নিউইয়র্ক     শনিবার, ১৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কবিতার মাসে ‘সাহিত্য একাডেমি,নিউইয়র্ক’র মাসিক সাহিত্য আসর অনুষ্ঠিত

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ মে ২০২৪ | ০৯:১১ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০৪ মে ২০২৪ | ০৯:১১ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
কবিতার মাসে ‘সাহিত্য একাডেমি,নিউইয়র্ক’র মাসিক সাহিত্য আসর অনুষ্ঠিত

কবিতার মাস এপ্রিল মাস। গত ২৬ এপ্রিল শুক্রবার, উডসাইডের একটি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘সাহিত্য একাডেমি,নিউইয়র্ক’র মাসিক সাহিত্য আসর। আসর সঞ্চালনায় ছিলেন একাডেমির পরিচালক মোশাররফ হোসেন, তাঁকে সহযোগীতা করেছেন আবৃত্তিকার শুক্লা রায়। অনুষ্ঠানের শুরুতেই পরিচালক সকলের প্রতি বাংলা নতুন বছর ও ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানান।

কবি কাজী আতীকের স্বরচিত কবিতা পাঠের মধ্য দিয়ে সাহিত্য আসর শুরু হয়।

এরপর, আলোচনায় অংশ নিয়ে সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, সাহিত্য একাডেমিতে আসি সাহিত্যিকদের উষ্ণতা পেতে। লেখক আদনান সৈয়দের আলোচিত বই দু’টোর সঙ্গে একাত্মবোধ হয়ে তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ কয়েক হাজার চিঠি লিখেছেন, ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর সাহিত্য মননকে জানার জন্য তাঁর চিঠিপত্র পড়তে হবে। ‘ওই দেখা যায় আমার বাড়ি’ বইটিতে ভারত বিভাগের বেদনা ফুটে উঠেছে, এতবছর পর আজকেও আমরা অত্যন্ত দুর্যোগপূর্ণ বিশ্বে আছি। ব্রিটিশ শাসনের শেষের দিকে আমাদের যে একটা সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি ছিল, দুঃখজনক হলেও সত্যি আজকে আমরা ওই জীবনের দিকেই যাচ্ছি। গাজায় ভয়ংকর একটা অবস্থা যাচ্ছে, প্রতিনিয়ত আমরা সেজন্য বিষন্ন বোধ করি। আমাদের বিশ্বের অবস্থা খুব একটা সুস্থ নয়, বিকারগ্রস্থ।

লেখক হাসান ফেরদৌস বলেন, তিন ঘন্টা ধরে সাহিত্য একাডেমির আসরে উপস্থিত আছি, সকলের পাঠ, আলোচনা শুনেছি, লম্বা সময়, কিন্তু খারাপ লাগে নি, আনন্দ পেয়েছি। তিনি বলেন, এবারের নিউইয়র্ক বইমেলায় আমরা সাহিত্য একাডেমিকে সংযুক্ত করতে পেরেছি, অন্যান্য সাহিত্য সংগঠনগুলো এসেছে। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করবো এবারের বইমেলাকে লেখকের মেলা করে তোলার জন্য। কবিতা পাঠ, নতুন বই আলোচনা, বইয়ের মোড়ক উন্মোচন সহ অন্যান্য আয়োজনে লেখকরা অংশগ্রহণ করতে পারবে, তবে সেজন্য আগে থেকে লেখকদের তালিকাভুক্ত হতে হবে। এবারের বইমেলার আহবায়ক হাসান ফেরদৌস বইমেলার অন্যান্য আয়োজনের কথাও পর্যায়ক্রমে সকলের সামনে তুলে ধরেন।

সাংবাদিক ও লেখক মনজুর আহমেদ বলেন, সাহিত্য একাডেমির অগ্রযাত্রা আমাকে বিস্মিত করে। মাসের পর মাস যাদের সঙ্গে দেখা হয় না, যাদের সঙ্গে দেখা হওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার, এখানে একসঙ্গে তাদের সান্নিধ্য পাচ্ছি। তিনি স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন।

কবি শামস আল মমীনের কবিতা নিয়ে লেখা ‘বাংলা কবিতার নতুন দিগন্ত’ বইটি নিয়ে লেখক আবেদীন কাদের বলেন, ঢাকায় শামস আল মমীন যখন কবিতা লেখা শুরু করেন তখন কিছু বিশিষ্ট জনেরা তাঁর কবিতা নিয়ে লিখেছেন। সলিমুল্লাহ খানের প্রথম লেখাটি আমার চোখে পড়ে ১৯৯৫ সালে, পরে শিকদার আমিনুল হক, চঞ্চল আশরাফ, আহমাদ মাজহার, আদনান সৈয়দ, এবিএম সালেহ উদ্দিন সহ আরো কয়েকজন তাঁর কবিতা নিয়ে লেখেন। বছর দুয়েক আগে সলিমুল্লাহ খান লেখাগুলো নিয়ে বই বের করার প্রস্তাব দিলে আমরা বন্ধুরা মিলে সম্মত হই। কবিতার প্রবন্ধ সম্বলিত বইটি চাইলে আপনারা পড়তে পারেন, তবে কবিতা লেখা ও পড়ার জন্য বইটি পড়তে হবে, এমন কোনো কথা নেই।

সাপ্তাহিক ঠিকানা পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মোহাম্মদ ফজলুর রহমান বলেন, প্রথম যেদিন সাহিত্য একাডেমিতে আসি সেদিন প্রচুর তুষারপাত ছিল, নিউইয়র্ক সিটি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলো, ভেবেছিলাম কেউ আসবে না, কিন্তু এসে আসর ভর্তি মানুষ দেখে বিস্মিত হয়েছিলাম। সাহিত্যিকরা সাহিত্য ভালোবেসে সাহিত্য একাডেমিতে আসে, এবং তারাই সাহিত্য একাডেমিকে অনন্তকাল ধরে টিকিয়ে রাখবে।

কবি তমিজ উদদীন লোদী বলেন, স্রোত বাহী নদীর মতো কবিতা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। কবি এনহেদুয়ানা যে কবিতা আলোচনা শুরু করেছিলেন তা অব্যাহত আছে, এবং থাকবে। কবি শহীদ কাদরী প্রায়শই বলতেন, কবিতার রাস্তাটি কিন্তু কুসুমাস্তীর্ণ নয়, কবিতার রাস্তা অত্যন্ত বন্ধুর, সেই পথটি বিনয় ও নিষ্ঠার সঙ্গে অতিক্রম করা গেলে কবিতার অনেকখানি স্পর্শ করা যাবে। কবিতা লেখা এতো সহজ নয়। আমরা যারা কবিতার পথে হাঁটছি, কবিতা আত্মস্থ করতে চাইছি, তাদেরকে আগে কবিতা বুঝতে হবে, অমসৃণ পথকে মসৃণ করতে শিখতে হবে, তখনই কবিতার পথে সচল হাঁটতে পারবো। বয়োকনিষ্ঠদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কবিতা লিখে আত্মশ্লাঘায় ভোগা যাবে না, তৃপ্তি সৃষ্টির জন্য ভয়ানক ব্যাপার। অতৃপ্তি থেকে কবি অন্বেষণের পথে হাঁটবে, এবং সৃষ্টিতে নিমগ্ন থাকবে।

অধ্যাপিকা হুসনে আরা বলেন, কবিতা লিখতে পারি না, কিন্তু কবিতা ভালোবেসে সাহিত্য একাডেমিতে আসি। কবিরা অত্যন্ত শক্তিশালী, তারাই পারবে পৃথিবীকে মানবিক, সুস্থ ও সভ্য করে গড়ে তুলতে।

লেখক নীরা কাদরী বলেন, পুরো এপ্রিল মাসজুড়ে নানানরকম জমজমাট আয়োজনে আমরা আপ্লূত ছিলাম। আজকেও অনেক নতুন মুখ দেখছি। সাহিত্য একাডেমিতে তাদেরকে শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনি স্বরচিত লেখা পাঠ করেন।

লেখক আদনান সৈয়দ আসরে দুইটি বই নিয়ে আলোচনা করেন। প্রথম বই ডি.এইচ লরেন্সের ‘দি সিলেক্টেড লেটারস অফ ডি.এইচ লরেন্স’বইটি সম্পর্কে আলোচনায় বলেন, একজন শিল্পীকে আবিষ্কার করা খুব সহজ নয়, আবার খুব সহজও। সহজ এই অর্থে একজন লেখককে, শিল্পীকে তাঁর চিঠিপত্র দিয়ে কিন্তু আবিষ্কার করা যায়। তাঁর সেই সমাজ, মনমানসিকতা, বোধ, দর্শন, দুঃখ-সুখ সেগুলো চিঠিপত্রে প্রকাশ পায়। এই বইয়ে বিভিন্নভাবে ব্যক্তি লরেন্স, প্রফেশনাল লরেন্স, প্রেমিক লরেন্সকে পাঠক আবিষ্কার করতে পারবেন। তাঁর কয়েকটি চিঠি তিনি পাঠ করেন।

দ্বিতীয় বই মন্দিরা ভট্টাচার্যের ‘ওই দেখা যায় বাড়ি আমার’ বইটি সম্পর্কে তিনি বলেন, বইটি দেশভাগের এক অনন্য দলিল। বইয়ের নামটি পড়লেই কল্পনায় যেন আমরা আমাদের বাড়িটি দেখতে পাই। সেই গাছতলা, সেই চাপকল, আমরা নস্টালজিক হয়ে পড়ি। আমরা চাইলেই আমাদের বাড়ি যেতে পারি, কিন্তু মন্দিরা চাইলেই পারে না। বইটিতে ভারত বিভাগের বেদনা ফুটে ওঠেছে।

লেখক এ.বি.এম সালেহ উদ্দিন বলেন, মানুষ যখন থেকে কথা বলছে তখন থেকেই মানুষের ভেতর কবিতা সৃষ্টি হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৬ সালে আমেরিকায় এপ্রিল মাসকে কবিতার মাস হিসেবে ঘোষণা করা যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত। এপ্রিল মাসে আমেরিকায় অনেক কবিতার অনুষ্ঠান হয়। আমরা ভাগ্যবান, শুধু এপ্রিল মাস নয়, পুরো বছরজুড়ে সাহিত্য একাডেমিতে আমরা কবিতা চর্চা করতে পারি।

লেখক সোনিয়া কাদের বলেন, পৃথিবীর নানান প্রান্ত হতে সাহিত্যিকরা এসে সাহিত্য একাডেমিতে একাকার হয়ে গেছেন, আমিও এর ব্যতিক্রম নই। শারীরিক অসুস্থতার জন্য এখন নিয়মিত আসতে না পারলেও সর্বদা আমার প্রাণে সাহিত্য বিরাজমান। তিনি স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন।

ওবায়দুল্লাহ মামুন বলেন, সাহিত্য একাডেমির শুরু থেকে ছিলাম, আছি, থাকবো। প্রায় ৪০ বছর আগে দেশে থাকাকালীন ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় সাহিত্য একাডেমি নামের সংগঠনে যুক্ত ছিলাম, নিউইয়র্কে এসেও সাহিত্য একাডেমির সাথে আছি, ভালো লাগছে।

নাট্যশিল্পী খাইরুল ইসলাম পাখী বলেন, সাহিত্য একাডেমিতে উপস্থিত সকলে আমার কাছে শ্রদ্ধার, ভালোবাসার। পড়তে ভালোবাসি, লেখকদের টানেই এখানে আসি।

যথারীতি এবারের আসরেও কবি বেনজির শিকদার কর্তৃক নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বই দেয়ার ব্যবস্থা ছিলো।

এবারের আসরে আবৃত্তি করেন, পারভীন সুলতানা, তাহরীনা পারভীন প্রীতি, সুমন শামসুদ্দিন, মুনমুন সাহা, এম.এ সাদেক, স্বাধীন মজুমদার।

আসরে স্বরচিত পাঠ করেন, রাণু ফেরদৌস, শামস আল মমীন, মিনহাজ আহমেদ, ধনঞ্জয় সাহা, বেনজির শিকদার, রিমি রুম্মান, ফারহানা হোসেন, সুরীত বড়ুয়া, লুৎফা শাহানা, মনিজা রহমান, মাসুম আহমদ, জেবুন্নেছা জ্যোৎস্না, মাসুমা রহমান, শাহীন ইবনে দেলোয়ার, নিবরাস চৌধুরী, মিয়া এম আছকির, আব্দুল হাসিব, সবিতা দাস, পলি শাহীনা প্রমুখ।

আসরে উপস্থিত ছিলেন, আহমেদ মাজহার, ইব্রাহীম চৌধুরী খোকন, ফরিদা ইয়াসমিন, রীপন শওকত রহমান, মোহাম্মদ নাসির শিকদার, ফরহাদ হোসেন বাবু, শিউলি কাজী, আকবর হায়দার কিরণ, মাহফুজুর রহমান, তাহমিনা শহীদ, সেলিম আফসারী, আজিজুল হক মুন্না, এলি বড়ুয়া, শাফী মাহমুদ, উইলি মুক্তি, ইমাম চৌধুরী, মোহাম্মদ মহিবুর রহমান, আব্দুল আজীজ, মনোয়ারা বেগম, রয়েস রহমান, আবদুন নূর, আয়েশা চৌধুরী, শাহ আলম, মোজাম্মেল হক, উত্তম কুমার সাহা প্রমুখ।

উপস্থিত সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা, এবং আগামী সাহিত্য আসরের আগাম আমন্ত্রণ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানেন মোশাররফ হোসেন।- পলি শাহিনা প্রেরিত

শেয়ার করুন