নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের মিডটাউনে গত ২৮ জুলাই সোমবার একটি অফিস ভবনে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে নিউইয়র্ক সিটির বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল ইসলামসহ চারজন নিহত হন।
রক্তক্ষয়ী এ ঘটনা শুরু হয় সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটের দিকে। ওই সময় একটি কালো বিএমডব্লিউ গাড়ি নিউইয়র্কের অন্যতম ব্যস্ত সড়ক পার্ক অ্যাভিনিউতে থামে।
বন্দুকধারী এক ব্যক্তি ওই গাড়ি থেকে একটি এম-৪ রাইফেল নিয়ে নামেন। এরপর তিনি ‘৩৪৫ পার্ক অ্যাভ’ নামে ৪৪ তলা ভবনটিতে প্রবেশ করেন। ভবনটির লবিতে ঢুকেই ডান দিকে ঘুরে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুল ইসলামকে গুলি করে হত্যা করেন।
এরপর বন্দুকধারী এক নারীকে গুলি করেন। তিনি একটি পিলারের পেছনে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। নারীকে গুলি করে লবি দিয়ে ‘গুলি করতে করতে’ হেঁটে যেতে থাকেন হামলাকারী। এরপর সিকিউরিটি ডেস্কে থাকা এক নিরাপত্তারক্ষীকে গুলি করেন হামলাকারী। তখন তিনি লিফটের বোতামে চাপ দেন। একই সময় লবিতে আরেক ব্যক্তিকে গুলি করেন বন্দুকধারী।
হামলাকারী লিফট থেকে এক নারীকে নেমে যেতে দেন। তার কোনো ক্ষতি করেননি। এরপর লিফটে করে ৩৩ তলায় যান হত্যাকারী। সেখানে গিয়ে আরেক নারীকে গুলি করে তারপর নিজের বুকে গুলি চালান তিনি।
নিহত পুলিশ কর্মকর্তা দিদারুলের বয়স ছিল মাত্র ৩৬ বছর। তিনি বাংলাদেশি ইমিগ্রেন্ট ছিলেন। নিউইয়র্ক সিটি পুলিশে তিন বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করছিলেন তিনি। হামলার দিন তার ডিউটি ছিল ব্রঙ্কসের ৪৭ প্রিসেঙ্কটে। কিন্তু হামলার সময় তিনি ৩৪৫ পার্ক অ্যাভ ভবনে কাজ করছিলেন।
দিদারুলের দুই সন্তান রয়েছে। তার স্ত্রী গর্ভবতী। তিনি তৃতীয় সন্তানের বাবা হতেন।
নিউইয়র্ক পুলিশ কমিশনার দিদারুল সম্পর্কে বলেছেন, “আমরা তাকে যে কাজ করতে বলেছিলাম তিনি সেই কাজই করছিলেন। তিনি নিজেকে ঝুঁকির পথে রাখেন। তিনি নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। তাকে ঠান্ডা মাথায় গুলি করা হয়েছে। তিনি হিরো হিসেবে বেঁচে ছিলেন, মারাও গেছেন হিরো হিসেবে।”
বন্দুকধারী ব্যক্তি চারজনকে হত্যার পর নিজের বুকে গুলি চালিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে জানিয়েছেন নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ কমিশনার জেসিকা এস. টিশ।
ওই বন্দুকধারীর পরিচয় জানতে পেরেছে পুলিশ। তার নাম শেন তামুরা। ২৭ বছর বয়সী এই হত্যাকারী লাস ভেগাসের বাসিন্দা। নেভাডা রাজ্যে তার অস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে। এছাড়া তার মানসিক সমস্যার রেকর্ডও রয়েছে। তবে মানসিক সমস্যার কারণে তিনি এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন কি না সেটি নিশ্চিত নয়।
ন্যক্কারজনক এ হত্যাকাণ্ড ঘটানোর আগে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি। সর্বশেষ নিউইয়র্কে এসে মানুষ খুন করেছেন।