নিউইয়র্ক     রবিবার, ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমার মেয়েকে বাঁচাতে পারিনি, বললেন সেই বাবা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ০২:৩৩ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ০২:৩৮ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
আমার মেয়েকে বাঁচাতে পারিনি, বললেন সেই বাবা

তুরস্কে ভূমিকম্পের ধ্বংসযজ্ঞের প্রতীক হয়ে ওঠা ধ্বংসাবশেষের ফাঁক গলে বেরিয়ে আসা মৃত মেয়ের হাত ধরে বাবার নির্বাক বসে থাকার ছবি বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মানুষের হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে

তুরস্কে ভূমিকম্পের ধ্বংসযজ্ঞের প্রতীক হয়ে ওঠা ধ্বংসাবশেষের ফাঁক গলে বেরিয়ে আসা মৃত মেয়ের হাত ধরে বাবার নির্বাক বসে থাকার ছবি বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মানুষের হৃদয়ে নাড়া দিয়েছে। এই ছবি যেন তুরস্কে ভূমিকম্পের ধ্বংসলীলার গল্প তুলে ধরেছে। ভূমিকম্পের এক সপ্তাহের বেশি সময় পেরিয়ে গেছে ইতোমধ্যে। সোমবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মৃত মেয়ের হাত ধরে বসে থাকা সেই বাবা বললেন, ‘আমার মেয়েকে বাঁচাতে পারিনি।’ শোকে ভেঙে পড়া এই বাবা তার মেয়েকে হারানোর কথা বলতে গিয়ে নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিলেন না।

তুরস্ক-সিরিয়ায় শক্তিশালী ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। বিধ্বংসী এই ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৩৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আরও হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। গৃহহীন হয়ে পড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। গত সপ্তাহে তুরস্কে আঘাত হানা ভূমিকম্পের ধ্বংসযজ্ঞের কিছু ছবি মানুষের মনে ব্যাপক নাড়া দিয়েছে। শোকে ভাসিয়েছে কোটি কোটি মানুষকে। এমনই একটি ছবি মেয়ে হারানো তুরস্কের মেসুত হ্যান্সারের।

ধসে যাওয়া ভবনের ধ্বংসাবশেষের নিচে চাপা পড়ে মারা গেছেন তার ১৫ বছর বয়সী মেয়ে ইরমাক। তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় কাহরামানমারাস শহরের ধ্বংসস্তূপের নিচে মেয়ের হাত ধরে পাশেই বসে আছেন মেসুত। কাহরামানমারাস শহরটির অব্স্থান দেশটিতে আঘাত হানা ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের একেবারে কাছে।


মেয়ের মৃতদেহ ধ্বংসস্তূপ থেকে মুক্ত করার জন্য সেখানে তিন দিন কাটিয়েছেন মেসুত হ্যান্সার

মেসুত বলেন, ভবন ধসে পড়ার সাথে সাথেই ইরমাক মারা গেছে। সে পালানোর কোনও সুযোগ পায়নি। সিএনএন তুর্ককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হ্যান্সার গত সপ্তাহের মর্মান্তিক বিপর্যয়কে সংজ্ঞায়িত করা সেই ছবির আগের জীবন সম্পর্কে কথা বলেছেন। হ্যান্সার বলেন, ইরমাক তার দাদীর সাথে দেখা করতে গিয়েছিল। মেয়ের নিথর দেহ ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধারের আগে তিন দিন সেখানে বসে কাটিয়ে দিয়েছেন তিনি।

কাহরামানমারাসের এই বাসিন্দা বলেন, ‘এটা ছিল এক বিভৎস ঘটনা। সংবাদটি শোনার পরপরই আমি সেখানে ছুটে যাই। এবং একেবারে খালি হাতেই আমার মেয়েকে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে টেনে বের করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, আমি মেয়েকে বাঁচাতে পারিনি।’

‘মা, বাবা কিংবা ভাইবোনকে হারানোর পাশাপাশি সন্তানকে হারিয়ে ফেলাটা অন্য স্তরের এক বেদনা,’ বলেন তিনি।

হ্যান্সার যখন ধ্বংসস্তূপের কাছে পৌঁছান, তখন পরিস্থিতির ভয়ঙ্কর বাস্তবতা তার সামনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, ‘আমি কোনও আশা দেখতে পাইনি। কারণ আমার মেয়ের ওপর একটি বড় গার্ডার পড়েছিল। কোমর পর্যন্ত মুক্ত ছিল সে। কিন্তু তার কোমর থেকে শরীরের নিচের অংশ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে ছিল। সে পিষ্ট হয়ে গেছে। দুর্ভাগ্যবশত, ভূমিকম্পের সময় সে সেখানেই মারা যায়। তার বাঁচার কোনও সুযোগই ছিল না।’ হ্যান্সার বলেছেন, মেয়ের মৃতদেহ ধ্বংসস্তূপ থেকে মুক্ত করার জন্য সেখানে তিন দিন কাটিয়েছেন।


গার্ডার চাপায় মারা গেছে মেসুত হ্যান্সারের ১৫ বছর বয়সী মেয়ে ইরমাক

‘আমার নিজের প্রচেষ্টায়, নিজস্ব উপায়ে, আমি তার কাছে পৌঁছেছি। আমি কারও কাছে সাহায্য চাইতে পারিনি। কারণ ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেক মানুষ রয়েছে।’ তুরস্কের জরুরি সমন্বয় কেন্দ্র স্যাকোম বলছে, সোমবারের ওই ভূমিকম্পে তুরস্কে ৩১ হাজার ৬৪৩ জন মারা গেছেন। আর সিরিয়ায় প্রাণ গেছে ৪ হাজার ৫৭৪ জনের। দুই দেশেই উদ্ধার প্রচেষ্টা এখনও চলছে। তবে ভূমিকম্পের ধ্বংসাত্মক বিপর্যয় মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। তুরস্কের দুর্যোগ মোকাবিলা সংস্থার মতে, দেশটিতে ৫ হাজার ৭০০টিরও বেশি ভবন ধসে পড়েছে।

হ্যান্সার বলেন, ‘আমি আফাদের (তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থা) সাথেও কথা বলেছিলাম। তারা যতটা সম্ভব সাহায্য করেছে। কিন্তু তারা ওই এলাকায় খনন যন্ত্র দিতে পারেনি।’

হ্যান্সার কেবল তার মেয়ের জন্যই শোকাহত নন। বরং ভূমিকম্প যখন আঘাত হানে, তখন পরিবারের সদস্যরা তার মায়ের বাড়িতে ছিলেন। যেখানে তার মেয়েও ছিল। তিনি বলেন, ‘আমার মা, আমার বড় দুই ভাই, আমার শ্যালিকা এবং তার ছোট মেয়ে। সেখানে আমার মেয়েসহ সাতজন ছিল। তারা সবাই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে।’

হ্যান্সারের বাড়িও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান। তিনি বলেন, এখন তার থাকার কোনও জায়গা নেই। আমরা বাড়িতে প্রবেশ করতে পারছি না। কারণ কোনও কিছুই আর আগের মতো নেই। একেবারে ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন রাস্তায় অবস্থান করছি। তার মতো তুরস্কের আরও হাজার হাজার পরিবার একই ধরনের শোক আর ধ্বংসযজ্ঞের মুখোমুখি হয়েছে।

শেয়ার করুন