নিউইয়র্ক: জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশী বিজনেস এসোসিয়েশন এনওয়াই (জেবিবিএ)’র উদ্যোগে আয়োজিত ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী উদযাপন এবং আজিমুশ্বান ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিলে বক্তারা বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) জীবনের আলোকে নিজেদের গড়ে তোলার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, তাঁর আদর্শ মেনে চললে সমগ্র মানব জাতি যেমন ভালো থাকবে, তেমনী পৃথিবীও সুন্দর হবে। বক্তারা বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম, আর মুহাম্মদ (সা:) শান্তির দূত। বক্তারা বলেন, পৃথিবীর অশান্তি দূর করতে হলে মহানবীর জীবনাদর্শ, নিয়ম-নীতি মেনে চলতে হবে, এর কোন বিকল্প নেই।
পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী উদযাপন উপলক্ষ্যে সিটির জ্যাকসন হাইটসস্থ নবান্ন পার্টি সেন্টারে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই মাফিলের আয়োজন করা হয়। ধর্মীয় আবেশে আয়োজিত ব্যতিক্রমী এই মাহফিলে দেশ-বিদেশ ও প্রবাসের বিশিষ্ট ইসলামিক স্কলারগণ বক্তব্য রাখেন।
নিউইয়র্কের উডসাইডস্থ আহলুল বায়ত মিশন মসজিদের খতিব ও ইমাম এবং ইন্টারন্যাশনাল ইমাম কাউন্সিল, নর্থ আমেরিকার আহ্বায়ক মুফতী ড. সাঈয়্যেদ মুতাওয়াক্কিল রব্বানী (বদরপুরী)-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মাহফিলে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্ণর মুফতি ড. আল্লামা কফিল উদ্দিন সরকার সালেহী। এছাড়াও গেস্ট অব অনার ছিলেন কারী শাইখ আহমাদ বিন ইউসূফ আল আজহারী এবং প্রধান বক্তা ছিলেন ব্রুকলীনের বেলাল মসজিদের ইমাম ও খতিব মুফতি সৈয়দ আনসারুল করিম আজহারী।
বিশেষ অতিথি ছিলেন মূলধারার রাজনীতিক এটর্নী মঈন চৌধুরী, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাওলানা মুহাম্মদ এমদাদুল হক, মোহম্মদী সেন্টারের পরিচালক ইমাম কাজী কাইয়্যুম, আমেরিকায় মদীনার আলো’র সম্পাদক মুহাম্মদ আব্দুল ওয়াহিদ টুপন ও কমিউনিটি লীডার ও রাজনীতিক মাওলানা ওয়ালিউল্লাহ আতিকুর রহমান।
যৌথভাবে মাহফিল পরিচালনা করেন জেবিবিএ’র সভাপতি গিয়াস আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক তারেক হাসান খান। মাহফিলে অতিথিবৃন্দ ছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন জার্মানীর বার্লিনের বায়তুল মোকাররম মসজিদের ইমাম ও খতিব আলহাজ মাওলানা হেলাল উদ্দিন সিরাজী, নিউইয়র্কের পার্কচেষ্টার জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা জুবায়ের রাশীদ, জ্যাকসন হাইটস ইসলামিক সেন্টারের ইমাম ও খতিব আলহাজ মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুস সাদিক, এস্টোরিয়ার আল আমীন মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি জয়নাল আবেদীন প্রমুখ। মাহফিলের শুরুত পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত এবং নাশিদ পরিবেশন করেন কারী মুহাম্মদ হাসান বিন খুরশীদ ও হাফেজ মুহাম্মদ টিপু রাহমান।
মাহফিলে বক্তারা বলেন, যে মানুষটির জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা সমগ্র পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, যিনি তাঁর প্রিয় বন্ধু, সমগ্র মানব জাতির জন্য রহমত সেই মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) তাঁর তুলনা তিনি নিজেই। তাঁকে সম্মান জানানো মানেই আল্লাহতায়ালাকে সম্মান জানানো। বক্তারা বলেন, মহানবী (সা:) এমন সময়ে পৃথিবীতে আসেন যখন ছিলো অন্ধকার যুগ, মানুষে মানুষে ছিলো বিভেদ-বিভক্তি, হানাহানি-মারামারি, অনিয়ম-অত্যাচার, ব্যাভিচার। সেই অন্ধকার যুগ থেকে তিনি মানুষকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনেন। মানুষের জীবনকে সুন্দর করে তুলেন। আর তাই তাঁর তুলনা তিনি নিজেই, তিনিই দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ মানুষ।
বক্তারা মহনবীর (সা:) জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, তিনি তাঁর জীবনাচার দিয়ে প্রমান দিয়েছেন ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলামে নারীদের মর্যাদা সর্বোচ্চ। বক্তারা বলেন, জগত বিখ্যাত ব্যক্তিরা মহানবীর জীবন নিয়ে গবেষণা করেছেন, তাঁকে জেনেছেন, তাঁকে নিয়ে কোন বিতর্ক তুলেননি। সেই নবীর জীবনী সবারই জানা উচিৎ এবং তাঁর জীবনাচারের আলোকে নিজেকে গড়ে তুলতে পারলেই প্রকৃত মানুষ হওয়া সম্ভব। বক্তারা বলেন, ইহকাল ও পরকালে শান্তি পেতে হলে ইসলামের আলোকেই জীবন পরিচালিত করতে হবে।
মাহফিলে বক্তারা পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে মিল্লাদুন্নবী পালন করা, না করার উপর বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে বলেন, প্রকৃত অর্থে আমরা না বুঝা আর অনুধাবন না করার কারনেই মিলাদ পড়া নিয়ে তর্ক-বিতর্ক করছি। অনেকেই কোরআন-হাদিসের মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে নিজেরা যেমন বিভ্রান্ত হচ্ছি তেমনী, অন্যদেরকেও বিভ্রান্ত করছি। বক্তারা সকল ভেদাভেদ ভুলে সমগ্র মুসলিম উম্মাহ-কে এক ছাড়ার তলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ারও আহ্বান জানান।
মাহফিলটি সফল করতে আসিফ বারী টুটুল-কে আহ্বায়ক ও মোল্লা মাসুদ-কে সদস্য সচিব করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সহ বিপুল সংখ্যক ধর্মপ্রাণ মুসল্লী মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন। নারীদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা ছিলো। খবর ইউএনএ’র।