নিউইয়র্ক     মঙ্গলবার, ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ  | ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কলকাতায় প্রথম বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসব অনুষ্ঠিত

পরিচয় ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২২ | ০৩:৫৪ অপরাহ্ণ | আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২২ | ০৩:৫৪ অপরাহ্ণ

ফলো করুন-
কলকাতায় প্রথম বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসব অনুষ্ঠিত

কলকাতা : কলকাতার যোগেশ মাইম একাডেমিতে গত রবিবার (১৮ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত হলো প্রথম ভারত বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসব। উক্ত উৎসবে নিউইয়র্ক প্রবাসী নাট্যকার খান শওকত রচিত ৪টি নাটক মন্চস্থ করেছে দুই বাংলার ৪টি নাট্য গ্রুপ। বাংলাদেশ স্বাধীনের পর দুই বাংলার নাট্যকর্মীদের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর জীবনভিত্তিক নাটক নিয়ে এবারই প্রথম ভারত বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসব উদযাপিত হলো।

যথাযোগ্য ভাব গাম্ভীর্যের সাথে দুই দেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের পর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রদীপ প্রজ্জলন করেন উৎসবের প্রধান অতিথী বাঁকুড়ার সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রবীন নাট্যজন গোবিন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়। এসময় মন্চে উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব সুমন চক্রবর্তী, ষ্টার জলসা/জি-বাংলার বিশিষ্ট অভিনেতা বিমান চক্রবর্তী, অংশগ্রহনকারি ৪টি নাট্যদলের ৪ জন নির্দেশক এজহারুল হক মিজান, সন্জয় সাহা, কিশোর দত্ত ও সমিত চৌধুরী, টালীগন্জ থেকে আসা চলচ্চিত্র প্রতিনিধিদলের সদস্য ঈদ্রজিৎ সান্যাল, কুন্তল, বিতান, অমিত, রতন, আগরতলা নিউজের ইন্দ্রজিৎ গুপ্তা, আশুতোষ কলেজের অধ্যাপক ঋষি বাবু এবং কয়েকজন নাট্য পরিচালক। তাদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন সুমন চক্রবর্তী। তিনি দুই বাংলার চলচ্চিত্রে বঙ্গবন্ধুর কথা এবং ভারত বাংলাদেশ মৈত্রীর কথা তুলে ধরার আহবান জানান।

উদ্বোধনী পর্বে প্রদীপ প্রজ্জলনের পর নাট্য উৎসবের থীম সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। সেটি রচনা করেন খান শওকত এবং সুর দিয়েছেন নিউইয়র্কের শিল্পকলা একাডেমির সাবেক সাধারন সম্পাদক ও বর্তমান সহ সভাপতি কন্ঠশিল্পী মিলন কুমার রায়। থীম সঙ্গীতের কথাগুলো হলোঃ দুই বাংলার নাট্যমোদিরা ভালোবাসায় এক হবে, হাসবো আমরা মিলবো আমরা বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসবে। দুই বাংলার নাট্যমোদিরা ভালোবাসায় এক হবে, হাসবো আমরা মিলবো আমরা বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসবে। এসো গাই গান, ভালোবাসার গান, এসো গাই গান সম্প্রীতির গান …../ সাতচল্লিশে ভাগের আগে, আমরা কি আলাদা ছিলাম, ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র হওয়াতে, বিভক্ত হয়ে গেলাম। কাঁটাতারের সীমানা থাকুক দেশ ভাগের নামে, আমরা মিলবো ভাষার টানে ভালোবাসার খামে। এসো গাই গান, ভালোবাসার গান …./ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গড়তে মুজিব হলেন শহীদ, আজও বাঙালিদের মন ও মননে মুজিব চিরন্জীব। দুই বাংলার নাট্যমোদিরা ভালোবাসায় এক হবে, হাসবো আমরা মিলবো আমরা বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসবে। এসো গাই গান, ভালোবাসার গান, এসো গাই গান সম্প্রীতির গান …..।

উক্ত নাট্য উৎসবে মোট ৪টি নাট্যগ্রুপ অংশগ্রহন করেন। ক্রমনুসারে প্রথমেই মন্চে আসেন কুমিল্লার সারথী থিয়েটার। তাদের নাটকের নামঃ ৭ই মার্চের ভাষণ। রচনাঃ খান শওকত। নির্দেশনাঃ এজহারুল হক মিজান। মিউজিকঃ কমল চন্দ্র দাস, পোষাকঃ রাইয়ানুল জান্নাত রোজা। অভিনয় করেনঃ মো. বশীরুল আনোয়ার, কমল চন্দ্র দাস, ফয়সাল আহমেদ, এস. এ. এম আল মামুন, এবং এজহারুল হক মিজান। এ নাটকে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাসনের পটভূমি ও বাস্তবতা তুলে ধরা হয়।

এরপর মন্চে আসেন ভারতের বনগাঁর গোবরাপুর সংবিত্তি নাট্য সংস্থা। তাদের নাটকের নামঃ আমার নাম শেখ মুজিব। রচনাঃ খান শওকত। নির্দেশনাঃ কিশোর দত্ত। অভিনয়েঃ গোবিন্দ কর, রামপ্রসাদ ঘোষ, মিন্টু দত্ত এবং রিমা কর। এ নাটকে বঙ্গবন্ধুর নিজের বয়ানেই স্বাধীনতার পটভূমি ও তার স্বপ্নের সোনার বাংলার প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়। বঙ্গবন্ধু চরীত্রে সুনিপুণ অভিনয় করেন কিশোর দত্ত।

এরপর মন্চে আসেন কলকাতার যাদবপুর দলমাদল। তাদের নাটকের নামঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, রচনাঃ খান শওকত, নির্দেশনাঃ সন্জয় সাহা। অভিনয়েঃ স্বরূপ কুমার বোস, অরুণাভ মণ্ডল, সুমন্ত দাস, সৌরভ দাস, সঞ্জয় সাহা, ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত, সুধা কুম্ভকার, অনিন্দিতা ভট্টাচার্য্য, নেহা দেবনাথ, সাত্যকি চন্দ, তপজ্যতি কর, দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য, সুবীর মণ্ডল, রাজেশ সরকার, শুভাশিস দাস এবং চিত্রিতা রায়। এ নাটকে ১৯৭১ সালের উত্তাল মার্চ মাসের বিভিন্ন বিষয়, বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার, কারাবরণ এবং ১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্টের হত্যাকাণ্ড তুলে ধরা হয়। এ নাটকে বঙ্গবন্ধু চরীত্রে অভিনয় করেন সন্জয় সাহা।

সবশেষে মন্চে আসেন ভারতের হাওড়ার ব্যাপ্তি কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন। তাদের নাটকের নামঃ মুজিব বাইয়া যাওরে। রচনাঃ খান শওকত। মঞ্চ পরিকল্পনা ও নির্দেশনাঃ সমিত চৌধুরী। শিল্পীদের নামঃ সমিত চৌধুরী, অঙ্কিত ভট্টাচার্য, সঞ্জয় আচার্য, সৌমেন পাহাড়ি, শুভজিৎ দে, সৌভিক দাস, সৌমিক বসু, অনুপ দাস, সৌরভ মুখার্জি, প্রতিপ সাউ, দিব্যেন্দু বণিক, দীপেন সাহা, অরুণাভ দাশগুপ্ত, কৌস্তভ চক্রবর্তী, শ্রেয়সী গাঙ্গুলি, রিম্পা রুইদাস, ঐশী সর্দার, অনুপা ঘোষ, অদৃজা চ্যাটার্জী, তাপসী ব্যানার্জী, সায়নী সরকার, এবং তৃষিতা বসু। এ নাটকে বঙ্গবন্ধুর দেশপ্রেম, সংগ্রাম, কারাজীবন এবং হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন দিক অভিনয়, কোরিওগ্রাফি এবং মাঈমের কম্বিনেশনে ফুটিয়ে তোলা হয়।

পুরো অনুষ্ঠানে আলোক নির্দেশনা করেন বিশিষ্ট আলোক শিল্পী সুব্রত সরকার এবং সাউন্ড কন্ট্রোল করেন সুবির কুমার। বাংলাদেশ থেকে আরও দুটো গ্রুপ এ উৎসবে অংশগ্রহনের কথা ছিলো। কিন্তু ভিসার জটিলতায় তারা অংশ নিতে পারেননি। তারা হলেন সিলেটের দেশ থিয়েটার এবং ঢাকার বঙ্গবন্ধু থিয়েটার।

প্রধান অতিথি গোবিন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, দুই বাংলার সম্পর্ককে আরও আন্তরিক ও সুদৃঢ় করতে এ ধরনের আয়োজন বারবার হওয়া দরকার এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দেশপ্রেমের কথা ছড়িয়ে দেয়া দরকার।

ভারত বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসবের বাংলাদেশ কমিটির সভাপতি নাট্যজন এজহারুল হক মিজান তার বক্তব্যে সবাইকে আসছে ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিতব্য নাট্য উৎসবে সবাইকে অংশগ্রহনের আহবান জানান।

এ নাট্য উৎসবের মূল উদ্যোক্তা যাদবপুর দলমাদলের সভাপতি সন্জয় সাহা বলেন, নাট্যকার খান শওকতের লেখা পড়লে এটাকে নাটক মনে হয়না, মনে হয় জীবন্ত ঘটনা দেখছি। কারন তার লেখা অত্যন্ত বাস্তবসম্মত, নিরপেক্ষ, হৃদয়গ্রাহী, মর্মস্পর্শী এবং সত্য ইতিহাস। প্রতিটা সংলাপের পরতে পরতে তিনি তথ্য তুলে ধরেছেন। আলোচ্য বিষয়ে প্রচুর গবেষনা না করলে এ ধরনের সংলাপ লেখা যায়না। এ পর্যন্ত তার লেখনী নিয়ে আমাদের উদ্যোগে দুই বাংলায় অনুষ্ঠিত হয়েছে অনেকগুলো নাট্য সেমিনার ও পাঠচক্র। আমার বিশ্বাস তার লেখা নাটকগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার ইতিহাস এবং বঙ্গবন্ধুর বর্নাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের ঘটনাসমুহ নাটকের সংলাপের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়বে সবার মাঝে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।

নিউইয়র্ক থেকে প্রেরিত নাট্যকার খান শওকতের অডিও ভাসন মাইকে বাজিয়ে শুনানো হয়। নাট্যকার খান শওকত তার বক্তব্যে সবাইকে ধন্যবাদ দেন এবং আসছে ফেব্রুয়ারিতে ২য় নাট্য উৎসব সফল করতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন। ভারত বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু নাট্য উৎসবের ভারত কমিটির পক্ষে নাট্যজন কিশোর দত্ত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে এবং আসছে ফেব্রুয়ারিতে কলকাতা এবং বাংলাদেশে অনুষ্ঠিতব্য পরবর্তী নাট্য উৎসব সফল করতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।খান শওকত প্রেরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তি অনুসারে

শেয়ার করুন