ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সংঘাতের গ্যাড়াকলে পড়েছে মালদ্বীপ। মালে’র পরিবর্তে লাক্ষাদ্বীপ যাওয়ার হিড়িক পড়েছে ভারতীয় পর্যটকদের। বাণিজ্য, পর্যটন, সেবাখাতে দিল্লির ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল দেশটি। এমন টানাপোড়েনের মধ্যে চীনের শরণাপন্ন হয়েছেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জু। সম্পর্কের আরও অবনতি হলে মালদ্বীপ অর্থনৈতিকভাবে ধকল কাটিয়ে উঠতে পারবে কি না, সেটিও এখন এক বড় প্রশ্ন।
ভারত ও মালদ্বীপের মধ্যে কূটনৈতিক বিরোধ ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে মালদ্বীপের মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের কটূক্তির জেরে দুই দেশের সম্পর্ক গড়িয়েছে বিদ্বেষে। যে মালদ্বীপ নিজেদের সব কিছুতেই ভারতকে প্রাধান্য দিয়ে আসছিল, হঠাৎ তারা হয়ে উঠেছে ভারতবিদ্বেষী।
চলতি বছরের শুরুতে লাক্ষাদ্বীপ সফরে যান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। লাক্ষাদ্বীপ ভারতের একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল। সেখানে গিয়ে সামাজিক মাধ্যমে নিজের ছবি শেয়ার করে মোদি ভ্রমণ পিপাসুদের পরামর্শ দেন লাক্ষাদ্বীপে আসতে। পর্যটনের প্রচার করতেই মালদ্বীপের পরিবর্তে লাক্ষাদ্বীপে মানুষের ছুটি কাটাতে যাওয়া উচিত- এই আলোচনায় সরগরম হয়ে ওঠে সামাজিক মাধ্যম।
কিন্তু বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি মালদ্বীপের অনেকেই। মোদির ছবি নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন মালদ্বীপ সরকারের মন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতা। আপত্তিজনক মন্তব্যকে ঘিরে কূটনৈতিক উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে ওঠে। বিতর্ক জোরালো হতেই মালদ্বীপের হাই-কমিশনারকে তলব করে ভারত। আর মালের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সরকারের সঙ্গে সেসব মন্তব্যের কোনো সংযোগ নেই, তারপরও মন্তব্যকারীদের বরখাস্ত করা হয়েছে।
তবে মালদ্বীপের এসব উদ্যোগে শান্ত হয়নি পরিস্থিতি। ভারত-মালদ্বীপ বিতর্কের পর লাক্ষাদ্বীপ গুগল সার্চিংয়ের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে দাঁড়ায়। আবার বিমানে বাড়ছে পর্যটকদের লাক্ষাদ্বীপ যাওয়ার হিড়িক। পরিস্থিতি বুঝে ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়াচ্ছে বিমান সংস্থাগুলো। এরমধ্যেই ভারতের পক্ষ থেকে ১৪ হাজারেরও বেশি হোটেল বুকিং বাতিল হয়েছে মালদ্বীপে। এতে মালদ্বীপের হোটেলভাড়া ২০ শতাংশ কমে গেছে।
ভারত থেকে প্রতি বছর দুই লাখেরও বেশি মানুষ মালদ্বীপ ঘুরতে যান। মালদ্বীপে ভারতীয় হাইকমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে দুই লাখ ৪১ হাজার এবং ২০২৩ সালে প্রায় দু’লাখ পর্যটক মালদ্বীপ ঘুরতে গিয়েছিলেন।
টানাপোড়েনের মধ্যেই গেল সপ্তাহে চীনের শরণাপন্ন হন মালের প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জু। ভারতীয় নিষেধাজ্ঞার কারণে পর্যটক সংকটে থাকা মালদ্বীপের আর্জি, চীন যেন বেশি পর্যটক পাঠায়। বলা হচ্ছে, মুইজ্জু আরেকবার তার চীন-নির্ভরতার প্রমাণ দিলেন।
মালদ্বীপের আগের প্রেসিডেন্ট যেখানে ‘ইন্ডিয়া ফার্স্ট’ নীতি অনুসরণ করতেন, সেখানে মুইজ্জু ‘ইন্ডিয়া আউট’ অর্থাৎ দেশকে ভারতের প্রভাবমুক্ত করার নীতি অনুসরণ করছেন। আর এতেই মালদ্বীপ এবং ভারতের সম্পর্কের সমীকরণ জটিল আকার ধারণ করে।
বিশ্লেষকদের মতে, আগে থেকেই ভারতবিদ্বেষী মুইজ্জু নিজের গদি রক্ষায় চীনের দিকে ঝুঁকেছেন। এতে ভারত মহাসাগরে চীনের আধিপত্য বাড়তে পারে, যা কোনোভাবেই চায় না দিল্লি। তাই চীনের দিকে ঝুঁকে গিয়ে হিতে-বিপরীতও হতে পারে। এমনকি এ অঞ্চলের অন্যতম প্রধান শক্তি ভারত মালদ্বীপের রাজনীতির দৃশ্যপট বদলে দিতে পারে- এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দেয়া যায়না।