১ . ভাবনা
পাখিদের ওড়াওড়ি মুক্ত স্বাধীন
হিমশীতল সাইবেরীয়া কি হিমালয়
ডানা ঝাপটানো পাখির দল নিত্য উল্লাসে মাতে
এ গ্রহে-মানুষ কেবল গৃহবন্দি।
টানাপোড়েনের এই সংসার, উনুন, হাঁড়ি-পাতিল
বিষাদে ভরা সকাল দুপুর
ক্লান্তির রাত, তবু থমকে যাওয়া সিলিং ফ্যান
ঘুরে ঘুরে শীতলতা নামায়
তা-ও কম কী?
থাকনা বন্দিজীবন গ্যাস পাইপটির পাশে
উত্তুরে হাওয়ায় থাকুক খোলা জানালা
বাতাসটুকু-ই বা কম কী?
২ . বিসর্জন
ভালোবেসে, যত্নে রেখে
তোমার ঘরে আমাকে এনেছিলে বধূ বরণ বেশে
আমিও খুশি হলাম তোমাকে পেয়ে।
তারপর কি যে হলো!
সময় না ফুড়াতেই তোমাকে হারালাম
এই তো কিছুদিন আগেও বাসন্তীরঙা সাজে-
আমার মুখখানি ছিল তোমার ভীষণ প্রিয়
ভুল করে হলেও বলতে, ভালোবাসি
বলতে-তুমি আমায় রেখেছো বেশ ভালো
আজ সেটুকুও বলা হয় না
আজ তোমার কাছে আমি ভীষণ কালো।
এ তুমি কেমন তুমি,
নিজ ভুলে কাঁদাও আমায়
এ তুমি কেমন তুমি, আলোতে মুখ লুকাও?
ভুলে যাও তুমি নিঃসঙ্গ সময়ের সঙ্গী ছিলাম আমি
কোনো একদিন
ঘর দিয়েছি, সংসারে রেখেছি
আঁধারে আলো জ্বালাতে,
নিজেকে তোমার কাছে এক মুহূর্ত গচ্ছিত রেখে
পিতা বানিয়ে পরিচয় করিয়েছি তোমার পুরুষত্বের।
শুধু তোমাকে ভালোবেসে
বিসর্জন দিয়েছি এক জীবনের স্বপ্ন, খণ্ড খণ্ড সুখ
বদলে তুমি দিলে; একাকিত্ব।
৩ . আমার চাই
আমার একটা- একলা ভোর চাই
যে ভোরে ঘুম ভাঙতেই,
দিনের নতুন সূর্যের ঝলক জানালার ফাঁকে এসে
আমার শরীর ছুঁয়ে যাবে
আমি শিশির ছোঁয়াব পা’য়ে
শিউলি কুড়াতে কুড়াতে, কখনো কুয়াশা ভোরে
এক নতুন আমাকে খুঁজে বেড়াবো।
আমার একটা-একলা দুপুর চাই
যে দুপুরটা হবে আলসেমির দুপুর, সে দুপুরে
স্বপ্নের ঘোরে জলরং নিয়ে খেলতে বসবো
এঁকে যাবো না বলা সব বেদনার গল্পটিত্র।
আমার একটা-একলা বিকেল চাই
যে বিকেলে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে
পুরানো ডায়েরির পাতা উল্টে ধূসর রঙিন স্বপ্নে গাঁথা
স্মৃতির মালাগুলো চোখ বন্ধ করে দেখা হবে।
আমার একটা-একলা সন্ধ্যা চাই
যে সন্ধ্যায় নদীর তীর ঘেঁষে সবুজ গালিচায় বসে
পাখিদের নীড়ে ফেরা দেখা হবে
দেখা হবে আলো আঁধারীর সন্ধ্যা ছায়ায় কেমন করে
আমি ডুবে যাই তোমার মায়ায়।
আমার একটা-একাকী রাত্রি চাই
সে রাত্রিতে ভরা পূর্ণিমার তোমায় নিয়ে-নীল জোছনায় ভিজতে চাই,
জোনাকি পোকার মিটিমিটি আলোতে নিজেকে সাজিয়ে তোমার প্রিয় কবিতা হতে চাই
তোমার মোহে ডুব সাঁতারে সব কষ্ট ভুলে
তোমাকে আমার বাঁধনে বাঁধতে চাই।
৪ . আমার আমি
সেই আমি আর এই আমি-
কে বেশি ভালো আছি?
সেই আমিটা বড্ড দুরন্তপনা ছিল
অভিমান আহ্লাদে সবার নজর কেড়ে
ভালোবাসায় মাখামাখি, হাসি খুশির দিন ছিল।
সেই আমিটা; শুধুই আমি ছিলাম।
এই আমিটা বড্ড শান্ত, কোমল
সূর্যের আলো ঘরে ঢুকতেই জানালার পর্দা টেনে নিয়ে
দায়বদ্ধ জীবনের ত্যাগ আর তাপে;
পার্থক্য খোঁজে বেড়ায়-এই আমি।
এগোতে চেয়েছিলাম সামনে
আজ দু কদম ফেলতেই পিছনে ফিরে যাই
যদি ফিরে যেতে পারতাম সেই আমিতে
জাপটে ধরে সময়কে বেঁধে দিতাম ঘড়ির কাঁটায়
তারপর, টিকটিক শব্দ থামিয়ে সুর তুলতাম-সিম্ফোনির।
৫ . সে
আমি তাকে দেখি জারুলের বেগুনি রঙে
ঝাঁকড়া চুলে হেঁটে যায় একা
আমি এমনই কাউকে খুঁজে চলেছি
যে প্রেমে পড়বে না, তবে ভালোবাসবে
দুঃখ পেলে কাঁদবে না, তবে পাশে এসে বসবে
আমি এমনই কাউকে খুঁজে চলেছি
যার হাত আমাকে ইনিয়ে বিনিয়ে স্পর্শ করবে না
বরং আমার একাকিত্বের সাথী হবে
এমন একজন সত্যিই হেঁটে যায়-স্বপ্নলোকে
যেতে যেতে এলোমেলো আমাকে গুছিয়ে দেয়
হাতটি ধরে বলে, আজকের সকালটা দেখো,
কত সুন্দর
দেখো! দেখো! বালিহাঁসেরা কেমন করে স্নান করছে!
আমি খিলখিলিয়ে হেসে উঠতেই, সে আমার দিকে তাকায়
হাতটি ধরে বলে, তুমি আমার বন্ধু হবে?
৬ . একা হয়ে যাই
মাঝে মাঝে একা হয়ে যাই
চারিপাশে এত মানুষের কোলাহল, তবু
মনে হয় যেন আমার একটি প্রিয় কণ্ঠের বড্ড অভাব।
ব্যস্ত শহর, প্রকৃতির মনোরম সৌন্দর্যের মাঝেও
একাকিত্বের সুর মনে বেজে উঠে হুটহাট
সামনে খোলা আকাশ, প্রিয় নীল
অথচ নিজেকে হারিয়ে ফেলি পাখিদের গুঞ্জনে
একটি মুহূর্ত খুঁজে ফিরি যা একান্তই আমার হবে।
কানের পাশে প্রিয় কণ্ঠের শব্দের মিছিলেও ভাবি
স্পর্শে স্পর্শে যদি মনের তানপুরাটা বেজে উঠতো।
দিবারাতি স্বপ্নের সাথে এক্কা দোক্কা খেলি
খেলতে খেলতে আবারো একা হয়ে যাই।