নিউইয়র্ক     শনিবার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বড় হারে শেষ হল ক্রিকেটে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৩ | ০৯:৪৮ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২৩ | ০৯:৪৮ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
বড় হারে শেষ হল ক্রিকেটে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন

সামীউর রহমান : অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৮ উইকেটের পরাজয়ে শেষ হল বাংলাদেশের ২০২৩ বিশ্বকাপ৷ তবে রান রেটে শ্রীলঙ্কাকে পেছনে ফেলে পয়েন্ট তালিকায় এই মুহূর্তে অষ্টম স্থানে থাকায় ২০২৫ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলা কার্যত নিশ্চিত হয়েছে টাইগারদের৷

মিচেল মার্শের অপরাজিত ১৭৭ রানের ইনিংসে ভর করে বাংলাদেশকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে আত্মবিশ্বাসকে সঙ্গী করেই ইডেনের সেমিফাইনালে পা রাখতে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, যেখানে তাদের অপেক্ষায় আছে দক্ষিণ আফ্রিকা৷

টসে হেরে ব্যাটিং করে ৮ উইকেটে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সামনে ৩০৭ রানের লক্ষ্যে বেধে দেয় বাংলাদেশ৷ নিজেদের আগের ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২৯২ রান তাড়া করে জেতাটাই বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার রান তাড়ায় সেরা সাফল্য৷ আফগানদের স্পিন আক্রমণের সামনে ৯১ রানে ৭ উইকেট হারানোর পর গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের বীরত্বে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া৷

বাংলাদেশের বিপক্ষে শনিবার লক্ষ্যটা আরেকটু বড় আর ম্যাক্সওয়েলও ছিলেন না একাদশে৷ তবুও হেসেখেলেই জিতেছে অস্ট্রেলিয়া, মিচেল মার্শের বীরত্বে৷ আসরের মাঝপথে দাদার মৃত্যুতে দেশে ফিরে গিয়েছিলেন, এসে আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেললেও ভাল করতে পারেননি৷ বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ে রীতিমত ছিনিমিনি খেলে মার্শ বলতে গেলে এক হাতেই হারিয়ে দিয়েছেন প্রতিপক্ষকে৷

আঙ্গুলে চোট পেয়ে বিশ্বকাপ থেকেই আগেই বিদায় নিয়েছেন নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান৷ ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত৷ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টসে হারলেন এবং ব্যাট করতে নামল বাংলাদেশ৷ লিটন দাস এবং তামজিদ হাসান তামিম বেশ ভাল একটা শুরুই এনে দিয়েছিলেন বাংলাদেশকে৷ এই পুনেতেই ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে ৯৩ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েছিলেন লিটন-তামজিদ তামিম৷

আশ্চর্য্য হলেও সত্যি, এটাই সব বিশ্বকাপ মিলিয়ে বাংলাদেশের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানদের সর্বোচ্চ জুটি! গোটা বিশ্বকাপে বাংলাদেশ খুঁড়িয়েছে উদ্বোধনী জুটির ভাল শুরুর অভাবেই, শেষ ম্যাচে এসে তারা খানিকটা রঙ ফিরে পেলেন৷

প্রথম পাওয়ার প্লে (১০ ওভার) শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ বিনা উইকেটে ৬২, অন্য ম্যাচগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে রীতিমত স্বপ্নের শুরু৷ কিন্তু স্বপ্নের স্থায়ীত্ব দীর্ঘ হল না৷ শন অ্যাবটের শর্ট বল খেলতে না পেরে বোলারের হাতেই ফিরতি ক্যাচ দিলেন ৩৪ রান করা তামজিদ৷ ভাঙল ৭৬ রানের উদ্বোধনী জুটি৷

চমৎকার খেলতে থাকা লিটন লেগস্পিনার অ্যাডাম জাম্পাকে আলতো করে উড়িয়ে মেরে যেন ক্যাচ ধরার অনুশীলনই করালেন মারনাস লাবুশেনকে৷ তাতে শান্তর সঙ্গে ৩০ রানের জুটিটা হল বিচ্ছিন্ন৷ অধিনায়ক শান্ত প্রথম বলে লেগ বিফোর উইকেটের জোরাল আবেদন থেকে বাঁচার পর সাহসী হয়ে উঠলেন৷ ডাউন দ্য উইকেটে এসে কয়েকটা চার মারলেন পুলশটে, বিশেষ করে দুই মিডিয়াম পেসার মিচেল মার্শ ও মার্কাস স্টোয়নিসের বলে৷

ম্যাচের লাগাম যখন মনে হচ্ছে বাংলাদেশের হাতে, তখনই দুটো রানআউটে সব পালটে দিলেন লাবুশেন৷ স্কয়ার লেগে বল ঠেলে দিয়ে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন শান্ত, লাবুশেন স্লাইড করে বলটা তুলে নিয়ে নিখুঁত থ্রো করলেন উইকেটরক্ষকের হাতে৷ দ্বিতীয় রান নিতে ফিরে আসা শান্ত ক্রিজে ঢোকার আগেই জস ইংলেস ভেঙ্গে দিয়েছেন স্টাম্প৷ ৪৪ রানে রান আউট হয়ে ফিরে গেলেন শান্ত৷

চার-ছক্কায় দ্রুত রান তোলা মাহমুদউল্লাহকেও দারুণ আন্ডারআর্ম থ্রো তে আউট করেছেন লাবুশেন৷ তৌহিদ হৃদয় কভারে বলটা ঠেলে দিয়ে এক রান নিতে দৌড় দিয়েছিলেন৷ অন্যপ্রান্ত থেকে মাহমুদউল্লাহ দৌড়ে এসে ক্রিজে ঢোকার আগেই উড়ুক্কু থ্রো থেকে স্টাম্প ভেঙ্গে দেন লাবুশেন৷ দুই রানআউটে দুজন থিতু হওয়া ব্যাটসম্যানকে ইনিংসের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে হারিয়ে ফেলায় সংগ্রহটা বড় হয়নি বাংলাদেশের৷ নিজের শেষ বিশ্বকাপ ইনিংসে ২১ রানের বেশি করতে পারেননি পঞ্চম বিশ্বকাপ খেলা মুশফিকুর রহিমও৷

বিশ্বকাপে তৌহিদ হৃদয়ের ব্যাটিং অর্ডারটা নিয়ে নাড়াচাড়া হয়েছে বেশি৷ শেষ ম্যাচে সাকিবের অবর্তমানে চার নম্বরে নেমেছিলেন, খেলেছেন ৭৯ বলে ৭৪ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস৷ বিশ্বকাপে হৃদয়ের এটাই প্রথম হাফসেঞ্চুরি৷ অনেক প্রতিশ্রুতি নিয়ে বিশ্বকাপে আসা হৃদয় নিজেকে মেলে ধরতে বোধহয় একটু দেরিই করে ফেললেন৷ আউট হয়েছেন ৪৭তম ওভারে, একটু ধৈর্য্য ধরলে হয়তো সেঞ্চুরিও পেয়ে যেতেন৷ কিন্তু মার্কাস স্টোয়নিসের ফুলটস বলটায় ডিপ মিডউইকেটে দাঁড়ানো মারনাস লাবুশেনের হাতে ক্যাচ তুলে দেয়াতে সেই সম্ভাবনার ইতি৷

শেষ দিকে বাংলাদেশের উইকেট পড়েছে নিয়মিত৷ রানও ওঠেনি কাঙ্খিত মাত্রায়৷ শেষ ৫ ওভারে আসে মাত্র ৩৫ রান৷ হৃদয়ের বিদায়ের পর মেহেদি হাসান মিরাজ ২০ বলে ২৯ রান করলেও নাসুম আহমেদ ১১ বলে করেন ৭ রান, শেখ মেহেদি ৩ বলে করেন ২ রান আর তাসকিন ১ বল খেলে কোন রান করতে পারেননি৷

১০ ওভারে ৩২ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার সেরা বোলার অ্যাডাম জাম্পা৷ আসরে ২২ উইকেট হয়ে গেল এই লেগস্পিনারের৷ শ্রীলঙ্কার দিলশান মাদুশঙ্কাকে ছাপিয়ে জাম্পাই এখন সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী৷ বদলি পেসার শন অ্যাবটও নিয়েছেন ২ উইকেট৷

৩০৮ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ট্র্যাভিস হেডকে হারায় অস্ট্রেলিয়া৷ ইনিংসের তৃতীয় ওভারের পঞ্চম বলে তাসকিন বোল্ড করেন ১০ রান করা হেডকে৷ ঐ একটা মুহূর্তের জন্যই ম্যাচে খানিকটা প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস গড়েছিল বাংলাদেশ৷ ওয়ান ডাউনে মিচেল মার্শ নেমে চার ছক্কার ফুলঝুড়িতে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর সকল সম্ভাবনাকেই অঙ্কুরে বিনষ্ট করেছেন৷

অন্যপ্রান্তে ডেভিড ওয়ার্নার একটু রয়েসয়েই খেলছিলেন৷ ৫২ বলে হাফসেঞ্চুরি করার পর ৫৩ রানে মোস্তাফিজুর রহমানের বলে ক্যাচ দিলেন শান্তর হাতে৷ কিন্তু অন্যদিকে মার্শ যে রূদ্রমূর্তিতে! প্রথম ৫০ রান আসে মাত্র ৩৭ বলে, ৬টা বাউন্ডারি আর ৩ ছক্কায়৷ ১০০ রানে পৌঁছে যান ৮৭ বলে৷ তবুও ক্লান্ত হননি জিওফ মার্শের ছোট ছেলে৷ ম্যাচ জিতিয়ে যখন মাঠ ছাড়ছেন তখন নামের পাশে ১৭৭ রান, বাংলাদেশের রানটা আরেকটু বেশি হলে হয়তো ম্যাক্সওয়েলের পর দ্বিতীয় অস্ট্রেলিয়ান হিসেবে ওয়ানডেতে ডাবল সেঞ্চুরি করেই ফেলতেন৷

১৩২ বলে অপরাজিত ১৭৭ রানের ইনিংসে ১৭টা চার আর ৯টা ছক্কা মেরেছেন মিচেল মার্শ, অর্থাৎ জায়গায় দাঁড়িয়েই নিয়েছেন ১২২ রান! অন্যপ্রান্তে স্টিভেন স্মিথও সেদিনের কামিন্সের মত নিরব দর্শক হয়ে থাকেননি৷ ১ ছক্কা আর ৪ বাউন্ডারিতে ৬৪ বলে ৬৩ রানের ইনিংস খেলে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে গেছেন৷ দ্বিতীয় উইকেটে দুজনে মিলে ১৩৫ বলে যোগ করেছেন ১৭৫ রান৷

তাদের এই কীর্তিতে ভর করেই ৪৪.৪ ওভারে ৩২ বল ও ৮ উইকেট হাতে রেখেই ৩০৬ রান তাড়া করে জয়ের বন্দরে পৌঁছে গেছে অস্ট্রেলিয়া৷ বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম দুটো ম্যাচে ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরে যাবার পর টানা ৭ ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়া৷ শিরোপার জন্যও তাদের দাবিটা হয়ে উঠেছে জোরাল৷

স্কোরকার্ড : বাংলাদেশ ৫০ ওভারে ৩০৬/৮; হৃদয় ৭৪, শান্ত ৪৫, লিটন ৩৬, তানজিদ ৩৬

জাম্পা ২/৩২, অ্যাবট ২/৬১

অস্ট্রেলিয়া ৪৪.৪ ওভারে ৩০৭/২, মিচেল মার্শ ১৭৭*, স্মিথ ৬৩*, ওয়ার্নার ৫৩; তাসকিন ১/৬১

ফল-অস্ট্রেলিয়া ৮ উইকেটে জয়ী, ম্যাচসেরা-মিচেল মার্শ, জার্মান বেতার ডয়চে ভেলের সৌজন্যে

শেয়ার করুন