নিউইয়র্ক     শনিবার, ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচন

ভোট গণনায় দেরির কারণে ঝুলে আছে সিনেট ও হাউসের ভাগ্য, ধৈর্য্য ধরতে বলছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২২ | ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২২ | ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
ভোট গণনায় দেরির কারণে ঝুলে আছে সিনেট ও হাউসের ভাগ্য, ধৈর্য্য ধরতে বলছেন নির্বাচন কর্মকর্তারা

যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলীয় দুই রাজ্যে এখনও মধ্যবর্তী নির্বাচনের ভোট গণনা শেষ হয়নি। এই দুই রাজ্যের ফলাফলের উপরেই নির্ভর করছে সিনেটের নিয়ন্ত্রণ। এমন অবস্থায় নির্বাচনে কারচুপি এবং পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের অভিযোগ উঠেছে রিপাবলিকানদের তরফ থেকে। যদিও নির্বাচন কর্মকর্তারা সকল পক্ষকে ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে এসব ষড়যন্ত্র তত্ত্বও উড়িয়ে দিচ্ছেন তারা। এ খবর দিয়েছে সিএনএন।

খবরে জানানো হয়েছে, সিনেট কিংবা হাউস কোথাও এখনও কোনো দল নিশ্চিত জয় পায়নি। রিপাবলিকান দল হাউসের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পথে অনেকখানি এগিয়ে আছে। এখন পর্যন্ত ২১১ আসনে জয় পেয়েছে রিপাবলিকান দল। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিতের জন্য তাদের এখনও ৭ আসনে জয় প্রয়োজন। অপরদিকে ডেমোক্রেটদের জয় পাওয়া আসনসংখ্যা ১৯২।

সিনেটেও এক আসনে এগিয়ে আছে রিপাবলিকানরা। তবে সিনেটের নিয়ন্ত্রণ পেতে রিপাবলিকানদের ডেমোক্রেটদের থেকে দুই আসনে বেশি জয় পেতে হবে। অপরদিকে ডেমোক্রেটদের শুধু রিপাবলিকানদের সমান আসন পেলেই চলবে। কারণ ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিসের ‘কাস্টিং ভোট’ এর কারণে একটি অতিরিক্ত আসন পাবে ডেমোক্রেটরা।

সর্বশেষ সিনেটে ৪৮ আসন পেয়েছে ডেমোক্রেটরা এবং ৪৯ আসন পেয়েছে রিপাবলিকানরা। অর্থাৎ, সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে বাকি তিন রাজ্যের দুটিতে জয় পেতে হবে উভয় দলকে। এরমধ্যে জর্জিয়ার ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে, কিন্তু সেখানে কোনো দলের প্রার্থীই ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পাননি। তাই সেখানে আগামী ৬ই ডিসেম্বর রানঅফ বা দ্বিতীয় দফা নির্বাচন হবে। বাকি থাকা দুই রাজ্য নেভাডা এবং অ্যারিজোনার ভোট গ্রহণ এখনও চলছে। এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে চলেছেন রাজনীতিবিদরা। রিপাবলিকান দলের নেতারা অভিযোগ তুলছেন, নির্বাচনে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের কারণেই এই দেরি হচ্ছে। যদিও নির্বাচন কর্মকর্তারা সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।

সিএনএন বলছে, এখনও অ্যারিজোনার ৫ লাখ ৪০ হাজার ভোট এবং নেভাডার ৯৫ হাজার ভোট গণনা বাকি আছে। এর উপরে শুধু সিনেট নয়, হাউসের নিয়ন্ত্রণের হিসেবও নির্ভর করছে। এসব আসন ছাড়া রিপাবলিকানরা হাউসের নিয়ন্ত্রণ পাচ্ছে না। নির্বাচনের আগে তারা যে ‘রেড ওয়েভ’ বা বড় জয়ের আশা করছিল তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তারা হাউসের নিয়ন্ত্রণ পেলেও এ জন্য তাদের শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের এপ্রুভাল রেটিং খুবই বিপজ্জনক পর্যায়ে নেমে গেছে। রিপাবলিকানরা আশা করেছিল, প্রেসিডেন্টের কারণে ডেমোক্রেটরা কম ভোট পাবে। কিন্তু সেরকমটা দেখা যায়নি। রিপাবলিকানরা এগিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত দুই দলের ব্যবধান খুব বেশি থাকবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। অপরদিকে সিনেটে রিপাবলিকানরা এক আসনে এগিয়ে থাকলেও দুই দলেরই এখন আরও দুটি আসনে জয় প্রয়োজন। এরমধ্যে অ্যারিজোনাতে এগিয়ে আছে ডেমোক্রেটরা এবং নেভাডাতে এগিয়ে আছে রিপাবলিকানরা। ভোট গণনা বাকি থাকলেও এই অবস্থা পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম। ফলে সিনেটের নিয়ন্ত্রণ কোন দল নেবে তা বুঝতে তাকিয়ে থাকতে হবে আগামী ৬ই ডিসেম্বরের দিকে। এদিন জর্জিয়াতে দ্বিতীয় দফা নির্বাচন হবে। তাতে যে দলের প্রার্থী জয় পাবেন, সে দলই সিনেটের নিয়ন্ত্রণ পাবে।

এদিকে বিবিসি জানিয়েছে, নির্বাচনের ফলাফল দেরি হওয়ার আরও কারণ হলো-যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন পদ্ধতি কেন্দ্রীয় না। বিভিন্ন রাজ্য ভিন্ন নিয়ম-নীতি মেনে নির্বাচন আয়োজন করে। যার মধ্যে রয়েছে পোস্টাল ভোটের নিয়ম। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে পোস্টাল ভোট গণনার ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা নিয়ম রয়েছে। পোস্টাল ভোট হলো সেই ভোট যেখানে ভোটারদের কাছে ব্যালট পেপার পাঠানো হয় এবং পোস্ট অফিসের মাধ্যমে সেগুলো আবার ফেরত আনা হয়।

পোস্টাল ভোটের কার্যক্রম মূল নির্বাচনের আগেই শুরু হয়ে যায়। এবারের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ৪ কোটি ২০ লাখ আমেরিকান পোস্টাল ভোট সিস্টেমের মাধ্যমে ভোট দিয়েছেন। তারা ৮ নভেম্বরের আগেই নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। আর এত সংখ্যক মানুষ পোস্টাল ভোট দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত ফলাফল পেতে বিলম্ব করছে। কারণ মূল নির্বাচনের দিনের আগে এ ভোটগুলো গণনা করা হয় না। কিছু কিছু রাজ্যে নির্বাচন শেষ হওয়ার পর পোস্টাল ভোট গণনা করার নিয়ম আছে। আবার ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে নির্বাচন দিনের পরের সাতদিন পর্যন্ত পোস্টাল ব্যালট গ্রহণের সুযোগ রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এ বছর মধ্যবর্তী নির্বাচনে প্রায় ১২ কোটি ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। যা মোট ভোটারের প্রায় ৪৭ ভাগ। ২০১৮ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে যে সংখ্যক ভোটার অংশ নিয়েছিলেন সেবারের তুলনায় এবার ভোটার উপস্থিত কম। চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণায় দেরি হওয়ার আরেকটি কারণ হলো ভোট পুনর্গণনা করা। প্রতিদ্বন্দ্বিদের আপত্তি বা কারিগরি ত্রুটির কারণে আবারও ভোট গণনা করা হতে পারে। তাছাড়া রানঅফ নির্বাচনের বিষয়টিও ফলাফলে বিলম্ব হওয়ার অন্যতম কারণ।

শেয়ার করুন