নিউইয়র্ক     রবিবার, ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সাধারণ সভায় নির্বচিত সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলামকে অব্যাহতি, অর্থ আদায়ে আইনগত ব্যবস্থা

পরিচয় রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৩ | ০১:০৬ অপরাহ্ণ | আপডেট: ১৭ জুন ২০২৩ | ০১:২২ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সাধারণ সভায় নির্বচিত সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলামকে অব্যাহতি, অর্থ আদায়ে আইনগত ব্যবস্থা

নজিরবিহীন কড়া নিরাপত্তায় গত ১১ জুন রবিবার কম্যুনিটির অন্যতম বৃহত্‌ সামাজিক সংগঠন জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকার সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাধারণ সভায় সংগঠনের সর্বশেষ নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলামকে চুড়ান্ত অব্যাহতির পাশাপাশি ‘জালালাবাদ ভবন’ ক্রয়ের সাথে অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সিদ্ধান্তসমুহ আগামী ২৫ জুন থেকে কার্যকর হবে বলে সভায় জানােনা হয়।

তবে সাধারণ সভায় নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলামকে চুড়ান্ত অব্যাহতির সিদ্ধান্ত গ্রহণের পুর্বে তার বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়নি। এর পুর্বেই হলে শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য তাকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়। মুলত: ভবন ক্রয়কে কেন্দ্র করেই ১১ জুনের সাধারণ সভা আহবান করা হলেও ভবন ক্রয়ের সাথৈ সংশ্লিষ্ট পুর্ববর্তী কার্যকরী কমিটির তিনজন – সভাপতি ময়নুল হক চৌধুরী হেলাল, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী শেফাজ ও কোষাধ্যক্ষ মইনুল ইসলাম, কারো বক্তব্যই সাধারণ সভায় উপস্থিত সদস্যরা জানার সুযোগ পাননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জালালাবাদ এসোসিয়শানের সাধারণ সভা আয়োজনের সাথে সংশ্লিষ্ট একজন পরিচয়কে জানিয়েছেন, সংগঠনের আইনজীবীর পরামর্শ অনুযায়ী মামলার প্রয়োজনে কোন প্রকার বিলম্ব না করে এবং সভা বানচাল বা পন্ড করার সুযোগ না দিয়ে নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদককে বহিস্কার প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করার জন্যই ১১ জুনের সাধারণ সভা কড়া নিরাপত্তার বেষ্টনীতে আয়োজন করা হয়।

এদিকে সাধারণ সভায় প্রবেশের সময় সভাস্থলে প্রবেশ মুখে বিশাল দেহের সিকিউরিটি দিয়ে সদস্যদের দেহ তল্লাসীর ঘটনায় জালালাবাদবাসীরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অবশ্য অপ্রীতিকর এই ঘটনার জন্য সাধারণ সভায় সভাপতি বদরুল হোসেন খান দু:খ প্রকাশ করে বলেছেন, জালালাবাদবাসীদের নিরাপত্তার স্বার্থেই প্রয়োজনীয় সিকিউরিটির ব্যবস্থা করা হয়। এজন্য প্রায় এক ডজন প্রাইভেট সিকিউরিটি নিয়োগ দেয়া হয়। এছাড়াও এনওয়াইপিডি অফিসারের উপস্থিতিও ছিলো লক্ষণীয়।

গত রোববার (১১ জুন) সিটির উডসাইডস্থ কুইন্স প্যালেসে সন্ধ্যা ৬টার স্থলে সাড়ে ৭টার দিকে সভার কার্যক্রম শুরু হয়। এর আগে এসোসিয়েশনের সদস্যদেরকে হলে প্রবেশমুখে কড়া সিকিউরিটির মাধ্যমে দেহ তল্লাসী করে ভিতরে প্রবেশ করার সুযোগ দেওয়া হয়। এরই মধ্যে সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান খান শেফাজ সভাস্থলের ভিতরে প্রবেশ করলে তাকে বের করে দেওয়া এবং সাবেক সভাপতি সৈয়দ শওকত আলী সিকিউরিটি কর্তৃক প্রবেশমুখে দেহ তল্লাসীর ঘটনায় জালালাবাদবাসী একটি অংশের মাঝে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করতে থাকে। দেখা দেয় উত্তেজনা। পাশাপাশি কুইন্স প্যালেসের সামনে বিক্ষােভরত উল্লেখেযাগ্য সংখ্যক জালালাবাদবাসীর সাথে কতিপয় ভিন দেশীর হাতে ‘জালালাবাদ ভবন চাই’, ‘বিভক্তি নয়, ঐক্য চাই, জালালাবাদ ভবন চাই’ প্রভৃতি প্লাকার্ড/ব্যানার নিয়ে অবস্থান নেওয়ার ঘটনায় অনেকের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।

সাধারণ সভা শুরুর প্রাক্কালে এসোসিয়েনের কার্যকরী কমিটি কর্তৃক সাময়িক অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম নিজেকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দাবী করে সভা পরিচালনা করতে চাইলে সভাপতি বদরুল হোসেন ও তার পরিষদ বাধা দিলে চরম হট্টগোল আর বাকবিতন্ডা শুরু হয়। পাল্টা-পাল্টির বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে সিকিউরিটির সদস্যরা মইনুল ইসলাম ও তার সমর্থকদের সভা স্থল থেকে বের করে দেয়। পরবর্তীতে এসোসিয়েশনের সভাপতি বদরুল হোসেন খানের সভাপতিত্বে সাধারণ সভার কার্যক্রম শুরু হয় এবং সভা পরিচালনা করেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রোকন হাকিম।

সভায় সংগঠনের সবেক সভাপতি আজমল হোসেন কুনু, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সাধারন সম্পাদক রানা ফেরদৌস চৌধুরী, এসোসিয়েশনের ট্রাষ্টিবোর্ডের সদস্য ও সাবেক সভাপতি বদরুন নাহার খান মিতা, ট্রাষ্টিবোর্ডের সদস্য কওছারুজ্জামান কয়েস, সাবেক সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে জুনেদ খান, মিসবাহ মজিদ, আব্দুল হাসিব মামুন, আহমেদ জিল্লু ও আতাউর রহমান সেলিম এবং প্রবীণ প্রবাসী ছদরুন নুর সভামঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন।

সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের পর বিশেষ দোয়া পরিচালনা করেন এসোসিয়েশনের সাবেক কর্মকর্তা জামিল আনসারী। এরপর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রোকন হাকিমের প্রস্তাবনায় সদ্য প্রয়াত সংগঠনের সাবেক সভাপতি জন উদ্দিন স্মরণে একটি শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়।

এসময় সংগঠনের প্রয়াত সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ সোসাইটির সবেক সভাপতি কামাল আহমেদ সহ এসোসিয়েশনের প্রয়াত কয়েক কর্মকর্তাকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ এবং ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

পরবর্তীতে সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট পেশ করেন যথাক্রমে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রোকন হাকিম এবং কোষাধ্যক্ষের রিপোর্ট পেশ করেন কোষাধ্যক্ষ আলিম উদ্দিন। উভয়ের রিপোর্টে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। এরপর রিপোর্ট দুটি নিয়ে আলোচনার সময় বিভিন্ন ইস্যু ও বক্তব্যে একাধিকবার উত্তেজনার সৃষ্টি হলেও আবার তা প্রশমিত হয়।

সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষের রিপোর্ট সহ ভবন ইস্যুতে আলোচনায় অংশ নিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন মস্তফা কামাল, মাসুদুল হক সানু, মকবুল রহিম চুনুই, গৌস খান, আব্দুর ন‚র বড় ভ‚ইয়া, সৈয়দ ইলিয়াস খসরু, মিয়া মোহাম্মদ আফজাল, শেখ আতিকুল ইসলাম, ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, মওলানা রশীদ আহমদ, মাহবুবুর রহমান, মিজানুর রহমান মিজান, জামিল আনসারী, সাইকুল ইসলাম, জামাল হোসেন প্রমুখ।

জনাব ছদরুন নুর ব্যতিত সভা মঞ্চে উপবিষ্ট সকলেই সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদকগণ ‘জালালাবাদ ভবন’ সমস্যার সমাধানে ৬ সম্পাদকের নেয়া উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার ব্যাখা দেন।

সবশেষে সভাপতি বদরুল হোসেন খান তার দীর্ঘ সমাপনি বক্তব্যে জালালাবাদ এসোসিয়েশনের বর্তমান পরিস্থিতি এবং অব্যহতিপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলামের গঠনতন্ত্র লংঘন ও আর্থিক অনিয়মের বিষয় তুলে ধরেন। এরপর তিনি গঠনতন্ত্রের ধারা-৯ মোতবেক সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলামকে এসোসিয়েশন থেকে বহিষ্কারের প্রস্তাব উত্থাপন করতে উপস্থিত সদস্যরা হাত তুলে তার প্রস্তাব সমর্থন করেন।

মইনুল ইসলামের বিরুদ্ধে বাহিষ্কারের প্রস্তাব পাশ হওয়ার পর সভাপতি বদরুল হোসেন খান ঘোষণা দেন যে এই সিদ্ধান্ত আগামী ২৫ জুন থেকে কার্যকর হবে এবং মইনুল ইসলামের কাছে পাওণা অর্থ উদ্ধানের আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এবং এসোসিয়েশনের আত্মসাৎকৃত অর্থ ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত সংগঠনের অর্থে কেনা ‘জালালাবাদ ভবন’ যাতে কেনা-বেচা করতে না পারে তার আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথাও ঘোষণা দেন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে সভাপতি সভার সমাপ্তি ঘটে।

উল্লেখ্য, জালালাবাদ এসোসিয়েশনের ৩৮ বছরের ইতিহাসে ইতিপ‚র্বে সিকিউরিটির উপস্থিতিতে সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলেও এর আগে কখনো সিকিউরিটি দিয়ে দেহ তল্লাসীর ঘটনা ঘটেনি। এই ঘটনায় প্রায় সকল বক্তাই ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেন এর সমালোচনা করেন। -সুত্র ইউএনএ

সমঝোতার নতুন প্রয়াস

পরিচয় রিপোর্ট: ভবন ক্রয়কে কেন্দ্র করে জালালাবাদ এসোসিয়েশানে সৃষ্ট সঙ্কট নিরসনে নতুন একটি উদ্যোগ এর খবর জানা গেছে। সর্বস্তরের জালালাবাদবাসীর শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব ডা. জিয়াউদ্দিন আহমদ, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সাধারন সম্পাদক রানা ফেরদৌস চৌধুরী, বাংলাপত্রিকার সম্পাদক ও টাইম টিভির সিইও আবু তাহের এর সমন্বয়ে সর্বশেষ উদ্যোগের কথা স্বীকার করেছেন সভাপতি বদরুল হোসেন খান। তিনি বলেছেন উদ্যেক্তাদের সাথে প্রাথমিক যোগাযোগ হয়েছে মাত্র, এর চাইতে বেশী কিছু বলার নেই।

শেয়ার করুন