গত শনিবার, ২৩ আগষ্ট নিউইয়র্কের রিগো পার্কের জয়া পার্টি হলে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নি-ইউ-কো ইনক (NiUKo – Self-Motivated) আয়োজন করেছিল তাদের বার্ষিক চ্যারিটি ডিনার, অ্যাওয়ার্ডস সেরিমনি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
মানবতার প্রতি গভীর অঙ্গীকারের বহিঃপ্রকাশ থেকে আয়েজিত অনুষ্ঠানটি রুপান্তরিত হয়েছিল আলো-ঝলমলে পরিবেশে প্রবাসীদের অনন্য এক সমাবেশে। বাংলাদেশের ফেলে আসা মানুষদের জন্য যারা প্রবাসে থেকেও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের আত্মত্যাগ ও অকৃত্রিম ভালোবাসার বন্ধনের নানা দিক ফুটে উঠেছিল গভীর আন্তরিকতায় অথচ ছিমছাম পরিবেশে আয়োজিত নি-ইউ-কোর অনুষ্ঠানটি।
নি-ইউ-কো ইনকের সদস্যরা মানবতার কল্যাণের কাজটি করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। তাদের একটাই স্বপ্ন: দুর প্রবাসে থেকেও ফেলে আসা বাংলাদেশের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব করা, অসহায় মানুষের মুখে সামান্য হলেও হাসি ফোটানো।
সংগঠনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মিনহাজ আহমেদ এর সঞ্চালনায় ।জয়া পার্টি হলে নিউকোর অনুষ্ঠানের শুরুতে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানানো হয় এবং শহীদ যোদ্ধাদের স্মরণে নীরবতা পালন করা হয়। নি-ইউ-কো’র চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন চৌধুরী রানা স্বাগত বক্তব্যে সংগঠনের দাতাগণ ও সহযোগীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। নীরবে কাজ করা এ প্রবাসী নেতা বছরের পর বছর মানবিক কাজে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন।
এলিস আইল্যান্ড পদকে ভূষিত একমাত্র বাংলাদেশি আমেরিকান ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেন এবং মানবিক কাজে সক্রিয় হওয়ার জন্য সবাইকে আহ্বান জানান।
আমেরিকার বাইরে থেকে আগত প্রবাসের সফল ব্যক্তিত্ব সাকী চৌধুরী, আব্দুল হান্নান এবং সমাজসেবী মনোয়ারা চৌধুরীও সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। মনোয়ারা চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে তার স্বামী সমাজসেবক রফিক উদ্দিন চৌধুরীর সকল মানবিক কর্মকাণ্ডে প্রেরণা হয়ে আছেন।
এরপর মঞ্চে উঠে আসে মৌলভীবাজারের বড়লেখায় প্রবাসীদের সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত শহীদ ডাঃ আব্দুন নুর ওয়েলনেস সেন্টার এর গল্প। এ সময় শামীম আহমেদ, সৈয়দ হক ও মুকুল হক প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম তুলে ধরেন।
এঞ্জেল কেয়ার একাডেমী নিয়ে হৃদয়স্পর্শী বক্তব্য দেন ডাঃ মিতা চৌধুরী। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য এ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা এবং এর সঙ্গে তার আত্মিক জড়িয়ে পড়ার কথা তিনি আবেগঘনভাবে তুলে ধরেন।
শমশের নগর হাসপাতাল গঠনের পেছনের গল্প শোনান বাংলাদেশ থেকে আগত শিল্পী সেলিম চৌধুরী। প্রবাসীদের সহায়তায় কীভাবে হাসপাতাল গড়ে উঠছে, সে বিষয়ে সবিস্তার বর্ণনা দিয়ে তিনি কৃতজ্ঞতা জানান প্রবাসীদের প্রতি। এসময় সঙ্গে থাকা কবি ও লেখক ইশতেহাক রুপু ও ফকু চৌধুরী তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন মৌলভীবাজার নিয়ে কথা বলেন প্রফেসর ডাঃ সুখেন্দু বিকাশ দাস। মুক্তিযোদ্ধা বাবাকে স্মরণ করে এ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পেছনের প্রেরণা ও সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন তিনি। মানবিক কাজে অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ফার্মাসিস্ট লিয়াকত হোসেন এর উদ্ভাবিত ঔষধ রিভিফাই নিয়ে তথ্য উপস্থাপন করেন সৈয়দ আফসর হোসেন।
এছাড়া বক্তব্য দেন নিউ ইয়র্কের দুই নারী সমাজকর্মী বাংলাদেশ সোসাইটি নিউ ইয়র্কের সাবেক সভাপতি নার্গিস আহমেদ ও মূলধারার রাজনীতিবিদ মেরি জোবাইদা। নার্গিস আহমেদ গত চার দশক ধরে প্রবাসে কমিউনিটি গঠনের অভিজ্ঞতার চিত্র তুলে করেন। মেরি জোবাইদা নিউইয়র্কে স্টেট অ্যাসেম্বলি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কথা জানান এবং সকলের সমর্থন চান।
সমাজসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার জন্য নি-ইউ-কো’র পক্ষ থেকে শিল্পী সেলিম চৌধুরী, এম শফিকুর রহমান এবং তফাজ্জল করিম-কে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। সম্মাননা তুলে দেন ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ ও রফিক উদ্দিন চৌধুরী রানা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা বাবরুল হোসেন বাবুল, অধ্যাপিকা রানা চৌধুরী, ধরা’র সমন্বয়ক সেলিনা উদ্দিন, পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান, প্রথম আলো উত্তর আমেরিকার সম্পাদক ইব্রাহীম চৌধুরী, টাইম টিভির সিইও আবু তাহের, সাংবাদিক রহমান মাহবুব, আবু সাঈদ, রাশিদা আখতার, মোস্তাক আহমেদ, বেদারুল ইসলাম বাবলা, ডাঃ ফাতেমা আহমেদ, কল্লোল আহমেদ, আবু নোমান সাকিল, তহুর চৌধুরী, নুরে আলম জিকু, আব্দুর রহিম বাদশাহ, জামিল চৌধুরী, নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
শেষ পর্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ফাতেমা শাহাব রুমা ও সাইফুর রহমান। নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের পরিবেশিত সংগীত, কবিতা ও নৃত্য দর্শকদের মন জয় করে নেয়। বিশেষত সেলিম চৌধুরীর গানে সবাই যেন ফিরে যান দেশের মাটিতে।