নিউইয়র্ক     বুধবার, ৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড জয়ী ৮ বাংলাদেশি তরুণের গল্প

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২২ | ০১:২১ অপরাহ্ণ | আপডেট: ০১ আগস্ট ২০২২ | ০৬:৩৯ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড জয়ী ৮ বাংলাদেশি তরুণের গল্প

সামাজিক কর্ম বা মানবিক কাজের স্বীকৃতি হিসেবে প্রতি বছর সারাবিশ্ব থেকে ৯-২৫ বছর বয়সী তরুণদের ব্রিটিশ রাজপরিবার কতৃ‌র্ক প্রবর্তিত সম্মাননা ‘ডায়ানা অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়। এ বছর বাংলাদেশ থেকে ৮ জন পেয়েছেন মর্যাদাপূর্ণ এই সম্মাননা। এই ৮ তরুণ সম্পর্কে জানাচ্ছেন ফরিদ উদ্দিন রনি ও মো. আবু রাহাত।

আনুশা চৌধুরী-
মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে গণসচেতনতা তৈরি করতে এবং মানসিক সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতের লক্ষ্যে আনুশা চৌধুরী ২০১৮ সালের নভেম্বরে ‘লেটস টক মেন্টাল হেলথ’ নামের একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। সংগঠনটির মাধ্যমে মানসিকভাবে বির্পযস্ত বা হীনমন্যতায় ভোগা মানুষকে ইতিবাচক জীবনযাপনে সাহাঘ্য করা হয়। শুরুতে সংগঠনের কার্যক্রম বাংলাদেশে থাকলেও বর্তমানে আফ্রিকা, কানাডাসহ একাধিক দেশে এর কার্যক্রম বিস্তৃত হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৩৭ হাজারেরও বেশি তরুণকে তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে সহায়তা করেছেন। সেইসঙ্গে ৬টি মেগা প্রজেক্ট এবং ৯টি ক্যাম্পেইন বাস্তবায়ন করেছেন তিনি। আনুশা প্রজন্মকে জানান, ভবিষ্যতে দুঃস্থ নারী, ট্রান্সজেন্ডার, মাদকাসক্ত ব্যক্তি এবং সমাজের ঝরে পড়া শিশুদের নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী ও কার্যকরী প্রজেক্ট করার বিষয়ে পরিকল্পনা রয়েছে।

মুরাদ আনসারী-
বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের অপ্রতুলতায় দেশে মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যায় চিকিত্সা সেবাগ্রহীতার সংখ্যা অত্যন্ত নগণ্য— এ বিষয়টি উপলব্ধি করেই ২০১৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিত্সা মনোবিজ্ঞান বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নিয়ে মুরাদ আনসারী গড়ে তোলেন ‘সাইকিউর অর্গানাইজেশন’ নামক মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক সংগঠন। সংগঠনটি এখন পর্যন্ত ১১ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীকে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক নানা প্রশিক্ষণের পাশাপাশি প্রায় তিন হাজার মানুষকে কাউন্সেলিং সেবা দিয়েছে। অনলাইনের মাধ্যমে সাইকিউর তাদের এই মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রয়াসে নিজস্ব অ্যাপ চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে নিজেদের কার্যক্রম চালুর ব্যাপারেও কাজ করছে মুরাদ আনসারীর প্রতিষ্ঠানটি।

শামীম আহমেদ মৃধা-
মানুষের মধ্যে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে ২০১৮ সালে শামীম আহমেদ মৃধা গড়ে তোলেন ‘ইকো-নেটওয়ার্ক’ নামে সংগঠন। শিশু-কিশোরদের মাঝে পরিবেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত জ্ঞান সরবরাহ করে তাদের মনস্তাত্ত্বিক চিন্তাধারা পরিবর্তন করতে সহায়তা করা হয় প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে। পরিবেশবিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করছে এমন শিক্ষার্থী দ্বারা পরিচালিত হয় প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে প্রায় ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং ২৩টি দেশে প্রচারণা ও জলবায়ু সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করছে সংগঠনটি। এখন পর্যন্ত অনলাইন এবং অফলাইন কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রায় ৪ থেকে ৫ লাখ তরুণকে তাদের কার্যক্রমের সাথে যুক্ত করতে পেরেছেন।

মো. আমিমুল এহসান খান-
বিশ্বের ৪০টি দেশের ১০ লাখেরও বেশি মানুষ সংযুক্ত থাকা আন্তর্জাতিক যুব-নেতৃত্বাধীন অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাওয়ারনেস ৩৬০’র সিনিয়র আঞ্চলিক কর্মকর্তা আমিমুল এহসান খান। পড়াশোনা করছেন টোকিও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে। ২০১৮ সালে ‘অ্যাওয়ারনেস ৩৬০’-তে যোগদান করেন তিনি। তখন বাংলাদেশের বিভিন্ন সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় (ওয়াশ) প্রজেক্টের মাধ্যমে মানুষকে হাত ধোয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রয়োজনীয়তা, পানিবাহিত রোগ থেকে নিজেদের কীভাবে সুরক্ষিত রাখা যায় তা নিয়ে সচেতন করতেন। এছাড়াও প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীরা ঘরে বসেই কীভাবে স্বাস্থ্যসম্মত পুনরায় ব্যবহারযোগ্য স্যানিটারি ন্যাপকিন বানাতে পারেন এবং মাসিক নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কারগুলো দূর করতে সচেতনামূলক কার্যক্রম চালাতেন। এতে করে আড়াই হাজারেরও বেশি নারী-পুরুষ উপকৃত হয়েছেন। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৮ সালে ‘অ্যাওয়ারনেস ৩৬০’র বর্ষসেরা সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।

মনিষা মীম নিপুণ-
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কর্মসংস্থানে দক্ষতা বাড়াতে মানসম্মত শিক্ষা, তাদের মানবাধিকার রক্ষায় আইনি সহয়তা, প্রতিটি মানুষের লিঙ্গসমতা এবং যৌন অধিকারসহ সকল প্রকার মৌলিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে মনিষা মীম নিপুণ হিজড়া ও আরেকজন সহযোগী মিলে ২০১৯ সালে গড়ে তোলেন ‘পথচলা ফাউন্ডেশন’। এই সংগঠনের মাধ্যমে গত তিন বছরে তিন হাজারেরও বেশি সংখ্যালঘু ব্যক্তিকে কর্মসংস্থানে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে মানসম্মত শিক্ষা সেবা দিয়েছে। যুব উন্নয়নে বাস্তবায়ন করেছে অসংখ্য প্রশিক্ষণ কর্মশালা। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে বেকারদের দিয়েছে হাতেকলমে কারিগরি প্রশিক্ষণ। স্থায়ী উদ্যোক্তা তৈরিতে সহায়তা প্রদান কার্যক্রমসহ ৩৮টি প্রজেক্ট সম্পন্ন করেছে সংগঠনটি। দেশের প্রতিটি বিভাগে রয়েছে তাদের কার্যক্রম। মনিষা মীম নিপুণ বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

দীপ্র প্রত্যয়-
২০২০ সালের আগস্টে চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র শিক্ষা বিষয়ক সহায়তা ও পরামর্শ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ‘ডিপি টিউটোরিয়ালস’। আমেরিকার মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র দীপ্র প্রত্যয়ের গড়ে তোলা এ প্রতিষ্ঠান সহস্রাধিক শিক্ষার্থীকে প্রত্যক্ষভাবে শিক্ষা বিষয়ক সহায়তা প্রদান করেছে। দীপ্র দেশে থাকতেই দেখতেন অনেক শিক্ষার্থীর মাঝে বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিয়ে একটা অজ্ঞতা কাজ করে। অনেকে আবার খরচের কথা ভেবেও বাইরে পড়তে চান না— মূলত এ চিন্তাধারা থেকেই তিনি ডিপি টিউটোরিয়ালস গড়ে তুলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী পরোক্ষভাবে তার প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত থেকে নানা বিষয়ে শিক্ষাগ্রহণ করছেন। স্যাট, আইইএলটিএস কোর্সসহ বিদেশে পড়াশোনা করতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের আর্থিক ও তথ্য সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি ৩০টির বেশি প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করেছে দীপ্রর প্রতিষ্ঠান।

নাফিরা নাঈম আহমেদ-
বৈষম্য এবং সামাজিকসমস্যা মোকাবিলার পাশাপাশি সুবিধাবঞ্চিত মানুষদেরকে নিজেদের কার্যক্রমের আওতায় আনার লক্ষ্যে নিয়ে ২০১৯ সালের অক্টোবরে নাফিরা নাঈম আহমেদ গড়ে তোলেন অলাভজনক-দাতব্য সংস্থা ‘অ্যাম্পিটিউড’। এসএফএক্স ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে এ-লেভেলে পড়াশোনা করছেন নাফিরা। সমবয়সী সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের মাঝে বৈষম্য ও ন্যায্যতার অভাবের বিষয়টি নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন ছিলেন নাফিরা। সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোরসহ অবহেলিত-প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ন্যাঘ্যতা আদায় ও তাদের সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে কাজ করছে তার গড়ে তোলা অ্যাম্পিটিউড।

ফায়েজ বেলাল-
মানসম্মত শিক্ষা, ক্লাইমেট অ্যাকশন, লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র নিয়ে কাজ করছে ফায়েজ বেলালের গড়ে তোলা সংগঠন বিওয়াইএস। গত কয়েক বছরে অভয়, গার্লস সামিট, স্বপ্নজয়, সম্পর্কে ভালো থাকুক দেশ, শী ইজ দ্য ফার্স্ট, আমি থেকে আমরা, ইয়ুথ ফেস্ট, বরিশাল নুকসহ নানান উদ্ভাবনী প্রকল্পের মাধ্যমে সামাজিক সমস্যাসমূহ সমাধান করে আসছে ফায়েজ বেলালের প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠন। বিগত ৮ বছরে বিওয়াইএস’র নানান কার্যক্রমের যুক্ত হয়েছেন প্রায় ১০ লাখ মানুষ। বর্তমানে বরিশাল, ঢাকা এবং রংপুর বিভাগের ১২টি জেলায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

শেয়ার করুন