নিউইয়র্ক     বুধবার, ১৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মার্কিন ঋণমান কমালো ফিচ রেটিংস, ক্ষুব্ধ যুক্তরাষ্ট্র

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২৩ | ১২:২৬ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০৩ আগস্ট ২০২৩ | ১২:২৬ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
মার্কিন ঋণমান কমালো ফিচ রেটিংস, ক্ষুব্ধ যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমান হ্রাস করেছে আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ধারণকারী সংস্থা ফিচ রেটিংস। তবে যে তথ্যের ভিত্তিতে ঋণমান হ্রাস করেছে সংস্থাটি তার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী জেনেট ইয়েলেন দ্বিমত পোষণ করেছেন। একইসঙ্গে বিনিয়োগকারীরাও বিস্মিত হয়েছেন। এছাড়া ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী তিন বছর যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক পরিস্থিতির অবনতি হবে এমন আশঙ্কা করে আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ধারণকারী সংস্থা ফিচ রেটিংস যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমান ‘এএএ’ থেকে হ্রাস করে ‘এএপ্লাস’ করেছে। তবে মাসখানেক আগে জাতীয় ঋণের সীমা বৃদ্ধির আলোচনা যেভাবে শেষ মুহূর্তে গড়াল, তা দেশটির জন্য ভালো হয়নি।

নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদী ক্রেডিট রেটিং মঙ্গলবার ফিচ রেটিং এজেন্সি কমিয়েছে, সংস্থাটি বলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ এবং ক্রমবর্ধমান ঋণের বোঝা এবং অর্থ ধার নেয়ার দেশটির কর্তৃত্বের উপর খামখেয়ালীপনা ও আর্থিক ব্যবস্থাপনার উপর আস্থা নষ্ট করেছে।

রয়টার্সের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, রেটিংস গত মে মাসেই এমন আভাস দিয়েছিল। তবে ঋণসীমা বৃদ্ধি নিয়ে জটিলতার অবসান হলে জুন মাসে তারা আগের অবস্থানই ধরে রাখে। যদিও তখনই তারা বলেছিল, বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমান চূড়ান্ত করা হবে। ফিচের এই ঘোষণার পর স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বের বিভিন্ন মুদ্রার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দর কমেছে। স্টক ফিউচার্স সূচক কমেছে, যদিও ট্রেজারি ফিউচার্স সূচক বেড়েছে।

ফিচ রেটিংস এক বিবৃতিতে বলেছে, গত ২০ বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শাসন ব্যবস্থার মান কমেছে। রাজস্ব ও ঋণের ক্ষেত্রেও তার প্রভাব দেখা গেছে, যদিও জুন মাসে দেশটির সরকার ও বিরোধী দল ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ঋণের বর্তমান সীমা স্থগিত করতে সম্মত হয়েছে। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী জেনেট ইয়েলেন এর বিবৃতিতে বলেন, ফিচের এই সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক এবং পুরোনো তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে তা করা হয়েছে।

হোয়াইট হাউসও একই কথা বলেছে। তারা ফিচের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে অত্যন্ত জোরালোভাবে দ্বিমত পোষণ করেছে। হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারিন জঁ পিয়েরে বলেন, ফিচের এই প্রতিবেদনে বাস্তবতা অস্বীকার করা হয়েছে; এমন এক সময়ে এই অবনমন তারা করল, যখন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র বৃহৎ অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

এর আগে ২০১১ সালে এসঅ্যান্ডপি একইভাবে ঋণের সীমা নিয়ে ঐকমত্য হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমান হ্রাস করে ‘এএ প্লাস’ করেছিল। এখনো তারা সেটা ধরে রেখেছে। সেবার যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্টক মার্কেটে শেয়ারের দরপতন হয়। তখন ইউরো অঞ্চলেও আর্থিক সংকট চলছিল। এবার তেমন কিছু নেই। তাই এবার বড় ধরনের সমস্যা হবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তারা মনে করছেন, এর প্রভাব তেমন একটা গুরুতর ও হবে না।

বিশ্লেষকেরা রয়টার্সকে বলছেন, ফিচের এই ঋণমান অবনমনের সিদ্ধান্ত বোঝা যায়, জাতীয় ঋণসীমা বৃদ্ধি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল, তার জেরে দেশটির ভাবমূর্তি কতটা বিনষ্ট হয়েছে। একদম শেষ মুহূর্তে এই ঋণসীমা স্থগিত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। তা না হলে দেশটি ঋণখেলাপি হয়ে যেত, যদিও তারা ইতিহাসে এখন পর্যন্ত ঋণখেলাপি হয়নি।

মিঝুহো সিকিউরিটিস ইউএসএর প্রধান অর্থনীতিবিদ স্টিভেন রিচুইতো বলেন, এ ঘটনায় বোঝা যায়, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ব্যয় সমস্যাজনক। ফিচ বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের দুই দলের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে ঋণসীমা স্থগিতের বিষয়ে শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত হওয়ার কারণে দেশটির আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মানুষের আত্মবিশ্বাস বিনষ্ট হয়েছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, সামগ্রিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী অবস্থান বজায় থাকবে, কিন্তু দেশটির ভাবমূর্তিতে কালো দাগ পড়েছে। নোবেল বিজয়ী মার্কিন অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যান মনে করছেন, গত এক বছরে অর্থনীতির জগতের সবচেয়ে বড় খবর হলো, মন্দার কবলে না পড়েও যুক্তরাষ্ট্র মূল্যস্ফীতি উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়েছে।

প্রসঙ্গত, একটি সাধারণ পরিমাপের মাধ্যমে, ফিচের পদক্ষেপ আমেরিকার ক্রেডিট রেটিংকে কেবল রেটিং এজেন্সির নিজস্ব মূল্যায়নের অধীনেই নয়, তিনটি বৃহত্তম সংস্থার মিশ্রিত রেটিংকেও কমিয়ে দেয়। আর বিশ্বের ওই তিনটি বড় ঋণমান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান ফিচ রেটিংস, মুডিস ও এসঅ্যান্ডপি।

শেয়ার করুন