নিউইয়র্ক     শনিবার, ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বর্নাঢ্য আয়োজনে ওজনপার্কে উদ্বোধন হলো বাংলা সিডিপ্যাপ ও অ্যালাগ্রা হোম কেয়ার ইনক’ ‘কাচারী ঘর’

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৩ | ১০:২০ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ২৮ মার্চ ২০২৩ | ০৭:০৫ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
বর্নাঢ্য আয়োজনে ওজনপার্কে উদ্বোধন হলো বাংলা সিডিপ্যাপ ও অ্যালাগ্রা হোম কেয়ার ইনক’ ‘কাচারী ঘর’

নিউইয়র্ক : নিউইয়র্ক সিটিতে বাংলাদেশী অধ্যুষিত ওজনপার্কে বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদ্বোধন হলো স্বাস্থসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলা সিডিপ্যাপ ও অ্যালাগ্রা হোম কেয়ার ইনক’র নতুন শাখা। ‘কাচারী ঘর’ নামের নতুন অফিস উদ্বোধন উপলক্ষ্যে গত ১৩ জানুয়ারী, শুক্রবার সন্ধ্যায় শাখাটিতে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আয়োজকদের দাবী এতে তিন শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশীর উপস্থিতি ভিন্ন মাত্রার যোগ করে।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশর গ্রামবাংলার ঐতিহ্য বৈঠকখানা তথা কাচারী ঘরের মতো এই প্রবাসেও বাংলা সিডিপ্যাপ ও অ্যালাগ্রা হোম কেয়ার ইনক’র অফিস হয়ে উঠবে প্রবাসী বাংলাদেশীদের আরেক ‘কাচারী ঘর’। যেখানে ভালোবাসার ছোঁয়ায় পাওয়া যাবে স্বাস্থ্য সেবা।

‘ভালোবাসার সাথে সেবা’ এই শ্লোগান নিয়ে ওজনপার্কে স্বাস্থসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলা সিডিপ্যাপ সার্ভিসেস ও অ্যালাগ্রা হোম কেয়ার ইনক’র নতুন শাখা ‘কাচারী ঘর’ নামের নতুন অফিস (১১২৭ লিবার্টি এভিনিউ) উদ্বোধন উপলক্ষ্যে ঐদিন সন্ধ্যায় শাখাটিতে এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশীর উপস্থিতি ভিন্ন মাত্রার যোগ করে।

পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের পর বিশেষ দোয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরুর পর নিউইয়র্কের বাংলাদেশী কমিউনিটিতে হোম কেয়ার সার্ভিস-এর পথিকৃত, বাংলা সিডিপ্যাপ সার্ভিসেস ও অ্যালাগ্রা হোম কেয়ার ইনক’র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রেসিডেন্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদের কর্মকান্ড ভিডিও’র মাধ্যমে তুলে ধরা হয়। এরপর নিউইয়র্কের বাংলা মিডিয়ার সম্পাদকদের সাথে নিয়ে ফিতা কেটে ‘কাচারী ঘর’ এর উদ্বোধন করেন আবু জাফর মাহমুদ।

‘কাচারী ঘর’ উদ্বোধনকালে আবেগ আপ্লুত কন্ঠে আবু জাফর মাহমুদ বলেন, ‘ভালোবাসার সাথে সেবা’ প্রদানই আমাদের লক্ষ্য। পরিবার থেকে যে ভালোবাসা-সেবা আমরা পেয়েছি তাই আমরা নিউইয়র্কের সকল প্রবাসীর মাঝে বিলিয়ে দিতে চাই। তিনি বলেন, হোম কেয়ার সার্ভিস শুধু ব্যবসাই নয়, এটা সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত সেবা।

অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ-এর কর্মকান্ড, সমাজসেবা, দেশপ্রেমের প্রশংসা করেন বিভিন্ন মিডিয়ার সম্পাদক সহ কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। এসময় অন্যান্যের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সাপ্তাহিক পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান, সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা’র সম্পাদক ও টাইম টিভি’র সিইও আবু তাহের, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান, সাপ্তাহিক জন্মভূমি সম্পাদক রতন তালুকদার, সাপ্তাহিক প্রবাস সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ, সাপ্তাহিক নবযুগ সম্পাদক শাহাব উদ্দিন সাগর, নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলওম্যান ‘বাঙালী কন্যা’ শাহানা হানিফ, প্রবীণ অভিনেতা আহমদ শরীফ, সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব হুমায়ুন কবীর, ডা. মনজুর আহমেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবর উদ্দিন, মনিরুল ইসলাম প্রমুখ। যৌথভাবে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনায় ছিলেন সাংবাদিক আদিত্য শাহীন এবং বাংলাদেশের সাবেক কৃতি শ্যূটার ও কমিউনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট এস এম ফেরদৌস।

এর আগে ইউএস হাউজের মাইনরিটি লীডার কংগ্রেসম্যান হাকিম জেফরিস প্রদত্ত সম্মাননা আবু জাফর মাহমুদের হাতে তুল দেন টাইম টিভি’র সিই এবং বাংলা পত্রিকার সম্পাদক আবু তাহের। এছাড়াও নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলম্যান শেখর কৃষ্ণান ও নিউইয়র্ক ষ্টেট অ্যাসেম্বলীওম্যান জেনিফার রাজকুমারের পক্ষ থেকে প্রদত্ত সম্মাননা আবু জাফর মাহমুদের হাতে একযোগে তুলে দেন উপস্থিত নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক পত্রিকাসমুহের সম্পাদকবৃন্দ ।

এদিকে বাংলা সিডিপ্যাপ ও অ্যালাগ্রা হোম কেয়ার ইনক’র থেকে প্রেরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে: ওজনপার্কের অফিস উদ্বোধন করে বাংলাদেশী সমাজের প্রিয় ব্যক্তিত্ব, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ বলেন, আমার সার্থকতা, বাংলাদেশে আমরা সবাই পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে সেবা ভালোবাসা ও পারস্পারিক সম্মানবোধ ও সামাজিক মূল্যবোধ শিখেছি। আমরা সেটিই বহন করে চলেছি। এই আমেরিকান সমাজ এখন আমাদের নিয়েই। আমাদের জন্মভূমিতে মানুষের প্রতি মানুষের যে ভালোবাসা ও কল্যাণকামনা, এটিই মানুষের মানবিক অস্তিত্ব। এই অস্তিত্ব নিয়েই বাংলাদেশী আমেরিকান সমাজ আমরা গড়ছি।

জনাব জাফর মাহমুদ বলেন, আমরা লড়াই করে একটা রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছি। যখন আমাদের পায়ে জুতো ছিল না, অস্ত্র দেখলেও ভয় পেতাম, সেই তরুণ যুবকরা যুদ্ধ করে রাষ্ট্র জন্ম দিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে সভ্য ও উন্নত দেশ আমেরিকায় এসেছি। এখানে আমাদের যা কিছু সুন্দর, যা কিছু, মানবিক তা নিয়ে এসে প্রমাণ করেছি, ভালোবাসা ছাড়া কোনো ‘কেয়ার’ বা যতœ নাই। আমাদের জন্মের সময় জীবন মৃত্যুর এক কঠিন চ্যালেঞ্জ পার করেন আমাদের মায়েরা। এই সত্য সবার জন্যই এক। জন্মের পর যারা আমাদের সেবা দিয়েছেন, আদর যতœ করেছেন, কোলে নিয়েছেন, তারা তো কেউ কোনো অর্থ নেননি। তাহলে কিসের বিনিময়ে তারা করেছেন? এটিই পারিবারিক মর্যাদা ও ভালোবাসার এক ঐতিহ্য। সেই ভালোবাসা ও মর্যাদাসহই আমরা এখানে এসেছি।

আবু জাফর মাহমুদ হোম নিউইয়র্ক শহরে বাংলাদেশীদের মাঝে হোম কেয়ার সেবার সূচনাকালের কথা তুলে ধরে বলেন, যখন হোম কেয়ার শুরু করেছি, নিউইয়র্ক স্টেট এর সিলেবাস নিয়ে কাজ করা শুরু করেছি। শিক্ষাক্ষেত্রে কাজ করেছি। প্রশিক্ষণের ভেতর একটি দিন আলাদা করে আমি প্রশিক্ষনার্থীদের পারিবারিক মূল্যবোধের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছি। এটিই তাদের প্রশিক্ষণ। এটি ছাড়া আমাদের সন্তানদের বাংলাদেশী রাখতে পারবো না। এটি ছাড়া পারিবারিক বন্ধন সুরক্ষা করতে পারবো না। এটি ছাড়া আমরা পরিবার প্রথা ধরে রাখতে পারবো না। আমাদের জাতিগত বৈশিষ্ট্য রক্ষা করেই আমেরিকার সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর যে প্রয়াস, সেটিকে আমি যুদ্ধ হিসেবে নিয়েছি। এসঙ্গে জনাব জাফর, পবিত্র ও হালাল উপার্জনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, হোম কেয়ারের একটি বাণিজ্যিক কার্যক্রম। আমরা বিশ্বাস করি, এটি অত্যন্ত কল্যানমুখী একটি উদ্যোগ। এখানে বাণিজ্য মহান ¯্রষ্ঠার সঙ্গে।

সতের বছর আগে আমি যে কার্যক্রম হাতে নিয়েছি, সেখানে ‘বাংলা’ নামটি রেখেছি। এটা আমার ভাষা ও সংস্কৃতি। এটি রক্ষা করে আজ এতদিন পরে মুক্তিযুদ্ধের বায়ান্ন বছরে এসে ঘোষণা দিয়েছি, আমার জাতির শ্লোগান হবে “জয় বাংলাদেশ”। এটিই আমাদের পরিচয়। এটিই তুলে আনতে হবে। আমাদের মুরুব্বিরা এই শ্লোগান না দিতে পারলেও এটি আমাদের দায়িত্ব। আমাদের পূর্বসূরি মুরুব্বিদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধার কোনো কমতি নেই।

অতীতের কোনো নেতা, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী তাদের সমালোচনা করা আমার উদ্দেশ্য হওয়া উচিৎ নয়। রাষ্ট্রকে ভালোবাসার, রাষ্ট্রের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান জানানোর প্রতিজ্ঞা যেহেতু আমাদের আছে, এই শক্তিশালী প্রত্যয়ই আমাদের অস্তিত্বগত সম্মান বাড়াবে। পৃথিবীর যেখানে যাই, আমরা বাংলাদেশী, আমেরিকায় আমরা বাংলাদেশী আমেরিকান।

নতুন অফিস পরিসরের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এটি আমাদের ‘কাচারি ঘর’। এখানে আপনারা যেকোনো অনুষ্ঠান করবেন। আপনাদের প্রয়োজনে ব্যবহার করবেন। এখানে বাণিজ্যের কোনো সম্পর্ক নাই। এখানে সপ্তাহে সাতদিন অবিরাম সেবা পাওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক লোকবল নিয়োগ করা হবে। ঘরে ঘরে গিয়ে বাংলা সিডিপ্যাপ ও অ্যালেগ্রা হোম কেয়ারের দায়িত্বশীলরা তাদের সেবা কার্যক্রম চালাবে। আপনাদের খোঁজ রাখবে, পাশে থাকবে।

তিনি স্থানীয় সম্পাদকবৃন্দ ও গণমাধ্যমের সকল সাংবাদিকদের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, তারা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে প্রবাসী জীবনের ভালোমন্দ তুলে ধরছেন। এটি তাদের শুধু ব্যবসা নয়, এটি তাদের ভালোবাসা ও দায়িত্ব। এখানে তারা অবিচল। তারা সবাই বাংলা সিডিপ্যাপ ও অ্যালেগ্রা হোম কেয়ারের কার্যক্রমের সঙ্গে একাত্ম হয়েছেন, এটি আমাদের অনেক বড় পাওয়া।

অনুষ্ঠানে সাম্পাদকবৃন্দ নিউইয়র্কে বাংলাদেশী সমাজে মানব সেবার প্রশ্নে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ ও তার হোম কেয়ার প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল ও স্বচ্ছ ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, তিনি এক বিস্ময়কর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। যা বাংলাদেশীদের জন্য অনন্য এক আশ্রয়। তারা বাংলা সিডিপ্যাপ ও অ্যালেগ্রা হোম কেয়ারের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি ও কর্মপরিধির বিস্তৃতি কামনা করেন। খবর ইউএনএ’র।

শেয়ার করুন