নিউইয়র্ক     শুক্রবার, ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কোনো ‘দলের সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ নয়’, বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন চায় যুক্তরাষ্ট্র

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ মে ২০২৩ | ০১:২৯ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ২৭ মে ২০২৩ | ০১:২৯ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
কোনো ‘দলের সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ নয়’, বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন চায় যুক্তরাষ্ট্র

বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কোনো রাজনৈতিক দলের সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করবে না। কিন্তু অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সমর্থনের নীতিতে বরাবরের মতো অনড়। এ কারণেই বাংলাদেশিদের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে দেশটি। গত ২৫ মে ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এসব কথা জানান। ম্যাথিউ মিলার বলেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য মার্কিন ভিসায় বিধিনিষেধ আরোপের যে নীতি গ্রহণ করা হয়েছে, সেটাকে বাংলাদেশ সরকার স্বাগত জানানোয় যুক্তরাষ্ট্র খুশি। সে কারণে আগামী দিনে সরকারের সঙ্গে কাজ করার বিষয়ে উন্মুখ।

আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ভিসায় বিধিনিষেধের আরোপের নীতি ঘোষণা করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের টুইট করেছেন এবং সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুও বাংলাদেশের টেলিভিশন টক শোতে কথা বলেছেন। এই প্রেক্ষাপট তুলে ধরে এক সাংবাদিক পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্রের কাছে জানতে চান, আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী দলকে আহ্বান জানাবে কি না। জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কোনো রাজনৈতিক দলের কী করা উচিত বা কী করা উচিত নয়, সে বিষয়ে আমি কোনো কথা বলব না। যেটা বলব, তা হচ্ছে–যুক্তরাষ্ট্র অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সমর্থন করে। এ কারণেই আমরা বাংলাদেশের নির্বাচন ঘিরে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছি।’

মিলার আরও বলেন, ‘গতকাল মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে যে ঘোষণা আমরা দিয়েছি, সেটাকে সরকার স্বাগত জানানোয় আমরা খুবই আনন্দিত হয়েছি। গণতন্ত্রকে শান্তি, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তার অগ্রগতির জন্য সবচেয়ে স্থায়ী উপায় বলে আমরা বিশ্বাস করি।’ নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার পর গত বুধবার ২৪ মে ওয়েব পোর্টাল জাস্টনিউজবিডির সম্পাদক ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার প্রেস উইং এর সদস্য মুশফিকুল ফজল আনসারী প্রশ্ন করেন, আওয়ামী লীগ সরকার ‘অসাংবিধানিক পন্থায় সংবিধান সংশোধন করে’ নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনব্যবস্থা বাতিল করেছে। সুশীল সমাজসহ সব রাজনৈতিক দল এই ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচন দাবি করছে। যুক্তরাষ্ট্র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের আহ্বান জানাবে কি না।

জবাবে মিলার বলেন, ‘আমি মনে করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমরা তাঁর এই প্রতিশ্রুতিকে উল্লেখ করে বলতে চাই, আজ যে বিধিনিষেধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তা নির্বাচনের এই প্রক্রিয়াগুলোকে বাস্তবায়ন করারই অংশ।’ ‘বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে আমি শেষ যে কথাটা বলবে তা হলো, যেসব বিষয়গুলো বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং মানবাধিকারকে খর্ব করেছে, সেগুলো নিয়ে আমরা উদ্বেগ জানিয়ে দিয়েছি।’ নতুন ভিসা নীতি নিয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে মিলার বলেন, ‘এটি বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটি সিগন্যাল যে আমরা কেবল অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনব্যবস্থাকে সমর্থন করবে। এ ক্ষেত্রে যেকোনো ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত (রেডি টু টেইক অ্যাকশন)।’

বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে নতুন ভিসা নীতির গত বুধবার ঘোষণা করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। এই নীতির আওতায় আগামী জাতীয় নির্বাচনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার জন্য কাউকে দায়ী করা হলে তাকে ভিসা দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারবে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, বর্তমান এবং সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা, সরকার-সমর্থক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যরা, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সদস্যরাও এর আওতায় পড়বেন।

যেসব কর্মকাণ্ড গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বানচালের আওতায় পড়বে, সেগুলোও মার্কিন বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এসেব কর্মকাণ্ডের মধ্যে আছে ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন, শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ করার অধিকার প্রয়োগ করা থেকে মানুষকে বঞ্চিত করার জন্য সহিংসতাকে কাজে লাগানো, এবং এমন কোন পদক্ষেপ–যার উদ্দেশ্য রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা সংবাদমাধ্যমকে তাদের মত প্রচার থেকে বিরত রাখা। বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনকে সমর্থন দিতে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টের ২১২(এ)(৩)(সি)(৩সি) ধারা বলে এই নতুন নীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। নতুন এই নীতির কথা ঘোষণা করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন বুধবার বলেছিলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সবার দায়িত্ব এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের সবার প্রতি সমর্থন জানাতেই তিনি এই নীতি ঘোষণা করেছেন।

এসএ/এমএএস/এমইউএ/টিএ/পরিচয়

শেয়ার করুন