নিউইয়র্ক     রবিবার, ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মোদিকে যুক্তরাষ্ট্রের আলিঙ্গনের মূল্য

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৩ | ১০:২৬ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২৪ জুন ২০২৩ | ১০:৩৯ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
মোদিকে যুক্তরাষ্ট্রের আলিঙ্গনের মূল্য

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওয়াশিংটনে রাষ্ট্রীয় সফরের আগের দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা তাঁর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। এটা ভারতীয় নেতার সমর্থকদের উল্লসিত করেছে এবং তাঁর সমালোচকদের নিন্দা কুড়িয়েছে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী জিনা রাইমন্ডো এপ্রিল মাসে ওয়াশিংটনে ইন্ডিয়া হাউস ইভেন্টে সবুজ এবং হলুদ শাড়ি পরে এসেছিলেন আর বলছিলেন, ‘তিনি (মোদি) একটি কারণে সবচেয়ে জনপ্রিয় বিশ্বনেতা। তিনি অবিশ্বাস্য দূরদর্শী এবং ভারতের জনগণের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতার মাত্রা বর্ণনাতীত।’

মোদিকে ভারতের ‘গুরুজি’ এবং প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালকে ‘শুধু জাতীয় ধন নয়, আন্তর্জাতিক সম্পদ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন গত মাসে নয়াদিল্লিতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব নেওয়া এরিক গারসেটি। হিরোশিমায় গত মাসের জি৭ শীর্ষ সম্মেলনের সাইডলাইনে কোয়াড জোটের বৈঠকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ভারতীয় নেতা ‘খুব জনপ্রিয়’।

মহামারি-পরবর্তী সরবরাহ শৃঙ্খলে পরিবর্তন, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং চীন সম্পর্কে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের জন্য লালগালিচা বিছিয়ে দিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র শুধু একা নয়, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁও আগামী মাসের বাস্তিল দিবস প্যারেডে মোদিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এসব চমকপ্রদ প্রচারণা ভারতের উদারপন্থি অভিজাতদের হতাশ করেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলো মোদিকে আমন্ত্রণ জানানোর ক্ষেত্রে মানবাধিকার নীতিকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে সংখ্যালঘু মুসলিম ও খ্রিষ্টানদের প্রতি নয়াদিল্লির আচরণে উদ্বেগ, বেসরকারি সংস্থা এবং সাংবাদিকতার ওপর চাপ এবং গণতান্ত্রিক মানকে দুর্বল করা। এত কিছুর পরও ভারতকে তাদের প্রয়োজন।

সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের সিনিয়র ফেলো সুশান্ত সিং বলেছেন, ‘পশ্চিমা দেশগুলো ভারতে গণতান্ত্রিক মানের পতন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি আচরণ থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারণ তারা মনে করে, চীনকে মোকাবিলা করার জন্য তাদের ভারতকে প্রয়োজন। তারা বিশ্বাস করে, শক্তিশালী ভারত চীনের উত্থানের মোকাবিলা করবে।’

তবে শুধু ভারতের ক্ষেত্রেই ওয়াশিংটন মানবাধিকারের ওপর ভূরাজনৈতিক বিবেচনাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে না। চীনের বিরুদ্ধে ভিয়েতনামের সঙ্গে প্রতিরক্ষা বিষয়েও ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। যদিও চীনের প্রতিবেশী এ দেশটি একদলীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে। ইসরায়েলের দুর্বল মানবাধিকার রেকর্ড এবং বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর অধীনে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষয় সত্ত্বেও দেশটির প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশারী দ্বিদলীয় সমর্থন বিদ্যমান।

যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কের বিষয়ে র‍্যান্ড করপোরেশনের সিনিয়র প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ডেরেক গ্রসম্যান প্রশ্ন করেন, ‘আমরা কি এখানে একটি ক্রমবর্ধমান উদার গণতন্ত্রকে সমর্থন করছি? আমরা এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েছি যে, ভূরাজনীতি এবং চীনের বিরুদ্ধে লড়াই করা আমাদের কাছে এখন মূল্যবোধভিত্তিক কূটনীতির চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অথচ বাইডেন প্রশাসন বলেছিল, তারা মূল্যবোধভিত্তিক কূটনীতিকে অগ্রাধিকার দেবে।’

স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মতে, ভারত এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় অস্ত্রের ক্রেতা। ফ্রান্স ৩৬টি রাফায়েল যুদ্ধবিমান বিক্রির সুবাদে এখন রাশিয়ার পরে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম সামরিক সরবরাহকারী। যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে তৃতীয় অবস্থানে। এই অগ্রাধিকার থাকা সত্ত্বেও মার্কিন প্রশাসনের কিছু অংশ থেকে মানবাধিকার নিয়ে ভারতের কিছু সমালোচনা উঠে আসে।

শেয়ার করুন