নিউইয়র্ক     রবিবার, ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অ্যাপলের একচেটিয়া আধিপত্য ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র,অ্যান্টিট্রাস্ট মামলা

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৪ | ০৬:২৩ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৪ | ০৬:২৩ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
অ্যাপলের একচেটিয়া আধিপত্য ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র,অ্যান্টিট্রাস্ট মামলা

প্রযুক্তি খাতে বিশ্বের সর্ববৃহত্‌ প্রতিষ্ঠান অ্যাপলের বিরুদ্ধে অ্যান্টিট্রাস্ট মামলা করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। দেশটির ১৬টি ষ্টেটের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট এ মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে, অ্যাপল একচেটিয়া বাজার আধিপত্য বিস্তার ও প্রতিযোগিতামূলক বাজার সীমিত করতে তাদের সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ করেছে।

নিউ জার্সি ষ্টেটের নিউয়ার্ক শহরে ফেডারেল আদালতে দায়ের করা অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়, অ্যাপল তাদের ডিভাইসে আইফোন ও অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের মধ্যে কমিউনিকেশন এবং অ্যাপের কার্যকারিতা সীমিত করার পাশাপাশি থার্ড পার্টি স্মার্টওয়াচসহ ডিজিটাল ওয়ালেটে ব্যবহারে বাধা সৃষ্টি করে বাজার প্রতিযোগিতাবিরোধী আচরণ করছে। ফলে এসব ডিভাইস ব্যবহারকারীরা অ্যাপলের ইকোসিস্টেমে বা জগতে আটকে যাচ্ছে। মূলত অ্যাপলের প্রতিযোগিতাবিরোধী অনুশীলন থেকে স্মার্টফোন বাজারকে মুক্ত করতে এ মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে সরকার পক্ষের আইনজীবীরা।

আদালতে অভিযোগ জমা দেয়ার পর একটি সংবাদ সম্মেলন করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আইনজীবীরা। তাদের অন্যতম সদস্য অ্যাটর্নি জেনারেল মেরিক গারল্যান্ড সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘প্রতিযোগিতাবিরোধী অনুশীলনের মাধ্যমেই অ্যাপল বাজারে নিজেদের শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে। স্মার্ট ফোনের বাজারে প্রতিযোগিতা কমিয়ে সর্বোচ্চ মুনাফা নিশ্চিতে একচেটিয়া প্রভাবের অপব্যবহার করছে অ্যাপল, যা যুক্তরাষ্ট্রে প্রচলিত আইনবিরোধী। মার্কিন ক্রেতাদের এমন কোনো কোম্পানির পণ্য চড়া দাম দিয়ে কেনা উচিত নয়, যারা আইনের কোনো পরোয়া করে না।’

সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের এটর্ণী জেনারেল মেরিক গারল্যান্ড আরো বলেন, ‘অ্যাপল কখনো চায় না যে তাদের অ্যাপস্টোরে যেসব অ্যাপ রয়েছে, সেসবের চেয়ে উন্নত কোনো অ্যাপ বাজারে আসুক। নতুন প্রতিযোগী অ্যাপের আগমন ঠেকাতে অ্যাপল নিয়মিত তার ‘অ্যাপ রিভিউ’ প্রক্রিয়ারও অপব্যবহার করছে।’

এদিকে অ্যাপল সব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে জানিয়েছে, এ মামলাটি কোম্পানির মূল পরিচালন প্রক্রিয়ার প্রতি হুমকিস্বরূপ। তারা কোনো ধরনের অবৈধ প্রতিযোগিতাবিরোধী তৎপরতার সঙ্গে যুক্ত নয়। অ্যাপলের এক মুখপাত্র জানান, মামলাটি অ্যাপলের প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী সক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে পাশাপাশি একটি নেতিবাচক উদাহরণ স্থাপন করবে। অ্যাপল বিশ্বাস করে মামলার তথ্যে কিছু ভুল রয়েছে। অ্যাপলের মুখপাত্র ফ্রেড শেইনজ বলেন, ‘তথ্য–উপাত্ত এবং আইনের ভিত্তিতে এ মামলা ভুল। অ্যাপল কঠোরভাবে এটি মোকাবিলা করবে।

আমেরিকায় অন্তত ১৪ কোটি নাগরিক আইফোন ব্যবহার করেন। সেই সংখ্যাটা মাথায় রেখেই অ্যাপেল বেশ কিছু নীতি নিয়েছে। নিজেদের পণ্যের দাম প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি রেখেছে তারা। টিম কুকের নেতৃত্বধীন প্রতিষ্ঠানের এই বাণিজ্যিক নীতির কবলে পড়ে অ্যাপেল ব্যবহারকারীদের অবস্থা শোচনীয়। কারণ তাঁরা আইফোনের পরিবর্তে অন্য কোনও কমদামি গ্যাজেট ব্যবহার করতে পারছেন না। কারণ বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা কেবল আইফোনেই পাওয়া যায়, অন্য ফোনে সেই সুবিধা মেলে না। বিচার বিভাগের মতে, এখনই যদি একচেটিয়া আধিপত্য খর্ব করা না যায় তাহলে আগামী দিনে আরও বাড়বে এই সমস্যা।

এদিকে অ্যাপলের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের মামলাটি বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান পাবলিক ট্রেডেড কোম্পানির বিরুদ্ধে একটি যুগান্তকারী মামলা হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় অবৈধভাবে প্রতিযোগিতা দমন করতে অ্যামাজন, অ্যাপল, মেটা ও গুগলের মতো প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের নিয়ন্ত্রক সংস্থাদের কাছ থেকে তদন্তের মুখোমুখি হয়েছে।

মেরিক গারল্যান্ড আরো বলেন, ‘অ্যাপল নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে ব্যবহারকারী ও ডেভেলপারদের জন্য অ্যাপল ইকোসিস্টেমের বাইরে যাওয়াকে অত্যন্ত কঠিন ও ব্যয়বহুল করে তুলেছে।’

মামলায় অ্যাপলের ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতাবিরোধী এসব অনুশীলন পরিবর্তন ও আর্থিক জরিমানা দাবি করা হয়েছে। এটি অ্যাপলের একচেটিয়া বাজার আধিপত্য কমাতে ও বিভিন্ন প্লাটফর্মে অ্যাপলের প্রযুক্তি ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা দূর করতে সাহায্য করবে বলে মনে করছেন প্রযুক্তিবিশেষজ্ঞরা। তার পরেই বড়সড় ধস নেমেছে অ্যাপেলের শেয়ারে। এক ধাক্কায় প্রায় চার শতাংশ শেয়ার কমে গিয়েছে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের।

শেয়ার করুন