নিউইয়র্ক     শুক্রবার, ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যুক্তরাষ্ট্রে ১৬ বছরের সর্বোচ্চে ফেডের সুদহার

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫ মে ২০২৩ | ০৬:৩৩ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০৫ মে ২০২৩ | ০৬:৩৩ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
যুক্তরাষ্ট্রে ১৬ বছরের সর্বোচ্চে ফেডের সুদহার

২০২২ সালের মার্চ থেকে টানা ১০ বার সুদহার বাড়িয়েছে ফেডারেল রিজার্ভ ছবি : নিউজউইক

সুদহার ফের বাড়িয়েছে ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম (ফেড)। কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাব মোকাবেলার জন্যই মূলত যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বুধবার দ্বিতীয় প্রান্তিকের জন্য প্রকাশিত ফেডের নতুন মুদ্রানীতি অনুযায়ী বেঞ্চমার্ক সুদহার শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ পয়েন্ট বাড়ানো হয়েছে। এতে ফেড তহবিলের সুদহার ৫ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশে। তথ্য বলছে, এ সিদ্ধান্তের ফলে ২০০৭ সালের পর ফেডের সুদহার ১৬ বছরের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। ২০২২ সালের মার্চ থেকে শুরু করে এ নিয়ে টানা দশমবারের মতো সুদহার বাড়াল ব্যাংকটি। তবে ফেডও ইঙ্গিত দিয়েছে, শিগগিরই সুদহার বৃদ্ধির চক্র বন্ধ করা হতে পারে। খবর এপি ও কিয়োদো এজেন্সি।

ধারাবাহিকভাবে সুদহার বাড়ানোর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তা পর্যায়ের পণ্যমূল্য আরো ব্যয়বহুল করে তুলেছে। এছাড়া ব্যবসায়ের জন্য ঋণ বা লেনদেনও অত্যন্ত চাপের মুখে পড়েছে। কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি মোকাবেলায় মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকটি সাম্প্রতিক সময়ে কঠোর মুদ্রা সংকোচন নীতি অব্যাহত রেখেছে। ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক ফার্স্ট রিপাবলিক ব্যাংকসহ বৃহৎ কয়েকটি ব্যাংকের পতনের পর আরো একবার বাড়ল ফেডারেল তহবিলের সুদহার। ফলে ব্যাংকগুলো রাতারাতি ৫ শতাংশের পরিবর্তে ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ সুদহারের মুখে পড়েছে।

প্রতিবেদন বলছে, নীতিনির্ধারণকারী ফেডারেল ওপেন মার্কেট কমিটির (এফওএমসি) দুই দিনব্যাপী বৈঠকের পর নতুন এ সুদহার নীতি ঘোষণা করে। কর্তৃপক্ষ উচ্চমূল্যস্ফীতি ও আর্থিক মন্দা মোকাবেলায় এ সিদ্ধান্তকে জরুরি ভাবছেন। বৈঠকের পর প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ফেড কঠোর চক্রীয় সুদহার নীতি থেকে বের হয়ে আসার ইঙ্গিত দেয়। এক বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে যেখানে মূল সুদহার প্রায় শূন্য থেকে এ স্তরে নিয়ে আসা হয়েছে। আগের বিবৃতিতে মূল্যস্ফীতি রোধে সুদহার বৃদ্ধি অব্যাহত রাখার কথা বললেও বর্তমানে বলা হচ্ছে, কিছু ক্ষেত্রে সুদহার বৃদ্ধির প্রয়োজন হতে পারে। সেটি নির্ভর করবে অত্যধিক প্রয়োজনের ওপর।

এফওএমসি এর আগের বিবৃতিতে বলেছিল, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশে ফিরিয়ে আনতে কিছু ক্ষেত্রে আর্থিক নীতি কঠোর করার প্রয়োজন। কিন্তু কমিটি এখন বলছে, মূল্যস্ফীতি ২ শতাংশে ফিরিয়ে আনতে অতিরিক্ত নীতি কঠোর করার ক্ষেত্রে বা সুদহার নির্ধারণে বিভিন্ন অর্থনৈতিক তথ্য ও কারণগুলো পর্যালোচনা করা হবে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের তথ্য বলছে, ফেড ২০০৬ সালে চক্রীয় সুদহার বন্ধ করেছিল। নীতিনির্ধারকদের ওই সময়কার বিবৃতির সঙ্গে বর্তমানের বিবৃতি কিছুটা সামঞ্জস্যপূর্ণ।

বিবৃতি প্রকাশের পর এক সংবাদ সম্মেলনে ফেড চেয়ারম্যান জেরোমি পাওয়েল বলেন, ‘ফেড এখনো সুদহার বৃদ্ধি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে বিবৃতির ভাষাগত পরিবর্তন অন্তত এ সম্ভাবনাকে নিশ্চিত করেছে। কেননা মূল্যস্ফীতি এখনো প্রধান উদ্বেগের বিষয় হিসেবে রয়ে গেছে। এ কারণে সুদহার বৃদ্ধির চক্র শেষ হয়েছে এটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। আমরা আরো কিছু সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য প্রস্তুত। জুন থেকে নীতিগত সিদ্ধান্তগুলো বৈঠকের ভিত্তিতে নেয়া হবে।’ এছাড়া এ বছরই সুদহার কমবে, বাজার বিশ্লেষকদের এ পূর্বাভাস প্রত্যাখ্যান করেন পাওয়েল। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করছি মূল্যস্ফীতি দ্রুতই কমতে যাচ্ছে না, এজন্য কিছুটা সময় লাগবে।’

ফেড চেয়ারম্যান বলেন, ‘ছয় সপ্তাহে তিনটি বড় ব্যাংকের পতন সম্ভবত অন্য ব্যাংকগুলোকে সচেতন করবে। একই পরিণতি এড়ানোর জন্য ঋণদান নীতি কঠোর করতে বাধ্য করবে। এছাড়া এ ধরনের ঋণ কমানো অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে সহায়ক হবে। মূল্যস্ফীতি কমিয়ে দেবে এবং ফেডের সুদহার আরো বাড়ানোর প্রয়োজনও তখন কমবে।’

এ বিষয়ে বৈশ্বিক আর্থিক পূর্বাভাস সংস্থা অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের প্রধান অর্থনীতিবিদ রায়ান সুইট বলেন, ‘যদি মূল্যস্ফীতি আরো ত্বরান্বিত হয়, তবে ফেড সুদহার বাড়াতে দ্বিধা করবে না। কেননা মূল্যস্ফীতি বন্ধে ব্যাংকটি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এ কারণে সুদহার বিরতি সাময়িক হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’

শেয়ার করুন