নিউইয়র্ক     বৃহস্পতিবার, ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ট্রাম্পের চেয়ে কঠোর অভিবাসননীতি চালু করছে বাইডেন

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৩ | ০১:১০ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১৪ মে ২০২৩ | ০২:৩৮ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
ট্রাম্পের চেয়ে কঠোর অভিবাসননীতি চালু করছে বাইডেন

মে মাসের ১১ তারিখ যুক্তরাষ্ট্রে শেষ হয়েছে ‘টাইটেল ৪২‘ নামের সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর চালু করা অভিবাসন বিধি। এর বদলে বর্তমানের বাইডেন প্রশাসন সেখানে চালু করেছে টাইটেল ৮ এর আওতায় কঠোর অভিবাসন বিধি।

বৃহস্পতিবার (১১মে) মধ্যরাতে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন বিধির এই পালাবদলের আগে শরণার্থীদের ভিড় উপচে পড়তে দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে। তবে নতুন এবং কঠোর অভিবাসন বিধি চালু করার কারণে ১১ মে-র পর যে হারে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে অভিবাসীদের প্রবেশের স্রোত আশঙ্কা করা হয়েছিল তা এখনো দেখা যায়নি। সীমান্তে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালে কোভিড মহামারির সময় যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রবর্তিত এই ‘টাইটেল ৪২’ বিধির বিকল্প হিসেবেই তুলনামুলক কঠোর অভিবাসন বিধি চালু করেছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন। ওই নতুন বিধি ঘোষণার পাশাপাশি সীমান্তে শরণার্থীদের ভিড় সামাল দিতে বাড়তি বাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের প্রধান আলেজান্দ্রো মেয়রকাস এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘যারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য আইনি পথ ব্যবহার করেননি, তারা এ বার আরও কঠিন পরিণতির জন্য তৈরি থাকুন।’ তিনি বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে প্রবেশ করে কেউ আর রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করতে পারবেন না, তৃতীয় কোন দেশ থেকে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করতে হবে। তাছাড়া একবার অবৈধ প্রবেশের পর কেউ যদি পুনরায় অবৈধ প্রবেশকালে ধরা পড়ে তখন তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সকল অভিবাসন সুবিধা কয়েক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়ে যাবে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে হাজির হওয়া শরণার্থীর সংখ্যা ৬০ হাজার পেরিয়ে গেছে বলে দাবি করা হচ্ছে। ক্ষমতায় আসার পরে ট্রাম্পের একাধিক নীতি বদলে ফেললেও জো বাইডেন ‘টাইটেল ৪২’ নীতিতে এত দিন পরিবর্তন আনেননি। যার জন্য বিভিন্ন দিক থেকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে তাকে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত স্পশর্কাতর বেআইনিভাবে সীমান্ত পেরোনো রুখতে এ বার কড়া পদক্ষেপের পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রসিডেন্ট বাইডেন। আমেরিকার দক্ষিণ সীমান্তে কড়া রোদের মধ্যে শুকনো বালুর বিরান ভূমিতে এখনই শত শত মানুষ শুধু এই আইন উঠে যাবার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। গত ৯ ই মে মঙ্গলবারই প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্বীকার করেছেন যে, “কিছু সময়ের জন্য সেখানে একটা বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে”। কারণ মেক্সিকো থেকে আমেরিকায় ঢোকার জন্য বহু মানুষের অপেক্ষা ধৈর্যের শেষ সীমায় পৌঁছে গেছে।

অভিবাসন কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে চালু হওয়া এই আইনের কড়া সমালোচনা করেছেন এবং কিছু কিছু ডেমোক্র্যাট সদস্য বলেছেন এই নীতির কারণে বহু আশ্রয়প্রার্থী আমেরিকায় ঢুকতে পারছেন না। অন্যদিকে, রিপাবলিকানরা এখনও যুক্তি দেখাচ্ছেন বেআইনিভাবে সীমান্ত পার হওয়া রুখতে এই আইনের প্রয়োগ এখনও বলবৎ রাখা উচিত। সীমান্তে বিশৃঙ্খলা তৈরির জন্য তারা দুষছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে। ফলে, ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে অভিবাসন ইস্যুতে এই আইন ক্রমশই তীব্র একটা বিতর্কের বিষয় হয়ে উঠছে।

ভাগ্য ফেরাতে সীমান্তে মানুষের ঢল

ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত, ক্লান্ত ও ভীত শত শত মানুষ এই মুহূর্তে জড়ো হয়ে অপেক্ষা করছে দুই দেশের মাঝখানে বিশালাকৃতি ইস্পাতের সীমান্ত বেড়ার পাশে- জানাচ্ছেন মেক্সিকোর সিউদাদ হুয়ারেজ থেকে বিবিসির উত্তর আমেরিকা সংবাদদাতা সারা স্মিথ। যে দেশে পৌঁছনর জন্য সর্বস্ব ত্যাগ করে এসেছেন, সেই দেশ তারা দেখতে পাচ্ছেন বেড়ার ফাঁক দিয়ে। কিন্তু এদের কেউই জানেন না তাদের শেষ অবধি ওই বেড়া পার হতে দেয়া হবে কিনা।

রোজারিও মেডিনা বিবিসির সারা স্মিথকে জানালেন যে আবর্জনার স্তুপ ঘেঁটে তিনি তার নাতিনাতনিদের জন্য খাবার জোগাড় করছেন। শিশুদের বোতলে খাওয়ানোর পানি আনছেন দূষিত রিও গ্র্যান্ডে নদী থেকে। গত আট দিন ধরে সীমান্তে বসে আছেন তিনি। তাদের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে তার চোখ উপছে পানি গড়িয়ে পড়ল। সূর্যের প্রচণ্ড তাপে বাচ্চাদের ঠোঁটে ফোস্কা পড়ে গেছে। প্রথমে পায়ে হেঁটে দুর্গন্ধময় নদী পার হয়ে, তারপর ধুলাবালির মধ্যে ধারালো ছুরির ফলা বসানো তারের বেড়ার ছোট্ট এক ফাঁক গলে অন্য পাশে পৌঁছে মিজ স্মিথ শোনেন এইসব অভিবাসন প্রত্যাশীদের যাত্রাপথের ভয়াবহ কাহিনি।

মিলেক্সি গোমেজ তাকে জানান তিনি এসেছেন ভেনেজুয়েলা থেকে। গহীন ও অজানা অরণ্যের মধ্যে দিয়ে চার সন্তানকে নিয়ে পায়ে হেঁটে পথ পাড়ি দিয়েছেন – তাদের কোলে নিয়ে পার হয়েছেন খাড়া পাহাড়, ট্রেনের টিকিট কেনার সামর্থ্য না থাকায় তাদের নিয়ে লাফ দিয়ে চড়েছেন ট্রেনের ছাদে। এখন ধুলাকাদার মধ্যে ঘুমাচ্ছেন তারা সবাই। তার দুই যমজ ছেলের সর্দিজ্বর ব্রঙ্কাইটিসে রূপ নিতে পারে বলে তার আশংকা। “আমরা চরম কষ্টের মধ্যে কাটাচ্ছি,” তিনি বলছেন। “রাতে প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় ঘুমাতে পারি না, খাবার পয়সা নেই, ধোয়ামোছার কোন ব্যবস্থা নেই। বারবার ঈশ্বরকে ডাকছি- বাচ্চাদের এখানে কীভাবে বাঁচিয়ে রাখব!”

সাথী/পরিচয়

শেয়ার করুন