নিউইয়র্ক     রবিবার, ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ক্যালিফোর্নিয়া হত্যাকাণ্ডে অভিবাসীরা আতঙ্কিত

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ জানুয়ারি ২০২৩ | ০৩:০২ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২৩ | ০৩:০২ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
ক্যালিফোর্নিয়া হত্যাকাণ্ডে অভিবাসীরা আতঙ্কিত

প্রায় দুই বছর আগে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি খামারে কাজ করতে আসা জোসে রোমেরোর জন্য আমেরিকা নিরাপদ এক জায়গা হওয়ার কথা ছিল। এমনটা মেক্সিকো ও চীন থেকে আসা অভিবাসীরাও ভেবেছিলেন। সোমবার (২৩ জানুয়ারি) সান ফ্রান্সিসকোর দক্ষিণে হাফ মুন বে’তে এক বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত হন রোমেরো। প্রাণ হারায় অন্য ছয় অভিবাসী শ্রমিক।

যুক্তরাষ্ট্র বন্দুক সহিংসতার সঙ্গে খুব পরিচিত দেশ হলেও ক্যালিফোর্নিয়ার হত্যাকাণ্ডটি ছিল অপ্রত্যাশিত। কারণ, এটা ঘটে লস অ্যাঞ্জেলেসের বাইরে এশিয়ান আমেরিকান ছিটমহল মন্টেরে পার্কের একটি বলরুমে আরেক বন্দুকধারীর গুলি বর্ষণের মাত্র দুই দিন পর।

পরপর দুইটি বন্দুক হামলার ঘটনায় মোট ১৮ জন নিহত হয়েছেন, যা অভিবাসী কমিউনিটির জন্য আতঙ্কের। রোমেরোর চাচাতো ভাই হোসে সুয়ারেজ জানান, এখানে মানুষ আসে তার জীবনকে উন্নত করতে, অথচ তারা এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে।

হামলাকারীর একজন হলো ৭২ বছর বয়সী হু ক্যান ট্রান, যিনি মন্টেরে পার্কের ডান্স স্টুডিওতে প্রায়ই যেতেন, আর অন্যজন হচ্ছেন ৬৬ বছর বয়সী চুনলি ঝাও হাফ, যিনি মুন বে ফার্মে কাজ করতেন। ঘটনা দুইটি যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদ বৃদ্ধি ও অভিবাসীদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়ার ভয়ের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।

ক্যালিফোর্নিয়ায় ৩২ শতাংশ এশীয় অভিবাসী ও ২৩ শতাংশ ল্যাটিন অভিবাসী জানিয়েছেন, তারা বন্দুক সহিংসতার শিকার হওয়া নিয়ে ভীত ও উদ্বিগ্ন। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার তথ্য মতে, যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী ব্যক্তিদের চেয়ে ভয়ের এই মাত্রা তিনগুণের বেশি।

আন্তোনিও পেরেজ ১৯৮৩ সালে মেক্সিকো থেকে চলে আসার পরে এখন হাফ মুন বে’তে বসবাস করেন। তিনি জানান, তিনি তার মাতৃভূমিতে চোরাচালানকারীদের সহিংসতা ও যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক সহিংসতার মধ্যে আটকা পড়েছেন।

পেরেজ বলেন, ‘এখানে এই ধরনের চরম পরিস্থিতি কখনোই আশা করিনি।’ প্রায় ৩৮০ মাইল দক্ষিণে মন্টেরে পার্কে নাচের হলে গুলি বর্ষণ ঘটনা বাসিন্দাদের মাঝেও আতঙ্ক ছড়িয়েছে। তাদের ভয় আমেরিকার বন্দুক সংস্কৃতির বিষ ও গণহত্যার মহামারী এশিয়ান আমেরিকান সম্প্রদায়কে সংক্রামিত করছে।

৩৬ বছর বয়সী ফ্রাঙ্ক হিও জানান, আমেরিকানদের কাছে বন্দুক থাকে, সব জায়গায় বন্দুক আছে। এখানে থাকা অনেক বিপজ্জনক। বন্দুকধারীরা তাদের সম্প্রদায়ের লোক বলে অভিবাসীদের অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

ফিলিপাইন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানো ৭২ বছর বয়সী রোল্যান্ডো ফাভিস জানান, বন্দুকধারীরা এশিয়ান, নিহতরাও এশিয়ান। অনেকেই বলেছেন তারা বেশ কয়েক বছর ধরে তাদের নিরাপত্তা নিয়ে বেশি শঙ্কিত ছিলেন।

তারা মনে করেন, করোনা মহামারীর প্রেক্ষাপটে চীনকে দোষারোপ করে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্য এশীয়দের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক অপরাধের প্রবণতা বৃদ্ধি করেছে। মিশিগান ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা গেছে, মহামারীর পরে এশিয়ান আমেরিকানদের মাঝে বন্দুক কেনার সংখ্যা বেড়েছে।

করোনা মহামারীর প্রেক্ষাপটে চীনকে দোষারোপ করে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্য এশীয়দের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক অপরাধের প্রবণতা বৃদ্ধি করেছে।

বন্দুক আছে এমন এক তৃতীয়াংশ জানিয়েছে, তারা এশিয়া বিরোধী ঘটনার এলাকায় সব সময় অস্ত্র বহন করে। আরেক তৃতীয়াংশ জানিয়েছেন, তারা তাদের বাড়িতে বন্দুক লোড ও আনলক করে রাখেন। সূত্র :  ডয়েচে ভেলে

শেয়ার করুন