নিউইয়র্ক     শনিবার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দ্য ইকোনমিস্টের নিবন্ধ

মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে চরম ব্যর্থ বাইডেন-ট্রাম্প

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৪ | ০৬:২২ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৪ | ০৬:২২ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে চরম ব্যর্থ বাইডেন-ট্রাম্প

আর মাত্র ৭ মাস পরই যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এই নির্বাচনে বেশ কয়েকজন প্রার্থী থাকছেন। এর মধ্যে প্রধান দুই প্রার্থী বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডেমোক্রেটিক পার্টির জো বাইডেন ও সাবেক প্রেসিডেন্ট রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হলো প্রধান দুই প্রার্থীর কেউই প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্য নয়।

নির্বাচন সামনে রেখে নিয়মিত যেসব জনমত প্রকাশ পাচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে, মার্কিন ভোটাররা জো বাইডেন কিংবা ডোনাল্ড ট্রাম্প কাউকে নির্বাচনে দেখতে চান না। কিন্তু দুঃখজনকভাবে জনগণ তাদেরকেই আবারও প্রার্থী হিসেবে পেতে যাচ্ছেন।

প্রেসিডেন্টের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো দেশের জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং বিভিন্ন সম্ভাবনার খাত খুঁজে বের করে সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া। হুমকি থাকলে তা মোকাবিলার উপায় বের করা এবং দেশের স্বার্থ এগিয়ে নেয়া।

তবে অযোগ্যতা, দুর্বল মানসিক সক্ষমতা এবং যেটা সবচেয়ে খারাপ, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করে বাইডেন ও ট্রাম্প বারবার সেই কাজটি সম্পাদন করতে ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছেন।

অনেকগুলো বছর ধরে তারা দেশের নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু বরাবরই বন্ধু থেকে শত্রুকে আলাদা করার ক্ষেত্রে বাজে পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন। পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে উভয়ই ফ্লপ। কিন্তু উভয় আরও একবার ওভাল অফিসে যাওয়ার লড়াইয়ে নেমেছেন।

ন্যাটোর জন্য ক্রমশ হুমকি হয়ে উঠছেন ট্রাম্প। সামরিক জোট থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করতে চান তিনি। ট্রাম্পের এই হুমকি ২০১৮ সালে ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলনকালে বাস্তবায়ন হওয়ার অনেকটা কাছাকছি চলে গিয়েছিল। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে বিষয়টি বাস্তবায়ন করতে পারেননি।

কিন্তু নিজের সেই পরিকল্পনা (ন্যাটো থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার) থেকে সরে এখনও সরে আসেননি ট্রাম্প। নির্বাচনী প্রচারণায় সে কথাই বারবার বলছেন তিনি। তিনি প্রকাশ্যেই বলছেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তিনি ন্যাটোর অর্থায়ন বন্ধ করে দেবেন।

রাশিয়ার সামরিক অভিযানের পর থেকে ইউক্রেনকে সব ধরনের সহযোগিতা করে আসছে ন্যাটো। এ বিষয়ে ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি বিপজ্জনক। তিনি অর্থহীনভাবে বলে আসছেন, মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ইউক্রেন সংঘাত সমাধান করতে সক্ষম।

আরও বাজে ব্যাপার হলো মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে ট্রাম্পের বন্ধু হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান জানিয়েছেন, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হলে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে এক পয়সাও খরচ করবেন না। যুদ্ধ এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে। মার্কিনিরা যদি টাকা না দেয় ইউরোপীয়রা এই যুদ্ধে তহবিল যোগাতে অক্ষম।

বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতিও ত্রুটিপূর্ণ। বর্তমান মধ্যপ্রাচ্য সংকটে ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ ছাড়া আর কিছুই দেখছেন না তিনি। ইরান যে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মাধ্যমে কয়েকটি ফ্রন্ট থেকে ইসরাইলের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে তা তিনি দেখতে অক্ষম অথবা অনাগ্রহী।

প্রাথমিকভাবে ইসরাইল ও এর প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিলেও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যকার জায়নবাদবিরোধী বামপন্থীদের চাপের মুখে পিছু হটছেন বাইডেন। এদিকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইরানের আক্রশের জবাব না দিয়ে তেল আবিবের প্রতি রাজনৈতিক সমর্থন হ্রাস করছে যুক্তরাষ্ট্র।

শুধু তাই নয়, হোয়াইট হাউস ও কংগ্রেসনাল ডেমোক্র্যাটদের পক্ষ থেকে ইসরাইলকে সামরিক সহায়তার ওপর শর্ত আরোপ করার হুমকি রয়েছে যার ফলে সামরিক সহায়তা হ্রাস বা নিঃশেষ হতে পারে।

ইরান ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর মতো প্রকৃত অপরাধীর দিকে মনযোগ দেয়ার বদলে বাইডেন এখন ইসরাইলের সমালোচনা করছেন। গোয়েন্দা তথ্য প্রকাশ করে তিনি বুঝাতে চাইছেন যে, ইসরাইল সরকার যদি তার মতামতকে গুরুত্ব না দেয় তাহলে তাদের পতন হতে পারে এবং ইসরাইলের বর্তমান নীতিগুলো সন্ত্রাসবাদকে আরও উৎসাহিত করবে।

নেতানিয়াহুকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য মার্কিন সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা চাক শুমার ইসরাইলে যে আগাম নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে তাকে সমর্থন করেছেন বাইডেন। বলেছেন, চাক শুমারের যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এটা শুধু তার একার নয়, বহু মার্কিন নাগরিকেরও।

চীনের ব্যাপারে ট্রাম্প ও বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতিও ত্রুটিপূর্ণ। ক্ষমতার মেয়াদ শেষ হয়ে এলেও চীনকে না ঘাটানোর চেষ্টা জারি রেখেছেন বাইডেন। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির ব্যাপারেও কোনো কথা বলেননি তিনি। এদিকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল ঘিরে চীনের হুমকি বেড়েই চলেছে।

বাইডেন ও ট্রাম্প উভয়েই অবশ্য বিশ্বাস করেন যে, পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ে তাদের নেয়া কৌশল থেকে থেকে রাজনৈতিকভাবে লাভবান হবেন তারা। দুর্ভাগ্যবশত বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের সঠিক অবস্থান এবং বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো যেসব হুমকি মোকাবিলা করছে সে সম্বন্ধে তাদের উপলব্ধি খুব বাজেভাবে ত্রুটিপূর্ণ।

অনেক মার্কিন ভোটারই এই দুই প্রার্থীকে ঘৃণা করেন এবং তা সঙ্গত কারণেই। যুক্তরাষ্ট্রের শত্রুদের জন্য বিষয়টি বেশ আনন্দের যে, এই দুই জনের মধ্যে যেই জিতুক, সামনেরে চারটি বছর হবে দীর্ঘ ও ভয়াবহ। সূত্র: প্রতিদিনের সংবাদ।

শেয়ার করুন