কুলাউড়া বাংলাদেশী এসোসিয়েশন অব ইউএসএ ইনকের বার্ষিক বনভোজে দেড় হাজারের বেশি প্রবাসীদের স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণে নিউইয়র্কের ব্রঙ্কস ফেরী পার্ক পয়েন্ট যেনো হয়ে উঠে এক খন্ড সিলেটে। সেই সাথে পরিণত হয় প্রবাসী বাংলাদেশীদের মিলনমেলায়। দিনভর আনন্দ আড্ডা, গান, খেলাধূলা ও র্যাফেল ড্র সহ নানা রকমের বাঙালী খাবারের আয়োজনে উৎসবমুখর পরিবেশে দিনটি কাটান সকলে।
নদীর ধারে প্রাকৃতিক সবুজে ছায়াঘেরা নিউইয়র্কের ব্রঙ্কস ফেরী পার্ক পয়েন্ট এর বিস্তীর্ণ প্রান্তর গত ১৩ জুলাই রোববার যেন একদিনের জন্য পরিণত হয়েছিল প্রবাসের এক খÐ প্রাণের কুলাউড়ায়। কুলাউড়া বাংলাদেশী এসোসিয়েশন অব ইউএসএ ইনক-এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় বার্ষিক পিকনিক, যেখানে প্রবাসে ছড়িয়ে থাকা কুলাউড়াবাসী হৃদয়ের টানে একত্রিত হন প্রাণের এই মিলনমেলায়। কুলাউড়াবাসীদের স্মৃতিময় আপন আত্মীয়তায় মোড়ানো দিন, পরিচিত মুখের হাসিতে, চেনা কণ্ঠের ডাক আর শৈশবের গল্পে বনভোজনস্থল হয়ে উঠেছিল এক অনন্য দিন।
নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, কানেকটিকাট, ফিলাডেলফিয়া, টেক্সাস, ভার্জিনিয়া, মিশিগান ও ওয়াশিংটন ডিসি সহ আমেরিকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারোধিক কুলাউড়াবাসী পরিবার-পরিজন নিয়ে অংশ নেন এই আয়োজনে। কারও হাতে ছোটদের হাত ধরা, কারও বুকে স্মৃতির মলাট, সব মিলিয়ে ফেরী পার্ক হয়ে ওঠে প্রবাসী কুলাউড়াবাসীদের এক আবেগঘন আবাস।
দিনের শুরুতে বেলুন উড়িয়ে বনভোজনের শুভ সূচনা করেন আমন্ত্রিত অতিথি বাংলাদেশ সরকারের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আব্দুর রউফ ও ডেমোক্র্যাট পার্টির লিডার এটর্নী মঈন চৌধুরী। বনভোজনে দিনভর চলেছে হাসি-আড্ডা, নাচ-গান, শিশুদের দৌড়ঝাঁপ আর কুইজ ও খেলাধুলার প্রতিযোগিতায়। ছিল নারীদের মিউজিক্যাল চেয়ার প্রতিযোগিতা, ফুটবল খেলা, র্যাফেল ড্র আর শিশুদের জন্য ছিলো আকর্ষণীয় পুরস্কারের আয়োজন। এর পাশাপাশি মুখরোচক বাঙালী খাবারের বাহার যেন বাড়িয়ে দেয় উৎসবের রঙ। সাংস্কৃতিক পর্বে সঙ্গীত পরিবেশন করেন তানভীর সজিব। সকালের নাস্তা থেকে শুরু করে দুপুরের খাবার সবই ছিল বনভোজন আয়োজকদের স্নেহস্পর্শে সাজানো, যেন বাড়ির স্বাদও ফিরে আসে এমন আপ্যায়নে।
বনভোজনে এনওয়াইপিডি’র কর্মকর্তারা ও কমিউনিটির বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দও উপস্থিত ছিলেন, যাঁদের সক্রিয় অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি হয়ে ওঠে আরও প্রাণবন্ত। বিজয়ীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় পুরস্কার, আর র্যাফেল ড্র-তে ছিল চমকপ্রদ উপহার।
কুলাউড়া এসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ ইলিয়াস খসরুর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মঈনুর রহমান সুয়েবের সঞ্চালনায় বনভোজনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক এমপি ও ঠিকানা গ্রæপের চেয়ারম্যান এম এম শাহীন, প্রবীণ রাজনীতিবিদ লুৎফুর রহমান চৌধুরী হেলাল, বাংলা পত্রিকা’র সম্পাদক ও টাইম টেলিভিশনের সিইও আবু তাহের, বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, সাবেক সভাপতি আজমল হোসন কুনু, নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি মনোয়ারুল ইসলাম, জাকির চৌধুরী সিপিএ, জালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকার সভাপতি বদরুল হোসেন খান, সাবেক সভাপতি বদরুন নাহার খান মিতা, সাধারণ সম্পাদক রুকন হাকিম, নিউকো’র সভাপতি মোহাম্মদ রফিকউদ্দিন চৌধুরী রানা, সোসাইটির ট্রাস্টি বোর্ডের সাবেক সদস্য আব্দুল হাসিম হাসনু, সোসাইিটর নির্বাচন কমিশনার আহবাব হোসেন চৌধুরী খোকন, এস্টোরিয়া ডিজিটাল ট্রাভেলস এর সিইও নজরুল ইসলাম, এস্টোরিয়া ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাবেদ উদ্দিন, বাকা’র সভাপতি সারওয়ার চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান রুহেল, ভাটেরা এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ তালুকদার, এনওয়াইপিডির পুলিশ কর্মকর্তা কারাম চৌধুরী, ক্যাপ্টেন অরটিজ, ক্যাপ্টেইন পেরেজ, ডিটেক্টিভ রাসেক মালিক, সার্জেন্ট মেহেদী মালিক, অফিসার মাহবুবুর জুয়েল, মোহাম্মদ হালিম, সার্জেন্ট আনসার আলী, আব্দুল মুক্তাদির সৈয়দ মোস্তাকিম, মামুন সর্দার প্রমুখ।
এছাড়াও ছিলেন কুলাউড়া এসোসিয়েশনের উপদেষ্টা ফারুক চৌধুরী, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, মোশাহিদ জে রাশেদ, সিরাজ উদ্দিন আহমদ সোহাগ, শাহেদ দেলওয়ার চৌধুরী, সাবেক সভাপতি শাহ্ আলাউদ্দিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাবেদ আহমদ, এসোসিয়েশনের নির্বাচন কমিশনার মুকিত চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাশীদুল মান্নান চৌধুরী হেশাম, সাবেক কোষাধ্যক্ষ জামাল উদ্দিন লিটন সহ এসোসিয়েশনের বর্তমান ও সাবেক নেতৃবৃন্দ।
সকল আনন্দ আর উচ্ছাসে দিনের শেষে, যখন নদীর ওপারে সূর্যটা ধীরে ধীরে অস্তগামী আকাশে ভেসে ওঠে সোনালি রঙের ক্যানভাসে, তখন যেন সবারই মনে একটাই অনুভব এটা শুধু ফেরী পার্ক নয়, এ তো হৃদয়ের কুলাউড়া, প্রবাসে একখন্ড কুলাউড়ার ছড়িয়ে থাকা শিকড়ের উষ্ণ প্রতিচ্ছবি। হৃদ গভীরে গেঁথে থাকা স্মৃতির রঙে রাঙানো কুলাউড়া এসোসিয়েশনের এমন আয়োজন যেন প্রতি বছরই হয়ে ওঠে আত্মপরিচয়ের উদযাপন, ভালোবাসা আর বন্ধনের দীপ্ত আলোকবর্তিকা- এমন প্রত্যাশা সকলের। খবর ইউএনএ’র।