নিউইয়র্ক     রবিবার, ১২ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইসরায়েল-গাজা সংঘর্ষে ‘যুদ্ধাপরাধ’ দেখছে অ্যামনেস্টি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৩ | ০১:১০ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১৫ জুন ২০২৩ | ০১:১০ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
ইসরায়েল-গাজা সংঘর্ষে ‘যুদ্ধাপরাধ’ দেখছে অ্যামনেস্টি

ছবি- সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় গত মাসে চালানো অভিযানে ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধ করেছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। ইসরায়েল গাজার বেসামরিক নাগরিকদের ওপর বিমান হামলা চালিয়েছে বলে সংস্থাটি একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনের ইসলামিক জিহাদের (পিআইজে) কয়েকটি রকেট হামলায় ইসরায়েলের বেসামরিক নাগরিকেরা নিহত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে এসব ঘটনার তদন্ত করারও আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি।

ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) জানিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক আইন মেনেই অভিযান চালিয়েছে। এমনকি বেসামরিক নাগরিকদের যাতে ক্ষয়ক্ষতি কম হয়, সেদিকেও লক্ষ রেখেছে, যা মূলত ঐচ্ছিক। অন্যদিকে ফিলিস্তিনের পিআইজে অ্যামনেস্টির এই প্রতিবেদনকে স্বাগত জানিয়েছে।

গত মাসের ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের লড়াইয়ে ৩৪ জন ফিলিস্তিনি ও এক ইসরায়েলি নিহত হয়েছেন। এই লড়াই শুরু হয়েছিল গত ৯ মে। এই হামলার সূত্রপাত করে ইসরায়েল। হামলায় পিআইজের তিন কমান্ডারসহ ১০ বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। এর পাঁচ দিন পর মিসরের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে যায় তারা।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, গাজা উপত্যকার ঘনবসতি এলাকায় ঘুমিয়ে ছিল মানুষ। এ সময় ইসরায়েলি সৈন্যরা বোমাবর্ষণ করে, যা পূর্বপরিকল্পিত ছিল। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ইসরায়েল বেসামরিক নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করেনি। এভাবে ইচ্ছাকৃতভাবে চালানো অসম হামলা যুদ্ধাপরাধের মধ্য পড়ে।

আইডিএফ বলছে, ৯ মে রাতের পর তারা গাজার আরও ৪০০ স্থানে হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় পিআইজের আরও সিনিয়র তিন কমান্ডার নিহত হন। পিআইজের বিরুদ্ধে রকেট হামলার অভিযোগে ইসরায়েল এসব হামলা চালায়।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এসব হামলার মধ্য ৯টি হামলা তদন্ত করেছে। এই হামলাগুলো পিআইজের কমান্ডারদের বাড়িতে চালানো হয়েছিল। হামলার তদন্ত শেষে অ্যামনেস্টি জানিয়েছে, গাজার যেসব বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে, সেগুলোর কোথাও কোনো অস্ত্র বা সামরিক সরঞ্জাম পাওয়া যায়নি। এমনকি আশপাশের বাড়িতেও এসব পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া ১৩ মে জাবালিয়া শরণার্থীশিবিরের চারতলা এক বাড়িতে হামলা চালায় ইসরায়েল। ওই বাড়িতে নাবাহান পরিবারের ৪২ জন সদস্য ছিল।

আইডিএফ আরও বলেছে, গাজা উপত্যকায় অভিযান চালাতে যথেষ্ট চেষ্টা করা হয়েছে বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস করতে। এর মধ্য রয়েছে হামলার সময় পরিবর্তন করা ও কিছু ক্ষেত্রে হামলা পরিকল্পনা বাতিল করা। বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষয়ক্ষতি সবচেয়ে কম হবে এমন স্থান ও সময়ে হামলা করেছে আইডিএফ। আর তা ছাড়া ইসলামিক জিহাদ খুঁজে খুঁজে আবাসিক এলাকাতেই তাদের ঘাঁটি গাড়ে। তারা বেসামরিক নাগরিকদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যেই এমনটি করে থাকে।

আইডিএফ গাজায় হামলার আগে বিভিন্ন উপায়ে নিশ্চিত হয় যে বাড়িটি থেকে বেসামরিক নাগরিকেরা সবাই বের হয়েছে কি না। যেমন ফোনকল ও বাড়ির ছাদে ছোট আঘাত করে। বাড়ি খালি হওয়ার আগে আইডিএফ কোনো হামলা চালায় না।

তবে অ্যামনেস্টি বলছে, বাড়ির ছাদে আইডিএফ যেসব পাথর ফেলে, সেসবেও অন্তত দুই শিশুসহ তিন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। নিহত শিশুদের পরিবার জানায়, ১০ মে বিকেলে গাজার আল-শাবা সড়কে ইসরায়েলি রকেটের ফেলা পাথরের আঘাতে ওই দুই শিশু নিহত হয়েছে।

এদিকে পিআইজে ইসরায়েলে রকেট হামলার দায় অস্বীকার করেছে। তবে কিছু প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে মিসরীয় গবেষক মোরায়েফ জানিয়েছেন, হামলার পরপরই পিআইজে রকেট ও অন্যান্য অস্ত্র ওই এলাকা থেকে সরিয়ে নেয়। এসব হামলার তদন্ত ও বিচার হওয়া উচিত।

পিআইজে নেতা তারিক সালমি এ অভিযোগ এড়িয়ে গিয়ে বিবিসিকে বলেন, অ্যামনেস্টির প্রতিবেদন প্রমাণ করে ইসরায়েলই এই সংঘাতের সূচনা করেছে। তাদের এই হামলা ঘৃণ্য ও গুরুতর যুদ্ধাপরাধ। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর হামলার উদ্দেশ্যই নির্বিচারে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করা। অন্যদিকে আমরা যা কিছুই করছি, তা শুধুই নিজেদের আত্মরক্ষার্থে। সূত্র:বিবিসি

শেয়ার করুন