নিউইয়র্ক     শনিবার, ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জালালাবাদ ভবন নিয়ে মুখ খুললেন সাবেক কােষাধ্যক্ষ ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম

সাধারণ সদস্যরা না চাইলে সংগঠন প্রদত্ত সমুদয় অর্থ ফেরত দিয়ে ভবনটি ফিরিয়ে নিতে রাজী

পরিচয় রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ০৪:২১ অপরাহ্ণ | আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ | ০৪:২১ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
সাধারণ সদস্যরা না চাইলে সংগঠন প্রদত্ত সমুদয় অর্থ ফেরত দিয়ে ভবনটি ফিরিয়ে নিতে রাজী

জালালাবাদ ভবন।

যুক্তরাষ্ট্রে সর্ববৃহত্ আঞ্চলিক সংগঠন জালালাবাদ এসোসিয়েশান অফ আমেরিকা ইঙ্ক এর জন্য একটি ভবন ক্রয়কে কেন্দ্র করে তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে। গত ২৯ আগষ্ট নতুন কার্যকরী কমিটির শপথ গ্রহণের দিনকয়েক পরেই সদ্য সাবেক কার্যকরী কমিটির সভাপতি ময়নুল হক চৌধুরী হেলাল, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী শেফাজ ও কোষাধ্যক্ষ মইনুল ইসলাম এষ্টোরিয়ায় জালালাবাদ ভবন ক্রয়ের ঘোষণা দেওয়ার বিষয়টি কম্যুনিটিতে আলোড়ন তুললেও সংগঠনের সদস্যদের মধ্যে দ্রুত নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়।

বিশেষ করে বিদায়ী কমিটির দায়িত্ব হস্তান্তরের মাত্র কয়েকদিন আগে বিপুল অংকের অর্থ (প্রায় তিন লক্ষ ডলার) লেনদেন সংগঠনের গঠনতন্ত্রের চরম লংঘন বলে মন্তব্য করেন সমিতির সাথে সংশ্লিষ্টদের কয়েকজন। ভবন ক্রয়ের সংবাদ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার সময় সদ্য শপথ নেওয়া সভাপতি বদরুল হোসেন খানকে আমন্ত্রণ না জানানো চরম অসৌজন্যতা ও অন্যকিছুর ইঙ্গিত বলেও মন্তব্য রয়েছে কারো কারো।

এ বিষয়ে জানার জন্য সদ্য বিদায়ী কোষাধ্যক্ষ ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলামের যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিদায়ী কমিটির চলে যাওয়া এবং নতুন কমিটির দায়িত্বভার গ্রহণের মাঝামাঝি সময়ে বিতর্ক হওয়া নতুন কিছু নয়। বিগত কয়েকটি কার্যকরী পরিষদ বিদায়ের আগে গঠনতন্ত্রকে পাশ কাটিয়ে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন যা নিয়ে বিতর্ক হলেও সংগঠন লাভবান হয়েছে।

যেমন সাবেক সভাপতি মরহুম কামাল আহমেদ তাঁর পরবর্তী কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের পূর্বে ফিলাডেলফিয়ায় একটি ভবন ক্রয় করেছিলেন যা থেকে মাসিক আয় হতো ১৬০০ ডলারের মত। উক্ত অর্থ সংগঠনেরই কাজে লেগেছে। এরপর সাবেক আরেক সভাপতি বদরুন নাহার খান মিতাও দায়িত্ব হস্তান্তরের দিনকয়েক আগে সংগঠনের অর্থে কবর ক্রয় করেন যা পরবর্তীতে অনেক উপকারে এসেছে। ফলে সংগঠনের অর্থ যদি বাড়ী ভাড়া দিয়ে আর খেয়ে দেয়ে না উড়িয়ে কল্যাণমুখী কিছু কাজে ব্যবহার করা যায়, তাতে তো সংগঠনই উপকৃত হয়।

জালালাবাদ এসোসিয়েশান অফ আমেরিকা ইঙ্ক এর নামে ক্রয় না করে নতুন একটি কর্পোরেশনের নামে ভবনটি ক্রয় প্রসঙ্গে প্রশ্নের উত্তরে মইনুল ইসলাম বলেন, যেহেতু আমি রিয়েল এষ্টেট ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত সেহেতু দীর্ঘদিন ধরে আমার একটি স্বপ্ন ছিল আমার নিজের কোন লাভ ছাড়াই আমি জালালাবাদ এসোসিয়েশান অফ আমেরিকা ইঙ্ক এর জন্য একটি ভবন ক্রয়ে যথাসাধ্য চেষ্টা করবো এবং সেজন্যই আমি আমার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি হিসেবে জালালাবাদ ভবন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেই। আমি ২০২২ সালের ১৫ মার্চ ৮৯০,০০০ ডলারের মুল্য নির্ধারণ করে এষ্টােরিয়ার ৩৬ এভিনিউ এলাকায় ২ ফ্যামিলি বাড়ীটির জন্য কন্ট্রাক্ট স্বাক্ষর করি, ৫০ হাজার ডলার ডাউন পেমেন্ট দেই।

কিন্তু এর কিছুদিনের মধ্যে উক্ত বাড়ীর লাগোয়া বাড়ীটির দাম উঠে যায় ২.৩ মিলিয়ন ডলারে। তখন আমাদের বাড়ীর বিক্রেতা লোভী হয়ে উঠে এবং আমাকে একদিকে ক্লোজিং এর জন্য চাপ দিতে থাকে অপরদিকে নানা প্রস্তাব দিতে থাকে যাতে আমি বাড়ীটির কন্ট্রাক্ট থেকে বেরিয়ে আসি। এমনকি কন্ট্রাক্ট থেকে বেরিয়ে গেলে আমাকে অতিরিক্ত আরো ২০ হাজার ডলার প্রদানের প্রস্তাব করে বিক্রেতা। আমি রাজী হইনা কারণ আমি নিশ্চিত ছিলাম এটি জালালাবাদের জন্য একটি লাভজনক ভবন হবে। ভবন ক্রয়ের জন্য আমরা সাধারণ সভায় সিদ্ধান্তও পাশ করিয়ে রাখি। শুধু তাই নয়, আমরা কার্যকরী কমিটির সদস্যরাই চাঁদা দিয়ে সংগঠনের কার্যক্রম চালিয়ে যাই যাতে আমাদের সঞ্চয়ের উপর চাপ না আসে। এমতাবস্থায় ক্লোজিং এর নির্ধারিত সময় ঘনিয়ে আসলে আমি উপায় খুঁজতে থাকি কিভাবে বাড়ীটি বিলস্ব না করে দ্রুত ক্লােজ করা যায়। কারণ নট ফর প্রফিট সংগঠন/প্রতিষ্ঠানকে কেউ মর্টগেজ দিতে চায়না ফোরক্লাজার এর বাইন্ডিং থাকার কারণে। নিউ ইয়র্কে এ পর্যন্ত আমাদের কম্যুনিটি বলুন আর অন্য কম্যুনিটি বলুন, নট ফর প্রফিট প্রতিষ্ঠান যেমন, মসজিদ, চার্চ এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য রিয়েল এষ্টেটের ক্ষেত্রে গ্যারেন্টর হতে হয় ব্যক্তিকে।

এ সময় আমি জালালাবাদ এসোসিয়েশান অফ আমেরিকা ইঙ্ক এর তত্কালীন সভাপতি ময়নুল হক চৌধুরী হেলাল ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী শেফাজকে বিষয়টি অবগত করি। তাদের সম্মতিসুচক সাড়াও পাই।
আমিও বুঝতে পারলাম, বাড়ীটি ক্লোজ করতে হলে আরেকটি কর্পোরেশন করতে হবে এবং যিনি কর্পোরেশনের প্রেসিডেন্ট হবেন, তিনিই ভবনে ঋণের গ্যােরন্টর হবেন। তাঁর সোশ্যাল সিকিউরিটি নাস্বারই ব্যবহৃত হবে ট্যাক্স আইডি হিসেবে। তাই আমি উপায় না দেখে বাড়ীটি ক্লোজিং করতে ব্যর্থতার কারণে যাতে হাতছাড়া না হয়ে যায় সেজন্য নিজে জালালাবাদ ইউএসএ ইঙ্ক নামে কর্পোরেশন খুলে বাড়ীটি ক্লোজ করি ডেটলাইনের মাত্র কয়েকদিন আগে আগষ্টের ২২ তারিখে। প্রসঙ্গত, এখানে বলে রাখি, জালালাবাদ এসোসিয়েশান অফ আমেরিকা ইঙ্ক কর্পোরেশনটি খোলা হয়েছিল জনাব ওহিদুর রহমান মুক্তার নাম ও সোশ্যাল সিকিউরিটি নাম্বার ব্যবহার করে। কর্পোরেশন খুলতে হলে একজন প্রেসিডেণ্ট অবশ্যই থাকতে হয় এবং সেজন্যই আমাকে জালালাবাদ ইউএসএ ইঙ্ক এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে উল্লেখ করতে হয়েছে। আমি শপথ নিয়েছিলাম পক্ষপাতিত্ব এবং রাগ-অনুরাগের উর্ধে থেকে সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো। ভবন ক্রয়ের ক্ষেত্রে আমি তাই করেছি। এই ভবন জালালাবাদ এসোসিয়েশান অফ আমেরিকা ইঙ্ক এর জন্য একটি বড় সম্পদ হবে বলে আমি সর্বান্তকরণে বিশ্বাস করি। ইতোমধ্যে সোনালী এক্সচেঞ্জ ভবনের একটি কামরা ভাড়া নিয়েছে তাদের এষ্টােরিয়া শাখার জন্য। মর্টগেজ বাবদ এই ভবনের মাসিক ব্যয় ৫৩৩৬ ডলার আর বেসমেন্ট ছাড়া প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় ভাড়াবাবদ পাওয়া যাবে নুন্যতম ৬২০০ ডলার।

তবে জালালাবাদ ভবনকে দ্রুত ঋণমুক্ত করতে আমার কিছু প্রস্তাবনা আছে। ভবনটির জন্য আলাদা একটি জালালাবাদ ট্রাষ্ট প্রতিষ্ঠা করে ট্রাষ্টের আওতায় নিয়ে আসতে হবে জালালাবাদ ভবনকে। এমন প্রস্তাব গ্রহণ করতে হবে, ভবিষ্যতে কোন কার্যকরী কমিটি যাতে ভবরটি বিক্রি করতে না পারে। ট্রাষ্টের প্রতিটি সদস্যপদ ২৫ হাজার ডলারে বিক্রয় করা হবে। আমি এবং আমার চারবন্ধু জনপ্রতি ২৫ হাজার ডলার অর্থাত্ সর্বমোট ১ লক্ষ ২৫ হাজার ডলার প্রদান করে ট্রাষ্টের সদস্যপদ ক্রয়ে প্রস্তুত আছি।

তবে এও বলতে চাই জালালাবাদ এসোসিয়েশান অফ আমেরিকা ইঙ্ক এর সাধারণ সদস্যরা যদি মনে করেন ভবন ক্রয় সঠিক হয়নি তাহলে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ৯০ দিনের মধ্যে সংগঠন প্রদত্ত সমুদয় অর্থ ফেরত দিয়ে ভবনটি ফিরিয়ে নিতেও আমি রাজী।

সবশেষে জালালাবাত ভবনের সাইনবোর্ড নিয়ে যে কয়েকজন প্রশ্ন করেছেন তাঁদের প্রশ্নের উত্তরে বলছি ওটা কোন ফিজিক্যাল কোন সাইনবোর্ড ছিলনা, ডিজিটাল পদ্ধতিতে ফটোশপ ব্যবহার করে ছবি তোলার জন্য তৈরী করা হয়েছিল।

পরিচয়/টিএ

শেয়ার করুন