নিউইয়র্ক     শনিবার, ২২শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৮ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিউ ইয়র্কে আন্তর্জাতিক লালন ও লোক উৎসব ১৯-২০ অক্টোবর

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ জুন ২০২৪ | ০৯:৪৬ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০৮ জুন ২০২৪ | ০৯:৪৬ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
নিউ ইয়র্কে আন্তর্জাতিক লালন ও লোক উৎসব ১৯-২০ অক্টোবর

নিউ ইয়র্কে আগামী ১৯ ও ২০ অক্টোবর দুই দিন ব্যাপী দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক লালন ও লোক উৎসবের আয়োজন করা হচ্ছে। নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক সংগঠন লালন পরিষদ ইউএস এই উৎসবের উদ্যোক্তা।

গত শনিবার (৮ জুন) ঢাকায় বাংলাদেশের জাতীয় প্রেস ক্লাবে এ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক সংগঠন লালন পরিষদ ইউএস।

সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত অনুষ্ঠান সূচি তুলে ধরেন সংগঠনের প্রধান উপদিষ্টো নুরুল আমিন বাবু। বক্তব্য রাখেন ভোরের কাগজ সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, লালন সম্রাজ্ঞী ফরিদা পারভিন, বরেণ্য বংশীবাদক গাজী আব্দুল হাকিম ও বাউল শিল্পী সুলতানা ইয়াসমিন লায়লা।

লিখিত বক্তেব্য জানানো হয়, আগামী ১৯ ও ২০ অক্টোবর দ্বিতীয় বারের মতো আন্তর্জাতিক লালন ও লোক উৎসবের আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে লালন পরিষদ ইউএস।

নিউইয়র্কের কুইন্সের বাংলাদেশী অধ্যুষিত জ্যামাইকার নন্দন কানন নামে পরিচিত জ্যামাইকা পারফর্মিং আর্ট সেন্টারে উৎসব অনুষ্ঠান হবে। এবারের লালন ও লোক উৎসবে প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী নাহিদ ইজহার খান। বিশেষ অতিথি থাকবেন ভোরের কাগজ সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত।

এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন লালন গবেষক কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সেলিম তোহা। উৎসবে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন লালন সম্রাজ্ঞী ফরিদা পারভিন, বরেণ্য বংশীবাদক গাজী আবদুল হাকিম, কুষ্টিয়ার লালন আখড়া থেকে ফরাসি কন্যা লালন গবেষক দেবোরা জান্নাত, রাখি শবনম, বাউল শিল্পী কালা মিয়া ও সঙ্গীত মিল্পী সুলতানা ইয়াসমিন লায়লা। এছাড়া নিউ ইয়র্কের শিল্পীরা থাকবেন।

নুরুল আমিন বাবুল বলেন, ভিন্ন ভাষা, ভিন্ন পরিবেশ ও ভিন্ন আবহাওয়ার মধ্যেও আমরা বাংলা সংস্কৃতিকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা করছি। একই সঙ্গে আমাদের নতুন প্রজন্মের সঙ্গে আমাদের সংস্কৃতির মেলবন্ধন গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। আমাদের প্রতিটি অনুষ্ঠানেই নতুন প্রজন্মকে প্রাধান্য দেয়া হয় যেনো তারা নিজেরাই বাংলা সংস্কৃতিকে লালন করে, চর্চা করে; যা পরবর্তী প্রজন্মকেও পৌঁছে দিবে।

ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, নিউ ইয়র্কে মাল্টি কালচারাল সোসাইটিতে যে লালন উৎসব হচ্ছে- এটা অনুপ্রেরণার, বাঙালির আত্মপরিচয়ের। লালনের গানে বাংলার সংস্কৃতি প্রস্ফুটিত হয়। লালন গীতিসহ বাঙালির সংস্কৃতি এখন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিকৃতভাবে গান গাওয়া হচ্ছে। নানা রংয়ে, নানা ঢংয়ে গান গাওয়ায় মূল চরিত্র হারিয়ে যায়। অসাম্প্রদায়িক লালনের গান গাওয়াও এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। তার গান গেয়ে জেলে যেতে হচ্ছে। উদার চর্চা আরো কঠিন হয়ে পড়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় লালনের গান নিয়ে সব জায়গায় হাজির হতে হবে। তা না হলে-হাজার বছরের সংস্কৃতি, উদার সংস্কৃতি চর্চা আরো কঠিন হয়ে যাবে। পাশাপাশি শুদ্ধ সঙ্গীতের চর্চা করতে হবে। যারা লালনের চর্চা করেন, লালনের গান ধরে রেখেছেন, আমাদের সবাইকে তাদের সঙ্গে থাকতে হবে। আদি চরিত্র ধরে রাখতে হবে।

শ্যামল দত্ত আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর ডাক শুধু স্বাধীনতার ছিলো না, মুক্তির ডাকও দিয়েছিলেন। আর তা ছিলো অন্ধকার থেকে, কুসংস্কার থেকে মুক্তির ডাক। বাঙালির সংস্কৃতির মুক্তির ডাক। আসুন সবাই লালনের জয় গান গাই।

লালন সম্রজ্ঞী ফরিদা পারভিন বলেন, আমি লালন সাঁইর চর্চা করি। শুদ্ধ গানের চর্চা করি। আমি মূল ঘরানা থেকে গাইছি। তাই আমার উপর দায়িত্ব পড়েছে লালন সাঁইকে সব জায়গায় পরিচয় করিয়ে দেয়ার। আমি লালন সাঁইকে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিতে চাই। তাকে নিয়ে কাজ করে যেতে চাই। তিনি বলেন, ফ্রান্সে লালন সাঁইর ৬টি গান রেকর্ড করে আর্কাইভ করা হয়েছে। এটা আমাদের শিল্পীদের সম্মান, বাংলাদেশের সম্মান।

লালন সাঁইর গান নিয়ে যথেচ্ছাচার হচ্ছে, অশুদ্ধ গান গাওয়া হচ্ছে- আক্ষেপ করে ফরিদা পারভিন বলেন, লালনের শুদ্ধ বাণী প্রচারে গুরু ধরে থাকতে হবে। শিখতে হবে, শুদ্ধ চর্চা করতে হবে।

লালন সাঁইর বাণী শুদ্ধ চর্চায় ‘অচিন পাখি’ নামে একটি সঙ্গীতায়ন ভাড়া বাড়িতে পরিচালনা করে আসেছন জানিয়ে দুঃখ করে ফরিদা পারভিন বলেন, কিন্তু তিনি সরকারিভাবে কোনো জায়গা পাচ্ছেন না। দুঃখ হয়। অথচ কত মানুষ বিঘা বিঘা জমি পাচ্ছে।

শুদ্ধ সঙ্গীত পৃথিবীতে তুলে ধরতে হবে মন্তব্য করে সঙ্গীত শিল্পী গাজী আব্দুল হাকিম লালন উৎসব আরো সুন্দর করে, বড় পরিসরে আয়োজনের আহ্বান জানান আয়োজকদের প্রতি। এছাড়া লালন ও ফোক উৎসবের পাশাপাশি যন্ত্রসঙ্গীত বা যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পীদের নিয়ে উৎসব আয়োজনের আহ্বান জানান তিনি। – সুত্র দৈনিক ভোরের কাগজ

শেয়ার করুন