নিউইয়র্ক     বৃহস্পতিবার, ১৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করপোরেটদের কর্মী ছাঁটাই: কোন পথে মার্কিন অর্থনীতি

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ জানুয়ারি ২০২৩ | ১২:৩৮ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৩ | ১২:৩৮ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
করপোরেটদের কর্মী ছাঁটাই: কোন পথে মার্কিন অর্থনীতি

বৃহৎ মার্কিন করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো সাম্প্রতিক মাসগুলোয় ব্যাপকহারে কর্মী ছাঁটাই করেছে, অথবা ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে। সম্প্রতি প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যামাজন ১৮ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে, যা প্রতিষ্ঠানটির মোট কর্মীর ৬ শতাংশ। বিজনেস সফটওয়্যার কোম্পানি সেলসফোর্স তাদের ১০ শতাংশ বা প্রায় ৮ হাজার কর্মী ছাঁটাই করবে।

এর আগে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইনস্টাগ্রামের প্রতিষ্ঠান মেটা, হার্ডওয়্যার কোম্পানি সিসকো, পেমেন্ট প্রতিষ্ঠান স্ট্রাইপসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান বিপুলসংখ্যক কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞ এটিকে অর্থনৈতিক সংকটের পূর্বাভাস বলে মনে করছেন। আগামী কয়েক মাসে এ বিষয়গুলো আরও স্পষ্ট হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই যখন যুক্তরাষ্ট্রের বাস্তবতা, তখন বেকারত্বের পরিমাণ বাড়ছে করপোরেটদের কর্মী ছাঁটাইয়ে। করোনাকালে চাহিদা সামলাতে দ্রুত প্রচুর কর্মী নিয়োগ করেছিল অ্যামাজন। চাহিদা কমে যাওয়ায় নভেম্বরে তারা ১০ হাজার কর্মী ছাঁটাই করে। এবার করছে ১৮ হাজার। তবে অ্যামাজনের সিইও অ্যান্ডি জেসি বলেছেন, ‘আমরা জানি, ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের জীবন কতটা কঠিন হয়ে যায়। আমরাও বিষয়টি হালকাভাবে নিচ্ছি না। অতীতেও অ্যামাজন অনিশ্চিত অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করেছে। এবারও করবে।’

অ্যামাজন ২০২০ থেকে ২০২২ পর্যন্ত প্রচুর কর্মী নিয়োগ করেছিল। বিশ্বজুড়ে তাদের কর্মীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যায়। গত সেপ্টেম্বরের হিসাব, অ্যামাজনের কর্মীসংখ্যা ছিল ১৫ লাখ ৪০ হাজার। এর মধ্যে উৎসবের সময় কয়েক মাসের জন্য যে অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ করা হয়, তা ধরা হয়নি।

কর্মী ছাঁটাই করছে গোল্ডম্যান স্যাকস গ্রুপও। আসন্ন কঠিন অর্থনৈতিক পরিবেশের আশঙ্কা করে ব্যয় সংকোচনের উদ্যোগ নিচ্ছে মার্কিন বহুজাতিক ব্যাংকটি। বিনিয়োগ ব্যাংকিং ইউনিটের আয় কমে যাওয়ায় বিশ্বব্যাপী প্রধান ব্যাংকগুলো খরচ কমিয়ে আনতে চাইছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রায় এক হাজার ৬০০ জন বা বৈশ্বিক কর্মী বাহিনীর ২ শতাংশকে ছাঁটাই করছে।

মার্কিন ব্যাংক ওয়েলস ফার্গোর কয়েকশ কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করেছে। অন্য বড় ব্যবসায়িক গ্রুপগুলোও কর্মী ছাঁটাইয়ের পথে হাঁটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অথচ গত বছরের প্রথমদিকেও পুরনো কর্মী ধরে রাখতে এবং নতুন কর্মী আকর্ষণে বেতন বৃদ্ধি ও বোনাসের ঘোষণা দিয়েছিল ব্যাংকগুলো।

যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরের মধ্যে দেশটিতে ২ লাখ ২৩ হাজার নতুন চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তবে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির এই গতি ২০২১ সালের তুলনায় অনেক ধীর। করোনা মহামারি থেকে বেরিয়ে যখন অর্থনীতির চাকা সচল হতে শুরু করে, তখন কর্মসংস্থান সৃষ্টির যে গতি ছিল, ২০২২ সালে সেই গতি ধীর পরিলক্ষিত হয়েছে। নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির ফলে দেশটিতে এখন বেকারত্বের হার রেকর্ড পরিমাণ অর্থাৎ ৩ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।

অনেক অর্থনীতিবিদের মতে, সুদের হার বৃদ্ধির কারণে অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি হ্রাস পাবে এবং ২০২৩ সালে মার্কিন অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দেবে। গত বছর দেশটির মূল্যস্ফীতি ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল। ওই বছর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে সবচেয়ে বেশি মনোযোগ ছিল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন শুরুর পর কিয়েভকে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধ না থামলে এমন সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে ইতোমধ্যে বাইডেন প্রশাসন ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। তাই অর্থনৈতিক সংকটের শঙ্কা অমূলক বলার অবকাশ নেই।

দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান দাম ভোক্তাদের ওপর ব্যাপক প্রভাব রাখায় আগামী অর্থনীতি অনেক ধীরগতির হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে। মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত বছর সুদের হার বাড়ানোর কারণে কোম্পানিগুলো ঋণের খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। এ কারণে প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলো কর্মী ছাঁটাই করে ব্যয় কমানোর চেষ্টা করছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা সতর্ক করে বলেছেন, চলতি বছর বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ দেশ অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে পড়তে পারে। এতে যেসব প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান বিদেশে বড় ব্যবসা পরিচালনা করে, তারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

এদিকে ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থা আরও নেতিবাচক হবে বলে দেশটির অধিকাংশ নাগরিক আশঙ্কা করছেন। গত ৩ জানুয়ারি মার্কিন গ্যালাপ কোম্পানির এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। জরিপ অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের ৮০ শতাংশ নাগরিক মনে করেন ২০২৩ সাল দেশটির অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য জটিল হবে।

এ ছাড়া ৮১ শতাংশ মানুষ কর বৃদ্ধি, ৬৫ শতাংশ মানুষ দ্রুত মুদ্রাস্ফীতি এবং ৫০ শতাংশ মানুষ বেকারত্বের আশঙ্কা করছেন। ৭২ শতাংশ মার্কিনি মনে করেন, চলতি বছর অপরাধের হার বাড়তে পারে।

জরিপে অংশ নেওয়া মাত্র ১৪ শতাংশ মনে করেন, ২০২৩ সাল অনেক শান্তি পূর্ণভাবে কাটবে। ৮৫ শতাংশ মনে করেন, আগের চেয়ে বেশি সংকটময় থাকবে আন্তর্জাতিক রাজনীতি। ৯০ শতাংশ মার্কিনি মনে করেন, এ বছর রাজনৈতিক সহযোগিতার চেয়ে সংঘাত বাড়বে।

ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হতে পারে বলে আশঙ্কা মার্কিন নাগরিকদের। ৬৪ শতাংশ মার্কিনি মনে করেন, ২০২৩ সালে বিশ্ব রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি হ্রাস পাবে। একই সঙ্গে সমান সংখ্যক লোক মনে করেন, এ বছর রাশিয়ার শক্তিও কমবে। ৭৩ শতাংশ মনে করছেন, এ প্রেক্ষাপট বিশ্বে চীনের শক্তি বাড়বে।

শেয়ার করুন