নিউইয়র্ক     শনিবার, ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, কোথায় কত দুর্নীতি হয়েছে স্পষ্ট করতে হবে – সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বাংলাদেশ ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৩ | ১২:৫৪ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২৩ | ০১:০১ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, কোথায় কত দুর্নীতি হয়েছে স্পষ্ট করতে হবে – সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরপর্বে বক্তব্য দেনছবি: পিআইডি

মেগা প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগকে ‘সম্পূর্ণ অমূলক’ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি চালেঞ্জ দিচ্ছি, কোথায় কত দুর্নীতি হয়েছে তা স্পষ্ট করতে হবে। স্পষ্ট করে বললে তার জবাবও আমি দেব।’ গত ১১ জানুয়ারী বুধবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খানের এ সংক্রান্ত একটি সম্পূরক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

এ সময় কয়েকজন সংসদ সদস্যের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী মজুদদারি, কালোবাজারি ও এলসি খোলা নিয়ে দুই নম্বরী করলে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেন। এ ছাড়া করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী দারুণ খাদ্যাভাব দেখা দেবে আভাস দিয়ে সবাইকে অপচয় রোধ ও খাদ্যোৎপাদন বৃদ্ধির আহ্বান জানান।

মোকাব্বির খান মেগা প্রকল্প ও কুইক রেন্টালসহ বিভিন্ন খাতে দুর্নীতির অভিযোগ করেন। এর জবাবে মোকাব্বির খানকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মনে হচ্ছে আমাদের সংসদ সদস্য বিরোধী দলে শক্তিশালী হওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু যেসব অভিযোগ তিনি এনেছেন তা সম্পূর্ণ অমূলক। তিনি মেগা প্রকল্প নিয়ে কথা বলেছেন। এই মেগা প্রকল্পের সুবিধাভোগী কারা? এ দেশের সাধারণ মানুষ। এই মেগা প্রকল্প অন্য কোনো সরকার করতে পারেনি, আওয়ামী লীগ সরকারই করেছে।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘পদ্মা সেতু সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে আমরা করেছি। মেট্রোরেল- এটাও সাধারণ মানুষের যোগাযোগের জন্য। মেট্রোরেলে চড়ে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অল্পসময়ে আসতে পারছে স্বল্প খরচে। এটা সাধারণ মানুষ ভোগ করছে। মাননীয় সংসদ সদস্য অনেক অর্থশালী-সম্পদশালী, গাড়িতে চড়েন, উনার এসব সমস্যা জানার কথা নয়।’

প্রধানমন্ত্রী এ সময়ে পদ্মা সেতুর দুর্নীতির অভিযোগের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘ওয়ার্ল্ড ব্যাংক তো পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল। সেখানে কি কোনো দুর্নীতি হয়েছিল? দুর্নীতি হয়নি। তারা প্রমাণ করতে পারেনি। এটা শুধু আমার কথা নয়, কানাডার ফেডারেল কোর্টের মামলার রায়েই বলা হয়েছে- সব অভিযোগ মিথ্যা। কোনো অভিযোগ সত্য নয়, সব ভুয়া। সেক্ষেত্রে কীভাবে বললেন দুর্নীতি হচ্ছে বাংলাদেশে। দুর্নীতি যদি সত্য হতো! তাহলে এত অল্প সময়ে এসব প্রজেক্টের কাজ কী শেষ হতো? কোনোদিন হয়েছে?’

মোকাব্বির খানকে উদ্দেশ করে সংসদ নেতা আরও বলেন, ‘মাননীয় সংসদ সদস্য বাংলাদেশের নাগরিক। ওনার একটা সেকেন্ড হোমও আছে। সেই সেকেন্ড হোম যেখানে অর্থাৎ ইংল্যান্ডে বিদ্যুতের দাম কত শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখানে বিদ্যুতের দেশ দেড়শ পার্সেন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। সেখানে ভোগ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ। সেখানে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিটি পরিবারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা হয়। নির্দেশনা নিয়ে তা মনিটরিং করা হয়। নিয়মের ব্যত্যয় হলে জরিমানা করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো সেই অবস্থা নয়।’

সরকার দ্রুত ব্যবস্থার অংশ হিসেবে কুইক রেন্টাল এনেছিল উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘কুইক রেন্টালের কথা বলা হচ্ছে। এই কুইক রেন্টালের প্রয়োজন ছিল। কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো এনেছিলাম বলেই আমরা মানুষকে বিদ্যুৎ দিতে পেরেছিলাম। এখন আমরা প্রতি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিচ্ছি। কুইক রেন্টালে যদি দুর্নীতি হতো তাহলে তো এত বিদ্যুৎ দিতে পারার কথা ছিল না। বিএনপির আমলে বিদ্যুতে দুর্নীতি হয়েছিল বলেই বিশ্বব্যাংক টাকা বন্ধ করে দিয়েছিল।’

সরকারি দলের ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারছি সারা বিশ্বব্যাপী দারুণ খাদ্যাভাব দেখা দেবে। তার কিছু আভাসও আমরা পাচ্ছি। সে কারণেই আমি শুরু থেকেই সবাইকে আহ্বান করছি- প্রত্যেকে যার এক ইঞ্চি জমি থাকলেও চাষ করুন। যত অনাবাদি জমি আছে তা আবাদ করা হোক। ফসল, ফলমূল, তরি-তরকারি যে যা পারেন উৎপাদন করেন। গরু, ছাগল, ভেড়া, হাঁস, মুরগি, কবুতর বা কোয়েল যে যা পারেন লালন-পালন করেন। আমাদের খাদ্য চাাহিদা যেন নিজেদের আওতায় রাখতে পারি। সেই ব্যবস্থাটা আমরা নিয়েছি। এই আহ্বানের পর সারা দেশে একটা উৎসাহ দেখা দিচ্ছে। সরকারের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ও দেশের মানুষ কিছু কিছু উৎপাদন শুরু করেছে।’

তিনি বলেন, ‘আসলে এটা খুবই দুর্ভাগ্যের বিষয় রোজা-উৎসব বা চাহিদার সময়ে আমাদের ব্যবসায়ীরা যে করে হোক দাম বাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। পৃথিবীর অন্য দেশে দেখি উৎসব পার্বণে দাম কমায়। আমাদের এখানে উল্টো কাণ্ড। শুধু তাই নয়- অনেক সময় তারা পণ্য আমদানি করতেও ঢিলেমি করে। জিনিসের দাম ও চাহিদা বাড়িয়ে তারা ব্যবসা করতে চায়। এটা আসলে অমানবিক। যারা মজুদদারি, কালোবাজারি, এলসি খোলা নিয়ে দুই নম্বরী করবে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি এবং নেব। প্রয়োজনে আরও কঠোর ব্যবস্থা আমরা নেব। মানুষের কষ্ট যেন না হয় সেদিকে আমরা দৃষ্টি দেব।’

আহসানুল ইসলাম টিটুর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভোগ্যপণ্য কেউ মজুদদারি করলে তার বিরুদ্ধে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছি। রমজান মাসে যে পণ্যগুলো প্রয়োজন তাকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে। মানুষ রোজার সময় যেন কষ্ট না পায়। ওই সময় যে পণ্যগুলো একান্তভাবে প্রয়োজনীয় তা যেন জনগণ যথাযথভাবে পায় তার জন্য এসব পণ্য আমদানির এলসি খোলার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ভোগ্যপণ্য আমদানির এলসি খুলতে কোনোরকম সমস্যা হচ্ছে না। মনিটরিংয়ের মাধ্যমে পণ্যের যোগ্যমূল্যে এলসি খোলার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কেউ এটা নিয়ে অন্যরকম কিছু করতে গেলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কেউ মজুদ করার চেষ্টা করলেও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সাথী /পরিচয়

শেয়ার করুন