নিউইয়র্ক     শনিবার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডলারের আধিপত্য ঠেকাতে বিকল্প আনছে ব্রিকস জোট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২৩ | ০৬:১১ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২৩ | ০৬:১১ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
ডলারের আধিপত্য ঠেকাতে বিকল্প আনছে ব্রিকস জোট

গত মার্চের শেষে চীন ও ব্রাজিল দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে পরস্পরের মুদ্রার ব্যবহারে চুক্তি করেছে। ছবি: সংগৃহিত

ইউএস ডলার এখনও সব মুদ্রার রাজা। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ বৈদেশিক বাণিজ্যে লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের এই মুদ্রা ব্যবহার করে। আর তাই রিজার্ভ কারেন্সি হিসেবে এই মুদ্রার ব্যবহার এখনো সবচেয়ে বেশি। তবে মুদ্রার বাজারে এই আধিপত্য আর বুঝি থাকছে না! চীনকে কেন্দ্র করে ‘ডি-ডলারাইজেশন’ বা ডলারের আধিপত্য কমানোর একটি প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে।

চীন, ব্রাজিল ও ভারতের মতো বেশ কিছু উদীয়মান অর্থনীতি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের লেনদেনে ইতিমধ্যে ডলারের বিকল্প মুদ্রার ব্যবহার শুরু করেছে। গত মার্চের শেষে বাণিজ্যের লেনদেন নিষ্পত্তিতে পরস্পরের মুদ্রার ব্যবহারের জন্য চুক্তি করেছে চীন ও ব্রাজিল। গত ১৫ বছরে সম্পদশালী ব্রাজিলের প্রধান ব্যবসায়িক অংশীদার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের জায়গা দখল করেছে চীন।

এই পালাবদল একরকম অনিবার্য হলেও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যা ঘটছে, তাতে বিশ্ব বাণিজ্যে ডলারের কেন্দ্রীয় ভূমিকা যে ধারাবাহিকভাবে ধাক্কা খাচ্ছে। আগস্টে আফ্রিকায় অনুষ্ঠেয় ব্রিকস (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা নিয়ে গঠিত জোট) শীর্ষ সম্মেলনে নিজেদের মধ্যে লেনদেনের জন্য ডলারের বিকল্প মুদ্রা ব্যবহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এ ক্ষেত্রে ডিজিটাল রুবল, রুপি ও রেনমিনবি ইউয়ান নিয়ে আলোচনা আছে।

গত মাসে ভারতের নয়াদিল্লিতে সেন্ট পিটার্সবুর্গ ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক ফোরামের অনুষ্ঠানে রাশিয়ার সংসদ ডুমার ডেপুটি চেয়ারম্যান আলেকজান্ডার বাবাকভ এই বিষয়ে ইঙ্গিত করেন। তিনি বলেন, ব্রিকস জোট আগামী সম্মেলনে এই বিশেষ উদ্যোগ বাস্তবায়নে পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে। চলতি বছরের আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকায় জোটটির আগামী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

বাবাকভ বলেন, ‘আমাদের প্রথম লক্ষ্য হলো একটি নতুন নীতিমালা তৈরি করা, যার ভিত্তিতে সাধারণ মুদ্রার ব্যবহার সম্ভব। এখন এটি ডিজিটাল রুবল, রুপি না ইউয়ান হবে সেটা কোনো বড় ব্যাপার নয়। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, আমাদের নিজ নিজ দেশের আইন অনুসরণ করবে এই মুদ্রা।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভারত, রাশিয়া ও চীন এমন একটি বহুমুখী বিশ্ব তৈরি করছে, যা বেশিরভাগ রাষ্ট্র সমর্থন করে। নতুন আর্থিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে এমন এক প্রক্রিয়ায় তৈরি হওয়া উচিত, যা ডলার ও ইউরোকে রক্ষা করবে না। নতুন মুদ্রা প্রচলন করে আমাদের লক্ষ্যপূরণে ভূমিকা রাখবে।’

বাবাকভ বলেন, ডলার ও ইউরো পশ্চিমাদের নীতি অনুসরণ করে। পশ্চিমাদের নীতিতে রাশিয়া, ভারত বা চীনকে সমান অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করা হয় না।

বিশ্ব অর্থনীতিতে ডলার যে সবচেয়ে শক্তিশালী তা জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটেলমেন্টের (ব্যাসেল) মতে, বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যের প্রায় অর্ধেক এখনো মার্কিন ডলারে হয়। এ কারণেই ডলারের এত আধিপত্য। তাই ডলারের দামের ওঠানামার সঙ্গে ডলারে নির্ধারিত ঋণের বোঝাও ওঠানামা করে।

তাই যেসব দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের লেনদেন ইউএস ডলারে নিষ্পত্তি হয়, সেসব দেশের অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রানীতির ওপর নির্ভর করে। অর্থনীতি অস্থিতিশীল হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্তের চেয়ে গ্রীনব্যাকের দাম অনেক বেশি ভূমিকা পালন করে। তাই অনেক রাষ্ট্রই চায় বিশ্ব অর্থনীতিতে ডলারের আধিপত্য হ্রাস পাক।

বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ১০টি মুদ্রার মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল ডলারবিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ১০টি মুদ্রার মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল ডলার
গত মাসে গ্লোবাল পলিসি জার্নালে ব্রিকসের কার্যক্রম নিয়ে গোল্ডম্যান শ্যাসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জিম ও’নিলের একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
ওই প্রবন্ধে জিম ও’নিল বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ডলার বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করে। ফেডারেল রিজার্ভ বোর্ড অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর বা শিথিল যে পদক্ষেপই নিক, ডলারের দামে তার নাটকীয় প্রভাব পড়ে।’ ও’নিল আরও বলেছেন, যদি ব্রিকস উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে তার কার্যক্রম আরও প্রসারিত করে, তাহলে নিয়মতান্ত্রিক বহু-মুদ্রাবিশিষ্ট একটি বৈশ্বিক ব্যবস্থা তৈরি হবে।

ব্রিকস হলো ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা নিয়ে গঠিত একটি জোট। ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরে এই জোট প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৯ সালে এই জোটের প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।

এদিকে ভারত রিজার্ভ মুদ্রা হিসাবে ডলারের পরিবর্তে রুপি ব্যবহার করতে চাইছে দীর্ঘদিন ধরে। তাই ডলারের ঘাটতির সম্মুখীন দেশগুলোকে ভারতীয় রুপিতে বাণিজ্য করার জন্য প্রস্তাব করছে নয়াদিল্লি।

অন্যদিকে ইরান, ভেনেজুয়েলা ও রাশিয়ার মতো দেশগুলোতে পণ্য বিনিময়ের জন্য চীন ২০১৮ সালে সাংহাই ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এক্সচেঞ্জ স্থাপন করে। এর মাধ্যমে চীন রেনমিনবিতে বাণিজ্য করে থাকে। এ ছাড়া রেনমিনবিতে লেনদেনের জন্য চীন ও সৌদি আরবের মধ্যে একটি চুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে। – সূত্র : টাইমস অব ইন্ডিয়া, রাশিয়ান সংবাদ সংস্থা টাস ও সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট

নাছরিন/পরিচয়

শেয়ার করুন