নিউইয়র্ক     রবিবার, ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রন ডিস্যান্টিসকে নিয়ে কেন এত আলোচনা?

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২২ | ১২:০৪ অপরাহ্ণ | আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২২ | ১২:০৪ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
রন ডিস্যান্টিসকে নিয়ে কেন এত আলোচনা?

যুক্তরাষ্ট্রের এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকানদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের খবরের মধ্যে দেশটির রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে একটি নাম। তিনি রন ডিস্যান্টিস, দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত ফ্লোরিডার গভর্নর।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, ডিস্যান্টিস ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান শিবিরের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মনোনয়নের দৌড়ে শামিল হতে পারেন। এরই মধ্যে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ও প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে জোর আলোচনা চলছে বিশ্ব গণমাধ্যমে।

অভিবাসনের বিষয়ে তাঁর কঠোর অবস্থান, গর্ভপাতের অধিকারের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক মনোভাব এবং যুক্তরাষ্ট্রের ‘যুদ্ধ সংস্কৃতি’ নিয়ে খোঁচাখুঁচি না করার ডানপন্থী নীতির জন্য বেশ ভালো অবস্থানেই থাকবেন ডিস্যান্টিস। ফ্লোরিডার গভর্নরকে তাই দারুণ সম্ভাবনাময় হিসেবে ভাবা হচ্ছে। অনেকে মনে করছেন, কট্টর ডানপন্থী নীতিই ডিস্যান্টিসকে ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্টের পদের দৌড়ে নিয়ে যেতে পারে।

৪৪ বছর বয়সী এই উদীয়মান রাজনীতিক তাঁর গত মেয়াদের চার বছরে মার্কিন রাজনীতির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। করোনা মহামারির বিধিনিষেধ, স্কুলের পাঠ্যসূচিতে লিঙ্গ পরিচয়, যৌনশিক্ষা ও সমালোচনামূলক জাতি তত্ত্বের শিক্ষার মতো রক্ষণশীলদের উসকে দেওয়ার মতো বিষয় নিয়েও বেশ সরব ছিলেন ডিস্যান্টিস।


রন ডিস্যান্টিসের জন্ম ১৯৭৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ফ্লোরিডার জ্যাকসনভিলে ইতালীয় বংশোদ্ভূত পরিবারে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়ার আগে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। ডিস্যান্টিস ২০১০ সালে সাবেক টেলিভিশন সঞ্চালক ক্যাসি ব্ল্যাককে বিয়ে করেন। তাঁদের তিন সন্তান আছে। ক্যারিয়ারের শুরুতে ডিস্যান্টিস কাজ করতেন নৌবাহিনীতে। পরে নেভি সিলের আইন উপদেষ্টা ছিলেন। গুয়ানতানামো বে নৌ ঘাঁটি ও ইরাকে মার্কিন বাহিনীর সঙ্গে কাজেরও অভিজ্ঞতা আছে তাঁর।

এরপর ডিস্যান্টিস যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় কৌঁসুলি হিসেবে কাজ করেন। সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার স্মৃতিকথা ‘ড্রিমস ফ্রম মাই ফাদার’ এর ওপর ভিত্তি করে তিনি ২০১১ সালে তিনি ‘ড্রিমস ফ্রম আওয়ার ফাউন্ডিং ফাদারস’ নামে পুস্তক প্রকাশ করেন। এতে ওবামার বিরুদ্ধে ‘প্রগতিশীল এজেন্ডা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার’ অভিযোগ আনে ডিস্যান্টিস। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে তাঁর ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা ও তার দিকনির্দেশনার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

এরই এক বছর পরই ডিস্যান্টিস ২০১২ সালে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন এবং হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে একটি আসনে জয়ও পান। ট্রাম্পের সমর্থন নিয়ে ২০১৮ সালে ফ্লোরিডার গভর্নর হিসাবে নির্বাচনে জয়ী হন তিনি। এর পর ক্রমশ তারকা হয়ে উঠছেন ডিস্যান্টিস। বিশেষ করে তাঁর রক্ষণশীল অবস্থানের কারণে।

২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় বাধ্যতামূলক টিকা এবং মাস্কের তীব্র বিরোধিতা করে নজরে আসেন এই রিপাবলিকান। এমনকি দেশের অন্যান্য অনেক অঞ্চলের আগেই ফ্লোরিডায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং স্কুলগুলো পুনরায় খোলার অনুমতি দিয়েছিলেন তিনি।

এ বছরের শুরুর দিকে ডিস্যান্টিস কথিত ‘সমকামী বলবেন না’ বিলে স্বাক্ষর করেন, যা শ্রেণিকক্ষে সমকামী শিক্ষা বিষয় নিয়ে আলোচনা নিষিদ্ধ করে। এ ছাড়া রন ডিস্যান্টিস সম্প্রতি ডেমোক্রেটিক নেতৃত্বাধীন ম্যাসাচুসেটস রাজ্যের মার্থার ভিনইয়ার্ড আইল্যান্ডে বেশ কিছুসংখ্যক অভিবাসীকে পাঠিয়ে অনেক রিপাবলিকানদের প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন।


প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সমালোচনা এমনকি বয়স নিয়ে উপহাস করতেও ছাড়েননি ফ্লোরিডার এই গভর্নর। যদিও পরবর্তীতে হারিকেন ইয়ানের ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শনে প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানিয়ে অনেকটা রাজনৈতিক পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। প্রেসিডেন্টও গভর্নরের পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন। সবশেষ ৮ নভেম্বর মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট চার্লি ক্রিস্টের বিরুদ্ধে রন ডিস্যান্টিসের বিপুল ভোটে জয় তাঁকে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট পদের মনোনয়নের দৌড়ের সামনের সারিতে এগিয়ে নিয়ে গেছে।

এদিকে ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আবারও রিপাবলিকান পার্টির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর তাই মনোনয়নের দৌড়ে যেন শামিল না হন, সে জন্য সম্ভাব্য প্রার্থী রন ডিস্যান্টিসকে রীতিমতো হুমকি দিয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্যান্টিস যদি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করেন, তবে নিজের বড় ক্ষতি ডেকে আনবেন। আমি মনে করি না এটা দলের জন্য ভালো কিছু হবে।’ ট্রাম্প আরও বলেন, ফ্লোরিডার গভর্নর সম্পর্কে তাঁর কাছে এমন কিছু তথ্য আছে, যা খুব একটা আশাব্যঞ্জক হবে না।

যদিও রন ডিস্যান্টিসের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত কিছু বলা হয়নি। দ্বিতীয় মেয়াদে গভর্নর নির্বাচিত হয়ে দেওয়া বিজয়ী বক্তৃতায় ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ব্যাপারে কোনো আভাস দেননি তিনি।

মার্কিন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, রন ডিস্যান্টিসের কোনো ক্যারিশমাটিক ক্ষমতা না থাকলেও কর্মদক্ষতা ও দৃঢ়তা তাঁকে অনেক দূর নেবে। কে জানে, হয়তো বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশটির প্রেসিডেন্টও হতে পারেন এই রাজনীতিক। তথ্যসূত্র: এএফপি, বিবিসি, সিএনএন, নিউ ইয়র্ক টাইমস, দ্য গার্ডিয়ান

শেয়ার করুন