নিউইয়র্ক     মঙ্গলবার, ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুবাইয়ে বাংলাদেশিদের বাড়ি কেনার হিড়িক

বাংলাদেশ ডেস্ক

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৩ | ১২:২৪ পূর্বাহ্ণ | আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২৩ | ১২:২৯ পূর্বাহ্ণ

ফলো করুন-
দুবাইয়ে বাংলাদেশিদের বাড়ি কেনার হিড়িক

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইফাইল ছবি: রয়টার্স

 মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম ও কানাডার বেগমপাড়ার পর এবার সংযুক্ত আরব আমিরাতে গত কয়েক বছরে বাড়ি কেনায় হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন বাংলাদেশিরা। ২০২০-এর জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত বাংলাদেশিরা দুবাইয়ে ১২ কোটি ৩০ লাখ দিরহাম বা ২৮৮ কোটি টাকার জমি-বাড়ি কিনেছেন। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম অ্যারাবিয়ান বিজনেস এমন তথ্য জানিয়েছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজের (সিএডিএস) সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরি জানিয়েছে, বাংলাদেশে তথ্য গোপন করে দুবাইয়ে প্রপার্টি (সম্পদ) কিনেছেন ৪৫৯ বাংলাদেশি। ২০২০ সাল পর্যন্ত তাদের মালিকানায় সেখানে মোট ৯৭২টি প্রপার্টি কেনার তথ্য পাওয়া গেছে, কাগজে-কলমে যার মূল্য সাড়ে ৩১ কোটি ডলার।

অ্যারাবিয়ান বিজনেস জানিয়েছে, দুবাইয়ে যেসব দেশের মানুষ জমি-বাড়ি কিনছেন, তাদের মধ্যে বাংলাদেশিরা সামনের সারিতে। এই অর্থ বৈধ পথে দেশ থেকে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। ফলে তা অবৈধ পথেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দুবাইভিত্তিক ২০টি বাংলাদেশি আবাসন কোম্পানির ৩০ জন এজেন্টের মাধ্যমে এসব সম্পদ কিনেছেন বাংলাদেশিরা। এই তালিকায় আছেন ব্যবসায়ী, রাজনীতিক ও আমলারা। দুবাইয়ের এসব বিনিয়োগের গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়। এ ছাড়া দেশটিতে ১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হলে গোল্ডেন ভিসা দেয়া হয়।

রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান দৈনিক বাংলাকে বলেন, দুবাইয়ে বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ আগেও ছিল, বর্তমানে আরও বেড়েছে। বাংলাদেশ থেকে বৈধ কোনো উপায়ে বৃহৎ বিনিয়োগে বিদেশে সম্পদ কেনার সুযোগ নেই। সেখানে বাড়ি কেনার মাধ্যমে যে বিনিয়োগ হয়েছে, তার সিংহভাগই অবৈধভাবে পাচারের মাধ্যমে হয়েছে, সেটি বলা যায়। মালয়েশিয়া ও কানাডার বেগমপাড়াতেও এখন বাড়ি করার প্রবণতা দেখা গেছে। তবে দুবাই এখন বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের বড় গন্তব্য হয়ে উঠেছে। এ বিষয়ে আগেও অনেক আলোচনা হয়েছে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না।

তিনি বলেন, দুবাইয়ে এ প্রবণতা চালু থাকার দুটি কারণ। প্রথমত, দুবাই সরকারও শুধু বাংলাদেশিদের নয়, সেখানে যেকোনো দেশ থেকে অর্থ নিয়ে আসাকে উৎসাহ দেয়। তারা নানাভাবে এর সুযোগ দেয়। কোনো বিদেশি বিনিয়োগ হলেও সেটির অর্থের উৎস সম্পর্কেও জানতে চায় না। এ জন্য দুবাইয়ে বিনিয়োগের অবাধ সুযোগ তৈরি হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশেও এর প্রতিকার বা প্রতিরোধমূলক কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। কারণ বিনিয়োগকারী বা অর্থ পাচারকারীরা কোনো ছোট ব্যক্তি নয়। তারা ধনী ও প্রভাবশালী। এ জন্য এ বিষয়টি নিয়ে এখানকার কর্তৃপক্ষ খুব একটা উচ্চবাচ্য করে না।

বিশ্বের ধনীদের দ্বিতীয় ঘর হয়ে উঠছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। কয়েক বছর ধরেই এই বাড়বাড়ন্ত চলছে। গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে দুবাইয়ের রেকর্ডসংখ্যক জমি-বাড়ি বেচাকেনা হয়েছে। দেশটির সরকারি নথি অনুসারে, গত বছর দুবাইয়ে মোট ৯০ হাজার ৮৮১টি জমি ও বাড়ি কেনাবেচা হয়েছে। এর আগে ২০০৯ সালে ৮১ হাজার ১৮২টি জমি-বাড়ি বেচাকেনা হয়েছে। শুধু ডিসেম্বরেই দেশটিতে আট হাজার আবাসন লেনদেন হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬৩ শতাংশ বেশি। খালি জায়গা বিক্রি বেড়েছে ৯২ দশমিক ৫ শতাংশ এবং প্রস্তুতকৃত বাড়ি বিক্রি বেড়েছে ৩২ দশমিক ৪ শতাংশ।

চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দুবাইয়ে আবাসনের দামও বেড়েছে। গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত গড়ে সম্পদের দাম বেড়েছে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। এর মধ্যে ভিলা বা সুরম্য বাড়ির দাম বেড়েছে ১২ দশমিক ৮ শতাংশ এবং অ্যাপার্টমেন্টের দাম বেড়েছে ৯ শতাংশ।

বিশ্বের ধনকুবেরদের প্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে দুবাই। সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার অতি ধনীদের দীর্ঘমেয়াদে ‘গোল্ডেন ভিসা’ দিচ্ছে। বিদেশিদের বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধও শিথিল করা হচ্ছে। লেনদেনের ৭০ শতাংশ হচ্ছে নগদ অর্থে। পৃথিবীর সব দেশের ক্ষমতা ও সামর্থ্যবানরা সেখানে বাড়ি কিনছেন। রাশিয়ার তেল ব্যবসায়ীরা পশ্চিমা দেশগুলোতে নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ে যেমন দুবাইয়ে বাড়ি কিনছেন, তেমনি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ফুলেফেঁপে ওঠা পার্শ্ববর্তী আরব দেশগুলোর ব্যবসায়ীরাও পাড়ি জমাচ্ছেন সেখানে। ফলে দুবাই এখন বহুজাতিক ও বহু সাংস্কৃতিক নগর হয়ে উঠছে। ব্রিটিশ ফুটবলার ডেভিড বেকহাম, বলিউড তারকা শাহরুখ, আম্বানি- তারা এখন পরভূমে পরস্পরের প্রতিবেশী।

ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরির হিসাব অনুযায়ী, দুবাইয়ে মোট প্রপার্টির বাজার ব্যাপ্তি ৫৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের। এর মধ্যে ২৭ শতাংশ আছে বিদেশি মালিকানায়। তথ্য গোপনের কারণে এর মধ্যে ৭ শতাংশ প্রপার্টি মালিকের জাতীয়তা নিশ্চিত করা যায়নি। সার্বিকভাবে প্রপার্টি খাতের বিদেশি মালিকের হার চিহ্নিত ২৭ শতাংশের চেয়েও অনেক বেশি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে দুবাইয়ে বিদেশিদের মালিকানাধীন প্রপার্টির মূল্য অন্তত ১৪ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। দুবাইয়ের অফশোর প্রপার্টির বাজার ব্যাপ্তির দিক থেকে এখন লন্ডনের অফশোর প্রপার্টির বাজারের দ্বিগুণেরও বেশিতে দাঁড়িয়েছে। যদিও দুবাইয়ের মোট জনসংখ্যা লন্ডনের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশের কিছু বেশি। সুত্র দৈনিক বাংলা

সুমি/পরিচয়

শেয়ার করুন