিদ্ধি হয় তাদের। এশিয়ার বাইরের অনেক দেশ থেকেও বহু মানুষকে প্রথমে বন্ধু এবং সবশেষে দাস বা দাসী বানান তারা। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে মানবপাচারকারীদের তৎপরতা দেখা গেলেও তাদের রুখতে তেমন কোনও পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।

সম্প্রতি মিয়ানমারে শয়ে কোক্কো এলাকায় অভিযান চালায় সেনাবাহিনী। মিয়ানমারে মানবপাচারের মূল কেন্দ্র হিসাবে পরিচিত সেই এলাকায় অভিযানের সময় আদিবাসী বিদ্রোহীদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ শুরু হলে কয়েক হাজার মানুষ ঘর-বাড়ি ছেড়ে থাইল্যান্ডে চলে যান। কয়েক হাজার এলাকাবাসী ঘরছাড়া হলেও মানবপাচার রোধে এ অভিযান দৃশ্যত বিশেষ কাজে আসেনি। বিশ্লেষকরা মনে করেন, সেনা সরকার এবং গণতন্ত্রকামীদের মধ্যে চলমান সংঘাতের কারণে মিয়ানমারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মানবপাচার রোধে যথেষ্ট তৎপরতা দেখাতে পারছে না। এ কারণে মিয়ানমার এবং আশপাশের কয়েকটি দেশে মানবপাচার বাড়ছে।

মানবপাচারের নতুন গন্তব্য কম্বোডিয়া : গত কয়েক বছরে মানবপাচারকারীদের অন্যতম প্রধান গন্তব্য হয়ে উঠেছে কম্বোডিয়া। পাচারকারীরা অনলাইন মাধ্যমকে প্রতারণার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করছেন ব্যাপক হারে। নানা ধরনের বিজ্ঞাপন বা ছলচাতুরির মাধ্যমে অনেকের টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছেন প্রতারকরা। কেউ কেউ টাকা-পয়সা দিয়ে চাকরির আশায় ধরা দিচ্ছেন পাচারকারীদের কাছে। কোনোভাবে তাদের কম্বোডিয়া পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারলে আরও বড় অংকের টাকা আয়ের সুযোগ হয়ে যাচ্ছে প্রতারকদের।

তারা তখন প্রতারিত ব্যক্তিকে পণ্যের মতো বিক্রি করে দিচ্ছেন কারো কাছে। বিক্রি হয়ে যাওয়া সেই জীবনে নেমে আসছে দাসত্বের শৃঙ্খল। তখন শুরু হয় আরো টাকা আদায়ের চেষ্টা, টাকা দিতে না পারলে শুরু হয় শারীরিক, মানসিক নির্যাতন। নির্যাতনেও কাজ না হলে শেষ পর্যন্ত কোনো কোনো ‘দাস’ বা ‘দাসীকে’ হত্যা করতেও কুণ্ঠাবোধ করে না পাচারকারীরা। কয়েক সপ্তাহ আগে তাইওয়ানের আদালতে মানবপাচারকারীদের একটি দলের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দায়ের করা হয়। দলটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা তাইওয়ানের ৮৮ জন নাগরিককে কম্বোডিয়ায় পাচার করেছে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মানবাধিকার কর্মী এবং অ্যাক্টিভিস্টরা মনে করেন, ক্রমশ ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা এই মানবপাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর অভিযান শুরু করা উচিত। কিন্তু বার্মা প্রোগ্রাম অব ইউনাইটেড স্টেটস ইন্সটিটিউট অব পিসের (ইউএসআইপি) কান্ট্রি ডিরেক্টর কোনও দেশেই তেমন অভিযান না দেখায় হতাশ। তিনি মনে করেন, মানবপাচারের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে গতিতে কাজ করছে তা পাচারকারীদের কাজের গতির চেয়ে অনেক মন্থর।

এক বাংলাদেশির ‘দাস’ হওয়ার গল্প : বাংলাদেশের নাগরিক মোহাম্মদ আব্দুস সালামও মানবপাচারকারীদের খপ্পরে পড়েছিলেন। অনলাইনে চাকরির প্রলোভনে সাড়া দিয়ে কম্বোডিয়ায় কার্যত দাসের জীবন যাপন করতে হয়েছে তাকে। একসময় তাকে ব্যবহার করেই বিভিন্ন দেশ থেকে চাকরি দেয়ার নামে মানুষ ধরে আনার কাজ শুরু করে পাচারকারীরা।

তখন সালামের কাজই ছিল অনলাইনে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন মানুষকে খুব ভালো চাকরি বা ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবসায় ব্যাপক লাভের লোভ দেখিয়ে বিনিয়োগের জন্য টাকা আদায় করা বা টাকা আদায়ের পর তাদের কম্পোডিয়ায় নিয়ে আসা। পাঁচ মাস এভাবে অস্তিত্ব রক্ষার পর এক সুযোগে কম্বোডিয়ার ওই বন্দিশালা থেকে পালিয়ে আসেন আব্দুস সালাম।

মানবপাচারকারীদের হাত থেকে বাঁচার কৌশল জানাতে গিয়ে সালাম বলেন, ‘অনলাইনে কেউ যদি আপনার বন্ধু হওয়ার বিষয়ে খুব আগ্রহ দেখায়, সে যদি নিজের বিলাসবহুল জীবনযাপনযাপন কায়দা করে দেখায় এবং কয়েকদিন পরে ক্রিপ্টোকারেন্সি দিয়ে প্রচুর টাকা আয় করছে জানিয়ে আপনাকেও ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করতে বলে, তাহলেই বুঝতে হবে আপনার ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যাওয়ার সময় এসে গেছে। ঘুরুন এবং দ্রুত দৌড়ে পালান। কারণ তখন বুঝতে হবে যে, (নারী বা পুরুষ যা-ই হোন না কেন) তিনি একজন প্রতারক। সুত্র : ডয়চে ভেলে

সাথী / পরিচয়

শেয়ার করুন