নিউইয়র্ক     বৃহস্পতিবার, ১৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমেরিকায় স্বপ্ন পুরণের দ্বার উম্মোচন করছে পিপলএনটেক 

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২২ | ০১:৪৫ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২২ | ০১:৪৫ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
আমেরিকায় স্বপ্ন পুরণের দ্বার উম্মোচন করছে পিপলএনটেক 

ছবি: নিহার সিদ্দিকী।

নিউইয়র্ক : ‘নো মোর অড জব’ শ্লোগান নিয়ে প্রতিষ্ঠিত পিপল এন টেক এলামনাইদের প্রথম এবং ব্যতিক্রমী পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত হলো।
গত ২৩ অক্টোবর রোববার নিউইয়র্কের উডসাইডস্থ কুইন্স প্যালেসে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সাফল্যের কথা জানালেন পিপল এন টেক এলামনাইরা। শেয়ার করলেন একে অপরের অভিজ্ঞতার কথা। তাদের অভিজ্ঞতার নানান কথা অবাক করে দেয় অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের। বিশেষ করে ‘ল্যান্ড অব অপুরচনিটির দেশ’ এই মার্কিন মল্লুকে যে কতো সুযোগ-সুবিধা রয়েছে তার কথা তুলে ধরে আশার আলো শুনালেন অনেকেই। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ইঞ্জিনিয়ার আবু হানিপ-কে অভিহিত করলেন ‘স্বপবাজ আর স্বপ্ন পূরণের মানুষ’ হিসেবে। বক্তারা বলেন পিপল এন টেক হচ্ছে আমেরিকায় ভাগ্য পরিবর্তনের সিঁড়ি।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ড. মনিরুল ইসলাম এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন আরটিভি’র সিইও সৈয়দ আশিকুর রহমান। আর মধ্যমনি ছিলেন পিপলএনটেক’র প্রতিষ্ঠাতা-সিইও এবং ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির চ্যান্সেলর আবুবকর হানিপ। ছিলেন পিপলএনটেক’র প্রেসিডেন্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএফও ফারহানা হানিপ। তাদের ঘিরে জমেছিলো প্রতিষ্ঠানটির এলামনাইদের মিলনমেলা।
এতে নিউইয়র্ক, ভার্জিনিয়া, নিউজার্সী ও পেনসিলভেনিয়া ক্যাম্পাস/কার্যালয়ের সকল কর্মকর্তা সহ নিউইয়র্ক ছাড়াও ট্রাইষ্টেটের বিশিষ্টজনেরা অংশ নেন। কমিউনিটির সর্বস্তরের বিশিষ্টজনদেন উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানটি বিভিন্ন পরিবেশে রূপ নেয়।
উল্লেখ্য, পিপল এন টেক প্রতিষ্ঠাতা ইঞ্জিনিয়ার আবু হানিপ নানা চড়াই-উৎরাই পাড়ি দিয়ে নিজে যেমন প্রতিষ্ঠিত, তেমনী হাজারো বাংলাদেশীসহ ভিন্নদেশীদেরও ‘প্রফেশনাল জব’-এ প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করেছেন। ইঞ্জিনিয়ার আবু হানিপ আমেরিকায় তার ব্যক্তিগত জীবনে মোহনীয় উচ্চ বেতনের চাকুরি ছেড়ে দেড় যুগ পূর্বে প্রতিষ্ঠা করেন ‘আইটি বিষয়ক প্রশিক্ষণ সেন্টার-পিপল এন টেক’। দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটি থেকে ৮হাজার শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ নিয়ে চাকুরি করছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন নামী-দামী কোম্পানীতে/প্রতিষ্ঠানে। সর্বশেষ আরো বৃহৎ পরিকল্পনায় আবু হানিপ প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘ওয়াশিংটন ইউনিভার্সি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি’। তিনি এই প্রতিষ্ঠনের চ্যান্সেলর। এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এখন সহস্রাধিক। যার সিংহভাগই বাংলাদেশ থেকে স্টুডেন্ট ভিসায় আসা শিক্ষার্থী।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথি ছাড়াও বক্তব্য রাখেন ইঞ্জিনিয়ার আবু হানিপ ও পিপলএনটেকের প্রেসিডেন্ট ফারহানা হানিপ। পিপলএনটেকের অন্যতম পরিচালক ড. শফি চৌধুরীর পরিচালনায় অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ এন মজুমদার, সৈয়দ মোস্তফা আল আমিন রাসেল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন কয়েকজন এলামনাই।
কনসাল জেনারেল ড. মনিরুল ইসলাম বলেন, আপনাদের সাফল্য আমাদের মুগ্ধ করে এবং বাংলাদেশীদেরকে গৌরবান্বিত করে। ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিপ আমেরিকায় যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন তা অনেককেই উৎসাহিত করবে, অনুপ্রেরণা যোগাবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশী ডায়াসপোরার অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রে তাদের পদচিহ্ন রাখতে সক্ষম হয়েছেন। আবুবকর হানিপ তাদের একজন।  সৈয়দ আশিকুর রহমান পিপলএনটেকের সাফল্যেও প্রশংসা করে বলেন, এই প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিকে সামনে এগিয়ে নিতে আমাদের সবার সহযোগিতা থাকবে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়ে এদেশে পড়তে ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিপও শোনান তার জীবনের গল্প, সংগ্রামের কথা, সাফল্যেও কথা।  যে গল্প/কথা ছিলো সকলের জন্যই অনুপ্রেরণার। আবু হানিপ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে সুপ্রতিষ্ঠিত একটি প্রতিষ্ঠানে দু’লাখ ডলার বেতনের চাকরি করতেন। কিন্তু ভেবেছিলেন একার উন্নতি শুধু নয়, আরও মানুষ যাতে একইভাবে তাদের জীবনটিকে পাল্টে দিতে পারে সেই প্রচেষ্টাই নিতে হবে। তার সেই ভাবনা থেকেই আজ থেকে ১৮ বছর আগে ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন পিপলএনটেক।
তিনি জানান, মজার কথা হচ্ছে শুরুটা হয় মাত্র একজন ছাত্র দিয়ে। সেই ছাত্রটি যখন কোর্স সম্পন্নের পর আমেরিকান একটি প্রতিষ্ঠানে মোটা মাইনের চাকরি পেলেন। তখন তা জানাজানি হওয়ার পর নতুন ছাত্র আসতে শুরু করলো। এরপর আর পেছনে তাকে ফিরে তাকাতে হয়নি। ধীরে ধীরে পিপল এন টেকের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। আর এই সময়ের মধ্যে ৭ হাজারের বেশি বাংলাদেশীকে আইটি প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত করে ‘প্রফেশনাল জব’ পাইয়ে দিয়েছে পিপলএনটেক। যারা এখন স্বাচ্ছন্দে জীবন যাপন করছেন। শুধু তাই নয়, পিপল এন টেকের এলামনাইরা নিজেদের পাশাপাশি গড়ে তুলছেন নিজেদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য গড়ে তুলেছেন আর্থিক নিশ্চয়তা। পাশাপাশি তারা রেমিট্যান্স পাঠিয়ে বাংলাদেশের অগ্রগতিতেও ভূমিকা রাখতে পারছেন।
আবু হানিপ বলেন, এসবের পিছনে দেশপ্রেমই বড়।   অনুষ্ঠানে ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিপ ‘ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’ (ডব্লিউইউএসটি) প্রতিষ্ঠার কথা তুলে ধরে বলেন, এটি পিপলএনটেকেরই একটি ধারাবাহিকতা এবং তার দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। আর আমেরিকার মূলধারায় বাংলাদেশী কমিউনিটিকে এগিয়ে নিতে শিক্ষাকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া উচিৎ। পিপলএনটেকের প্রেসিডেন্ট ফারহানা হানিপ বলেন, আমাদের এলামনাইরাই আমাদের প্রতিষ্ঠানের প্রাণ। তাদের সাফল্যই আমাদের সাফল্য। তাই সবাইকে নিয়েই আমরা আমাদের সাফল্য উদযাপন করতে চাই। যদিও এলামনাইরা এখন আর ক্যাম্পাসে নেই কিন্তু তারা সকলেই আমাদের অন্তরে রয়েছেন। কেউ কেউ এখন উচ্চ পর্যায়ে অবস্থান করছেন, তাদের জন্য আমরা গর্বিত। ডব্লিউইউএসটিকে সফল করে তুলতে কিনি পিপলএনটেকের এলামনাইদের পাশে থাকার আহবান জানান।
পিপল এন টেক-এর এলামনাই ড. শফিউল হামিদ। অনুষ্ঠানে জানালের তার অভিজ্ঞতার কথা। বলেন, বাংলাদেশে উচ্চতর শিক্ষা শেষে পিএইচডি করেন জাপানে। এরপর চলে আসেন ‘স্বপ্নের দেশ’ যুক্তরাষ্ট্রে। ‘অড জব’ দিয়ে শুরু তার প্রবাস জীবন। নানান হতাশার মধ্যেই জানতে পারেন ‘পিপল এন টেক’র কথা। খোঁজখবর নিয়ে ৪ মাসের কোর্স নিয়ে তা সম্পন্ন করে চাকুরী পেয়ে যান আমেরিকান এক প্রতিষ্ঠানে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তার। পরবর্তীতে বাংলাদেশ থেকে আসা স্ত্রী নাসরিন সুলতানাকেও পিপল এন টেক’র কোর্স সম্পন্ন করান। বর্তমানে স্বামী-স্ত্রী উভয়েই এখন মোটা আয়ের চাকরি করছেন আমেরিকার আইটি সেক্টরে।
২০১৩ সালের ঘটনা। মন্দার কবলে পড়ে কর্মহীন হয়ে পড়েছিলেন উচ্চশিক্ষিতা ফাতেমা ইয়াসমীন। বসবাস করছিলেন ক্যাসিনো সিটি হিসেবে বিশ্বখ্যাত আটলান্টিক সিটিতে। সেখানে চালু করা হলো ‘পিপল এন টেক’র ক্যাম্পাস। ফাতেমা ইয়াসমীন এই ক্যাম্পাস থেকে আইটি কোর্সগ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে মোটা অংকের অর্থের চাকরী পেয়ে চান। বর্তমানে তিনি সাউথ ক্যারোলিনায় কর্মরত। জানালেন ভালো আছেন, নেই কোন হতাশা।
অনুষ্ঠানে পিপল এন টেক’র ভূমিকার প্রশংসা করলেন বাংলাদেশের কুমিল্লা বোর্ডে এসএসসিতে প্রথম স্থান অধিকারী এবং পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে আমেরিকায় আসা মীর হোসেন। বললেন- প্রথমে ‘অড জব’ করতে বাধ্য হই। এক পর্যায়ে পরিচিতজনের মাধ্যমে পিপল এন টেক’র সান্নিধ্যে এসে হতাশা কাটিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। এখান থেকে আইটি কোর্স সম্পন্ন করে নতুন জীবন পাই। জানান তিনি বর্তমানে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রণালয়ে আইটি স্পেশালিস্ট হিসেবে চাকরির পাশাপাশি আটলান্টিক সিটিতে পিপল এন টেক’র ক্যাম্পাসে শিক্ষকতা করছেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিকে ক্রেস্ট তুলে দেন ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিপ।
এছাড়াও সফল এলামনাইদের হাতে শুভেচ্ছা স্মারক হিসেবে ক্রেস্ট ও ফুলের তোড়া উপহার দেওয়া হয়। এরপর ড. শফিউল হামিদ দম্পতি সহ পিপলএনটেকের সকল কর্মকর্তাকেও ক্রেস্ট ও ফুলের তোড়া দিয়ে সম্মানিত করা হয়। বিশেষ সম্মাননা জানানো হয় আবুবকর হানিপ ও ফারহানা হানিপকেও। খবর ইউএনএ’র।
শেয়ার করুন