নিউইয়র্ক     শুক্রবার, ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কিছু ভুল হতে পারে, আমরা তো ফেরেশতা নই ড. মুহাম্মদ ইউনূস

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৩ | ০১:৫৪ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২৩ | ০১:৫৪ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
কিছু ভুল হতে পারে, আমরা তো ফেরেশতা নই ড. মুহাম্মদ ইউনূস

শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় গত ০৯ নভেম্বর বৃহস্পতিবার আদালতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পরে আদালত থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমি তো নিজে এ প্রতিষ্ঠানের মালিক নই। আমার আদর্শ কর্মসূচিতে কোনো ত্রুটি ছিল না। এত বড় কাজ করতে গেলে কিছু ভুল হতে পারে। আমরা তো ফেরেশতা নই। কিন্তু ভুল হলে তা ইচ্ছাকৃত নয়।’

ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে এদিন শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন করেন ড. ইউনূস। পরে যুক্তিতর্কের জন্য ১৬ নভেম্বর দিন ধার্য করেন বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানা।

২০১১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মামলাটি করেছিল সরকারের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান বাদী হয়ে চারজনের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন। ওই মামলায় গতকাল ড. ইউনূসসহ চারজনের আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানি হয়। এ সময় নিজেদের নির্দোষ দাবি করে তারা আদালতে একই লিখিত বক্তব্য জমা দেন। চারজনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন ও ব্যারিস্টার খাজা তানভীর আহমেদ। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। শারীরিক অসুস্থতা ও বয়স বিবেচনায় চার বিবাদীকে বেঞ্চে বসে শুনানি কার্যক্রমে অংশ নেয়ার অনুমতি দেন বিচারক।

লিখিত বক্তব্যে ড. ইউনূস বলেন, ‘শ্রম আইনের ২৩৪ ধারার বিধান লঙ্ঘন করা হলে ২৩৬ ধারায় সরকার প্রতিকারের একাধিক বিধান রেখেছে। ২৩৬ ধারা না মেনে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর কখনো বিবাদী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করতে পারে না। যখন শ্রম আইনে স্বয়ং কোনো ধারা লঙ্ঘনের প্রতিকারের বিধান রাখা হয়, তখন কোনো অবস্থাতেই আইনগতভাবে উল্লেখিত ধারাগুলোর লঙ্ঘন ফৌজদারি অপরাধ নয়।’

মামলায় ড. ইউনূস ছাড়াও গ্রামীণ টেলিকমের এমডি মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহানকে বিবাদী করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করার অভিযোগ আনা হয়। এ মামলায় গতকাল শ্রম আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করেন বিবাদীরা।

শ্রম আদালত থেকে বেরিয়ে ড. ইউনূস সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি যে সমস্ত উদ্যোগ নিয়েছি, কোনোটা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার জন্য নেইনি। এটা গ্রামীণ ব্যাংক হোক বা অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠান হোক। মানুষ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান করে মুনাফা পাবে, লাভ করবে এবং সেই প্রতিষ্ঠানকে বড় করবে। আমরাও লাভ করেছি, বড় করেছি। কিন্তু আমাদের সামাজিক ব্যবসার মূল লক্ষ্য মানুষের উপকার। ফলে যিনি ব্যবসা করছেন তিনি কোনো মুনাফা নেবেন না। আমি এ সামাজিক ব্যবসার প্রবক্তা। বিশ্বব্যাপী এটিকে প্রচার করার চেষ্টা করছি। ফলে নিজেই যদি উল্টোটা করি তাহলে তো কিছু হলো না। আমার ব্যক্তিগতভাবে মুনাফা করার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। আমার সঙ্গী যারা আছে তারাও মুনাফার জন্য এটির সঙ্গে যোগ দেয়নি। আমাদের মূল লক্ষ্য মানুষের উপকার করা।’

তিনি বলেন, ‘‌এখন উপকার করতে পেরেছি কি পারিনি সেটি নিয়ে বিতর্ক হয়। গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে বিতর্ক হয়। সবকিছু নিয়ে বিতর্ক হয়। কিন্তু আমরা মনে করি এটি ঠিক। ৫০-এর ঊর্ধ্বে কোম্পানি নিয়ে কাজ করেছি। কোনোটাই ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার জন্য করিনি। কাজেই যেটার উদ্দেশ্য লাভবান হওয়া নয়, সেটি থেকে ভাগ নিয়ে কোথায় দেব? এখন আদালতের কাছে আমি ন্যায়বিচার চাই।’

তার আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘ড. ইউনূসের মামলা মেট্রোরেলের চেয়ে ১০ গুণ দ্রুতগতিতে চলছে। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো সত্য নয়।৷ এমনকি সাক্ষীরা সবাই স্বীকার করেছে উনার বিরুদ্ধে কোনো কাগজ নেই।’

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘এটি শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলা, কোম্পানি আইন লঙ্ঘনের মামলা নয়। এখানে উনারা শ্রম আইন লঙ্ঘনের বিষয়টি কোনোভাবে উতরানোর জন্য বলছেন—আমি আমার মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশনের অধীনে কাজ করেছি, কোম্পানি আইনের অধীনে কাজ করেছি। আইন কিন্তু সেটি বলে না। শ্রম আদালতে এটিই প্রথম নয়, এ ধরনের প্রচুর মামলা ও তদন্ত হয়েছে।’

শেয়ার করুন