নিউইয়র্ক     রবিবার, ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইলন মাস্কের সফলতার গল্প

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৩ | ১১:৩২ অপরাহ্ণ | আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৩ | ১১:৩২ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
ইলন মাস্কের সফলতার গল্প

উদ্যোক্তাদের জন্য তার পরামর্শ, সফলতার কোনো শর্টকার্ট রাস্তা নেই। সফল হতে পরিশ্রম করতে হবে এবং নিজের লক্ষ্য অটুট থাকতে হবে। একজন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিত ইলন মাস্ক। বেশ কয়েক বছর ধরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন। তার ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব বিস্মিত করার মতো। স্পেসএক্স প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসেন ইলন মাস্ক। ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে তিনি এমন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন যে, এখন বিল গেটস, স্টিভ জবসসহ অন্যদের সঙ্গে তাকে তুলনা করা হয়। ইলন মাস্কের এই পথচলার গল্প বলতে চাই।

ইলন মাস্ক ১৯৭১ সালের ২৮ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। তার বাবা একজন সফল প্রকৌশলী ছিলেন। তার মা ছিলেন মডেল ও পুষ্টিবিদ। তার ভাই কিম্বল মাস্ক একজন পরিবেশবাদী ও ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট। বোন টোসকা মাস্ক পুরষ্কার বিজয়ী পরিচালক ও প্রযোজক।

ইলন মাস্ক স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে প্রায় এক বছর আগে স্কুলজীবন শুরু করেন। তার স্কুলজীবন শুরু হয় ওয়াটারক্লুফ হাউস প্রিপারেটরিতে। সেখান থেকে পরে প্রিটোরিয়া বয়েজ হাইস্কুলে যান। ইলন মাস্কের বয়স যখন ১০ বছর তখন তার বাবা-মায়ের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। তিনি অনেক মেধাবী হলেও স্কুলে তাকে বেশ কঠিন সময় পার করতে হয়েছিল। তার আফ্রিকান সংস্কৃতির খুব কম বন্ধু আছে। বড় হয়েও তিনি অনেক প্রতিকূলতার মুখে পড়েন। তবে তিনি মেনে নিয়েছিলেন, জীবনে বড় হতে হলে প্রতিকূলতা আসবেই।

হাইস্কুল জীবন শেষে ইলন মাস্ক পদার্থবিজ্ঞান ও অর্থনীতিতে আগ্রহী হন। তিনি কানাডার কুইন্স ইউনিভার্সিটিতে দুই বছর পড়াশোনা করেন। এই দুই বছর পর পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যান। সেখানে তিনি দুটি মেজর বিষয়ে ডিগ্রি নেন। ইলন মাস্ক পেনসিলভেনিয়ার ওয়ার্টন স্কুল থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি অর্থনীতিতে ব্যাচেলর অব আর্টস ডিগ্রি অর্জন করেন। এই দুটি ডিগ্রি ইলনকে তার ক্যারিয়ার গড়তে সহায়তা করেছিল। এগুলো তাকে কয়েকটি ব্যবসায়িক ধারণা ও ধারণাগুলোর সাফল্য পরিমাপে সহায়তা করেছিল।

মাস্কের বয়স যখন ২৪ বছর তখন তিনি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলিত পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি করতে ক্যালিফোর্নিয়া চলে যান। সেখানে বেশ আগ্রহ নিয়েই পিএইচডি প্রোগ্রাম শুরু করেছিলেন। কিন্তু, মাত্র ২ দিনের মধ্যে বাদ দেন। মূলত সিলিকন ভ্যালিতে ইন্টারনেটের উত্থানের কারণে তিনি পিএইচডি ছাড়েন। তারপর উদ্যোক্তা হিসেবে ইন্টারনেটের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে দুর্দান্ত আইডিয়ার বিকাশ করতে শুরু করেন।ইলন মাস্ক বেশ কয়েকটি ব্যবসায়ী উদ্যোগ নিয়েছিলেন। যেগুলো থেকে তিনি সফল হন।

জিপ২

১৯৯৫ সালে ইলন মাস্ক ও তার ছোট ভাই কিম্বল মাস্ক জিপ২ নামে একটি কোম্পানি শুরু করেন। জিপ২ সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠানের কাছে লাইসেন্সযুক্ত সফটওয়্যার সরবরাহ করত। ১৯৯৯ সালে কমপ্যাক কম্পিউটার করপোরেশনের কাছে ৩০০ মিলিয়ন ডলারে জিপ২ বিক্রি করে দেন মাস্ক। এই বিক্রি মাস্কের জন্য নতুন সম্ভাবনা খুলে দিয়েছিল এবং তিনি এক্স.কম শুরু করেন।

এক্স.কম

হ্যারিস ফ্রিকার, এড হো এবং ক্রিস্টোফার পেইনের সঙ্গে ইলন মাস্ক এক্স.কম প্রতিষ্ঠা করেন। এটি একটি অনলাইন ব্যাংক ছিল। এই প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়িক মডেলটি তার সময়ের জন্য নতুন উদ্ভাবন ছিল। যা পরে কনফিনিটি ইনকরপোরেটেডের সঙ্গে একীভূত হয়। এই একীভূত হওয়ার মাধ্যমে আরও একটি দুর্দান্ত প্রতিষ্ঠান চালু হয়েছিল পেপাল।

পেপাল

এক্স.কম কনফিনিটি ইনকরপোটেড এক হয়ে পেপালের জন্ম হয়। পেপাল অনলাইন পেমেন্টের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মগুলোর একটি। পেপাল তার সবচেয়ে সফল কোম্পানির একটি হতে যাচ্ছিল। কিন্তু, কনফিনিটির সহপ্রতিষ্ঠাতা পিটার থিয়েলসহ মাস্ক ও অংশীদাররা ২০০২ সালে এটিকে ১.৫ বিলিয়ন স্টক ডিলের জন্য ই-বেতে বিক্রি করে দেন। পেপালকে একপর্যায়ে ১৯৯৯ সালের ‘সবচেয়ে বাজে ব্যবসায়িক আইডিয়া’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। ২০০০ সালে হানিমুনে থাকাকালীন মাস্ককে সিইও পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

টেসলা মোটরস

পেপাল থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর ইলন মাস্ক ভবিষ্যতের বৈদ্যুতিক গাড়ির দিকে দৃষ্টি দেন। তিনি টেসলার জন্য অর্থ সংগ্রহ করেন এবং ২০০৩ সালে কোম্পানিটি চালু করেন। টেসলা মোটরসের মূল লক্ষ্য ছিল অটোমোটিভ শিল্পকে জ্বালানি ব্যবহার থেকে বের করে সবুজ শক্তিতে পরিণত করা। অবশেষে টেসলার প্রথম বৈদ্যুতিক গাড়ি চালু হয়। ২০০৮ সাল থেকে ইলন মাস্ক টেসলার সিইও। টেসলার মডেল-৩ বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় বৈদ্যুতিক গাড়ি। বিশ্বব্যাপী প্রায় এক মিলিয়নেরও বেশি বিক্রি হয়েছে।

স্পেসএক্স

ইলস মাস্কের আরেকটি প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স। এই প্রতিষ্ঠানের রকেট ডিজাইনের জন্য তিনি মার্কিন বিমান বাহিনী এবং নাসার সঙ্গে বড় চুক্তি করেছিলেন। তিনি সামরিক মিশন পরিচালনার প্রকল্পও গ্রহণ করেন। ২০২৫ সালের মধ্যে মাস্ক নাসার সহায়তায় মহাকাশে একজন নভোচারী পাঠানোর পরিকল্পনা করছেন। গত ২০ বছরে স্পেসএক্স রকেট উৎক্ষেপণের ব্যর্থতা ও স্টারশিপ বিস্ফোরণের ঘটনা মোকাবিলা করেছে। স্পেসএক্সের নাম বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানটি মূলত পুনরায় ব্যবহারযোগ্য রকেটের জন্য পরিচিত হয়ে উঠেছে।

সোলারসিটি

২০০৬ সালে মাস্কের চাচাতো ভাইয়েরা মিলে প্রতিষ্ঠা করেন সোলারসিটি। এই প্রতিষ্ঠানে মাস্ক পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন, তিনি ছিলেন তাদের প্রধান আর্থিক সহায়তাকারী। এটি একটি সৌর শক্তি কোম্পানি, ২০১০ দশকের মাঝামাঝিতে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ আবাসিক সোলার কোম্পানি হয়ে ওঠে। কোম্পানিটি সৌর শক্তি সিস্টেম চালু করে আবাসিক ব্যবহারকারীদের ইজারা দিয়েছিল। মাস্ক টেসলার মাধ্যমে ২০১৬ সালে সোলারসিটিকে ২.৬ বিলিয়ন ডলারের স্টকের বিনিময়ে কিনে নেন। পরে টেসলা এনার্জি নামে তার কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করেন।

টুইটার

২০২২ সালে ৪৪ বিলিয়ন ডলারে টুইটার কেনার উদ্যোগ নেন ইলন মাস্ক। পরে দীর্ঘ ছয় মাস নানান নাটকীয়তার শেষে টুইটারের নিয়ন্ত্রণ নেন ইলন মাস্ক।এছাড়াও মাস্ক ২০১৫ সালে অলাভজনক সংস্থা ওপেনএআই প্রতিষ্ঠা করেন, ২০১৬ সালে তিনি নিউরালিংক এবং বোরিং কোম্পানি প্রতিষ্ঠান করেন।

যাই হোক, ইলন মাস্ক একজন সফল ব্যবসায়ী। তিনি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছেন। উদ্যোক্তাদের জন্য তার পরামর্শ, সফলতার কোনো শর্টকার্ট রাস্তা নেই। সফল হতে পরিশ্রম করতে হবে এবং নিজের লক্ষ্য অটুট থাকতে হবে। সূত্র: টাইমস, বিজনেস ইনসাইডার, সিইও টুডে

শেয়ার করুন