নিউইয়র্ক     শুক্রবার, ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ট্রাম্প গ্রেপ্তার, জামিনে মুক্ত : মামলার পরবর্তী তারিখ ৪ঠা ডিসেম্বর

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ০৯ এপ্রিল ২০২৩ | ১২:০২ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২৩ | ১২:০৩ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
ট্রাম্প গ্রেপ্তার, জামিনে মুক্ত : মামলার পরবর্তী তারিখ ৪ঠা ডিসেম্বর

সাবেক পর্নো তারকা স্টরমি ড্যানিয়েলসকে ঘুস দেওয়ার মামলায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিউ ইয়র্কে গত মঙ্গলবার ৪ঠা মার্চ দুপুরে নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের ফৌজদারি আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফৌজদারি মামলায় ট্রাম্প গ্রেপ্তার হলেন বলে জানিয়েছে সিএনএন।

খবরে আরও বলা হয়, গ্রেপ্তারের পর ট্রাম্পের ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়া হয়। পরে তাকে আদালত কক্ষে নিয়ে অভিযোগ পড়ে শোনানো হয়। আদালতে হাজির করার আগে অল্পকিছু সময় ডিষ্ট্রিক্ট এটর্ণীর কার্যালয়ে অবস্থান করেন ট্রাম্প। গ্রেপ্তার থাকা অবস্থায় তাকে হাতকড়া না পরানো হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে পাহারায় রাখেন।

এর আগে এ মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করার জন্য সোমবার ৩ এপ্রিল দুপুরে নিউইয়র্কে পৌঁছান ট্রাম্প। পরদিন মঙ্গলবার ৪ঠা এপ্রিল দুপুরের দিকে ট্রাম্প টাওয়ার থেকে তিনি গাড়িবহর নিয়ে ম্যানহাটান ক্রিমিনাল কোর্ট ভবন এলাকায় আসেন। এ নিয়ে ওই এলাকায় ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়। সেখানে পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান গ্রহণ করেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ম্যানহাটন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির কার্যালয়ে পৌঁছার পর হাতকড়া পরানো না হলেও তার আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। আদালতকক্ষে যাওয়ার আগে এখানেই তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার হন। পরে তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। সেসময় সাবেক প্রেসিডেন্ট এর নিরাপত্তায় নিয়োজিত সিক্রেট সার্ভিস এর সদস্যরাও তাঁর সঙ্গে ছিলেন। এরপর অন্যান্য প্রক্রিয়া শুরু হয়। আদালত প্রাঙ্গণে ঢোকার সময় ট্রাম্প কোনো গণমাধ্যমকর্মীর সঙ্গে কথা বলেননি।

আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার হওয়ার কিছুক্ষণ আগে আদালতে যাওয়ার পথে গাড়ী থেকেই ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট দেন—‘আমি বিশ্বাস করতে পারছি না যে, এটা আমেরিকায় ঘটছে।’ এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প গ্রেপ্তার হওয়ার পর এক প্রতিক্রিয়ায় ডেমোক্র্যাট সিনেটর চাক শুমার আশা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘ট্রাম্প নিশ্চয়ই আদালতে ন্যায়বিচার পাবেন। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থায় বাইরের হস্তক্ষেপের কোনো সুযোগ নেই। আর বিক্ষোভ, প্রতিবাদ যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের অধিকার। তবে অবশ্যই তা শান্তিপূর্ণভাবে হতে হবে।’ চাক শুমার নিউইয়র্ক রাজ্যের প্রতিনিধিত্বকারী দুই ডেমোক্র্যাট সিনেটরের একজন। অন্যদিকে হোয়াইট হাউস থেকে এ মামলার বিষয়ে আগের মতোই কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে।

আদালতে উপস্থিত হতে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও ২০২৪ সালে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য রিপাবলিকান মনোনয়ন প্রার্থীদের মধ্যে এগিয়ে থাকা ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার (৩ এপ্রিল) ফ্লোরিডার সমুদ্র সংলগ্ন বাড়ি থেকে নিউইয়র্কে পৌঁছেন। ফ্লোরিডার বাড়ির কাছের ওয়েস্ট পাম বিচ থেকে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত বিমান তাকে নিয়ে সাড়ে ৩ ঘণ্টা পর নিউইয়র্কের কুইন্সের লা গার্ডিয়া বিমানবন্দরে এসে নামে। নীল স্যুট ও লাল টাই পরা ট্রাম্প একাই বিমান থেকে নেমে একটি এসইউভিতে চড়ে ম্যানহাটনের ট্রাম্প টাওয়ারের উদ্দেশে রওনা দেন। এ সময় একটি গাড়িবহর তার এসইউভিকে অনুসরণ করে। ট্রাম্প টাওয়ারের সামনে নেমে ট্রাম্প উপস্থিত জনতার উদ্দেশে হাত নাড়লেও কোনো কথা না বলে হেঁটে ভেতরে চলে যান। সেখানে রাতযাপন করেন তিনি। তিনি উপস্থিত হওয়ার আগে থেকে সেখানে তার সমর্থকরা দলে দলে এসে জড়ো হতে থাকেন। তারা তার পক্ষে স্লোগান দিতে থাকেন। অন্যদিকে তার বিচারের দাবিতে বিপুলসংখ্যক মানুষকে সেখানে প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। দেশ বিদেশের অনেক সাংবাদিক বিচার প্রক্রিয়ার খবর কাভার করার জন্য সেখানে উপস্থিত হন।

গত বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ)ম্যানহাটনের গ্র্যান্ড জুরি আদালত ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক বা বর্তমান প্রেসিডেন্টদের মধ্যে ট্রাম্প (৭৬) হচ্ছেন প্রথম ব্যক্তি, যিনি ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন। স্টর্মি ড্যানিয়েলস নামে এক সাবেক পর্নো তারকা দাবি করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ২০০৬ সালে তার যৌন সম্পর্ক হয়েছিল। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে এ বিষয়ে মুখ না খুলতে ট্রাম্প তাকে ১ লাখ ৩০ হাজার ডলার ঘুষ দেন। এ ঘটনায় ম্যানহাটনের আদালত সাবেক এ প্রেসিডেন্টকে অভিযুক্ত করেন। ঘটনা অস্বীকার করে ডোনাল্ড ট্রাম্প একে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেন। ম্যানহাটনের ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি এলভিন ব্র্যাগের দপ্তর জানিয়েছিল, নিয়ম অনুযায়ী ট্রাম্পকে আদালতে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করতে হবে আর আদালতে হাজির না হলে তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। তার আত্মসমর্পণ ঘিরে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে আশঙ্কায় পুলিশ একদিন আগে থেকেই ম্যানহাটন আদালত ও এর আশপাশের এলাকাগুলোতে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়। ধাতব ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে ফেলা হয় ট্রাম্প টাওয়ার। বন্ধ করে দেওয়া হয় আদালত প্রাঙ্গণের সামনের রাস্তা।

সুমি/পরিচয়

শেয়ার করুন