নিউইয়র্ক     শুক্রবার, ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাইডেনের বাড়ীর গ্যারেজে আরও ক্ল্যাসিফাইড নথির সন্ধান, রিপাবলিক শিবিরে উল্লাস

ট্রাম্পের গর্তে বাইডেন

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৩ | ০২:২৮ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২৩ | ০৬:০২ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
ট্রাম্পের গর্তে বাইডেন

পরিচয় রিপোর্ট এ পর্যন্ত দুই দফায় সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসনে ভাইস-প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন জো বাইডেনের ক্লাসিফায়েড নথির সন্ধান পাওয়ায় সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক ঝড় শুরু হয়েছে। এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে একজন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও সাবেক প্রেসিডেন্ট এর দায়িত্ব পালনকালীন সময়ের কিছু বিশেষায়িত নথিপত্র নির্ধারিত স্থানে সংরক্ষিত হওয়ার পরিবর্তে অন্যত্র পাওয়া যাওয়র বিষয়ে তদন্তের জন্য বিশেষ কৌসুলীর নিয়োগ দিায়েছে বিচার বিভাগের প্রধান অ্যাটর্নি জেনারেল মেরিক গারল্যান্ড।

স্পীকার কেভিন ম্যাকার্থীর নেতৃত্বে রিপাবলিকান পার্টির কংগ্রেস সদস্যরাও এ বিষয়ে তদন্তের জন্য জুডিসিয়ারী কমিটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ওহাইয়ো থেকে নির্বাচিত কংগ্রেস সদস্য জিম জর্ডান কংগ্রেসে তদন্ত দলের নেতৃত্ব দেবেন।

২০২১ সালে ক্ষমতা ছাড়ার পর ট্রাম্পের ফ্লোরিডার মার-এ-লাগো বাড়ি থেকে ক্ল্যাসিফাইড নথিপত্রের প্রায় ৩০০ ফাইল উদ্ধার করে এফবিআই। এটা নিয়ে তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এ ইস্যুতে ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পকে নানাভাবে ঘায়েল করতে চেষ্টা করেছেন। এ পর্যন্ত দুই জায়গায় বাইডেনের ক্ল্যাসিফাইড নথিপত্র পাওয়া যাওয়ায় ট্রাম্পের গর্তে বাইডেনের পড়ে যাওয়ার খবরে উল্লসিত রিপাবলিকানরা।

গত বছর সেপ্টেম্বরে সিবিএস নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পের বাড়ি থেকে ক্ল্যাসিফাইড নথিপত্র উদ্ধার নিয়ে বাইডেন মন্তব্য করেন, ‘এত গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষ কীভাবে এতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন হতে পারেন?’ বাইডেনের রাজনীতির সেই খোঁচা এখন নিজের দিকেই উল্টে ফিরে আসছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে। অনেকটা ট্রাম্পের গর্তে প

পেন বাইডেন সেন্টার থেকে উদ্ধার নথি নিয়ে মেক্সিকোয় এক সংবাদ সম্মেলনে মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) বাইডেন মন্তব্য করেন, ‘ওইসব নথি সম্পর্কে আমার কোনো ধারণাই ছিল না। তবে ভালো যে সংশ্লিষ্টরা ওই নথিগুলো দ্রুত জাতীয় মহাফেজখানায় জমা দিয়েছেন।’

বাইডেনের কার্যালয়ে নথিপত্রের সন্ধান পাওয়ার ঘটনাটি সোমবার (৯ জানুয়ারি) গণমাধ্যমে আসে। এর পরপরই নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ ট্রাম্প লেখেন, ‘এফবিআই জো বাইডেনের বাসাবাড়িতে কবে তল্লাশি চালাবে, আমি সেই অপেক্ষায় আছি। হোয়াইট হাউসেও কি তল্লাশি চালানো হবে? রিপাবলিকান পার্টির সিনেটর জোশ হাওলি বুধবার টুইট করেন, ‘হুম, সাধু সাবধান! সব তদন্ত করা হবে।’

বাইডেনের একটি ব্যক্তিগত কার্যালয়ে গত নভেম্বরে ১০টি ক্ল্যাসিফাইড নথিপত্রের সন্ধান পাওয়া যায়। হোয়াইট হাউসের এক মাইল দূরে পেন বাইডেন সেন্টার ফর ডিপ্লোমেসি অ্যান্ড গ্লোবাল অ্যাংগেজমেন্ট নামের একটি গবেষণাকেন্দ্র রয়েছে। ওই কেন্দ্রে ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বাইডেনের একটি কার্যালয় ছিল, যেখানে তিনি নিয়মিত বসতেন। নভেম্বরে কার্যালয়টি পরিষ্কার করতে গিয়ে ক্ল্যাসিফাইড নথিপত্রের ওই বক্সটি পাওয়া যায়। গত ৮ নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনের কয়েক দিন আগেই ওই ফাইলগুলো পাওয়া গেলেও বিষয়টি আলোর মুখ দেখে এ সপ্তাহে। পরে তা দেশটির জাতীয় মহাফেজখানায় জমা দেওয়া হয়। ইউক্রেন, ইরান ও বৃটেন সংক্রান্ত ব্রিফিং আছে তার মধ্যে। তবে ওই ফাইলগুলোর মধ্যে পারমাণবিক প্রকল্প বা পরিকল্পনাসংক্রান্ত কোনো কিছু নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা।

দ্বিতীয় দফায় ক্ল্যাসিফাইড নথি পাওয়ার বিষয়টি গত বুধবার (১১ জানুয়ারি) জনসম্মুখে আনে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজ। এনবিসি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাইডেনের সাবেক আরেকটি কার্যালয়েও আরও কিছু ক্ল্যাসিফাইড নথির সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে ওই কার্যালয়ের সুনির্দিষ্ট ঠিকানা, নথির ফাইলের সংখ্যা ইত্যাদি জানা যায়নি।

বিচার বিভাগ ও এফবিআইয়ের একটি বিশেষ দল ওসব নথিপত্র নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। নথিপত্রগুলো বিস্তারিত খতিয়ে দেখতে অ্যাটর্নি জেনারেল মেরিক গারল্যান্ড সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন বলে। বিচার বিভাগ ও এফবিআই কেউ নথিপত্রগুলো নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

বাইডেনের সাবেক কার্যালয়ে সন্ধান পাওয়া ক্ল্যাসিফাইড নথি নিয়ে শুরু থেকে রক্ষণশীল আচরণ করছে হোয়াইট হাউস। গত ১২ জানুয়ারী বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কারিন জিন-পিয়ের বলেন, ‘আমি জানি পেন বাইডেন সেন্টারের ক্ল্যাসিফাইড নথি নিয়ে আপনাদের অনেক প্রশ্ন আছে। কিন্তু এ বিষয়ে আমার নতুন কিছু বলার নেই। বাইডেন যা বলেছেন, তা-ই মূল কথা।’

বিশেষ কর্তৃত্বের অধীনে এসব গোপন ডকুমেন্ট জনগণের হাতে যাওয়া আইন দ্বারা সীমাবদ্ধ। এসব ডকুমেন্ট কিভাবে রাখা হয় এবং সংরক্ষিত থাকে সে বিষয়ে আইন আছে। কোনো একটি প্রশাসনের মেয়াদ শেষে গোপনীয় ফাইল সহ হোয়াইট হাউজের সব রেকর্ড চলে যায় ইউএস ন্যাশনাল আর্কাইভসে। নতুন করে যে ‘ব্যাচের’ সন্ধান মিলেছে, সে বিষয়ে হোয়াইট হাউজ কোনো মন্তব্য করেনি। ১২ জানুয়ারী বুধবার নিয়মিত ব্রিফিংকালে জো বাইডেনের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারিন জ্যাঁ-পিয়েরে প্রথম দফা ডকুমেন্ট নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, এসব আইন মন্ত্রণালয়ের রিভিউয়ের অধীনে রয়েছে। আগের দিন প্রেসিডেন্ট যা জানিয়েছেন তার চেয়ে বেশি আমি কিছু বলতে পারবো না।

ফক্স নিউজ জানিয়েছে, এই নথি পাওয়া নিয়ে বাইডেনকে একাধিক প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। তবে সেসব প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। গত ৯ জানুয়ারী সোমবার এক সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেন, আপনার কার্যালয়ে রাষ্ট্রীয় গোপন নথি উদ্ধার নিয়ে আপনার কোনো প্রতিক্রিয়া আছে কিনা? এই প্রশ্ন শুনে বাইডেন ওই সাংবাদিকের দিকে তাকান কিন্তু কোনো উত্তর দেয়া থেকে বিরত থাকেন।

সাথী /পরিচয়

শেয়ার করুন