২০শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

লস অ্যাঞ্জেলেসে কারফিউ, আরও রাজ্যে ছড়াচ্ছে বিক্ষোভ

ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেসে নথিপত্রহীন অভিবাসীদের ধরপাকড়ের প্রতিবাদে চলমান বিক্ষোভের পঞ্চম দিনে গত মঙ্গলবার ১০ জুন পুলিশ গণগ্রেপ্তার চালিয়েছে। সেই সঙ্গে শহরের কেন্দ্রে একটি এলাকায় নৈশকালীন কারফিউ জারি করা হয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ভাঙচুর এড়াতে শহরের মেয়র কারেন ব্যাস এ সিদ্ধান্ত নেন। এ অবস্থায় শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে বিপুলসংখ্যক নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। হেলিকপ্টারে টহল দিচ্ছে পুলিশ। তবে এসবের মধ্যেই স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে লস অ্যাঞ্জেলেসে বড় বিক্ষোভ হয়েছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী অবস্থানের প্রতিবাদে এসব বিক্ষোভ ক্রমেই যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নথিপত্রহীন অভিবাসীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রাখার বার্তা দিয়ে বলেছেন, তিনি লস অ্যাঞ্জেলেস শহরকে ‘মুক্ত’ করতে চান। এরই মধ্যে শহরটিতে সেনা মোতায়েন নিয়ে মেয়র কারেন ব্যাস ও গভর্নর গাভিন নিউসমের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছেন ট্রাম্প। গতকাল বুধবার বিবিসি জানায়, নিউসম ট্রাম্পের বক্তব্যকে ‘গণতন্ত্রের অবমাননা’ ও ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’ বলে বর্ণনা করেছেন।

ট্রাম্প দাবি করেছেন, শহরটিতে ৪ হাজার ন্যাশনাল গার্ডের সেনা ও ৭০০ মেরিন সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত সঠিক। এটা তিনি করেছেন ‘বিদেশি শত্রুর হাতে’ শহর যাতে দখল না হয় সেজন্য। লস অ্যাঞ্জেলেসের পুলিশ বলছে, শহরটিতে এখনও বেশি কয়েকটি গ্রুপ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে। কয়েকটি এলাকায় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর রাবার বুলেট ছোড়ে। বিপুলসংখ্যক বিক্ষোভকারী গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া গেলেও পুলিশের পক্ষ থেকে সঠিক সংখ্যা নিশ্চিত করা হয়নি। তবে মেয়র কারেন ব্যাস বলেছেন, কেবল মঙ্গলবারেই প্রায় ২০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আগের দিন গ্রেপ্তার হন আরও কয়েক ডজন।

লস অ্যাঞ্জেলেসে কারফিউ জারি প্রসঙ্গে মেয়র কারেন ব্যাস বলেন, তিনি লুট ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে চান। বিক্ষোভের কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠা এক কিলোমিটার এলাকায় এ কারফিউ বলবৎ থাকবে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত এ কারফিউ বলবৎ থাকে। মেয়র জানান, সোমবার রাতে শহরের ২৩টি দোকানে লুট হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে নথিপত্রহীনদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রচারণা চালান ডোনাল্ড ট্রাম্প। সে অনুযায়ী ক্ষমতায় গিয়ে অভিবাসনবিরোধী নানা পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেন। শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ব্যাপক ধরপাকড়। লস অ্যাঞ্জেলেসের বিক্ষোভকারীরা মূলত এ ধরপাকড়েরই বিরোধিতা করছেন। ডেমোক্র্যাটশাসিত অঙ্গরাজ্যটির বিক্ষোভ এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অন্য এলাকাগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে।

জর্জিয়ার আটলান্টায় শত শত মানুষ ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন। সেখানে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। বিক্ষোভ হয়েছে নিউইয়র্কের ম্যানহাটানে। সেখানে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমে আসেন। বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সম্ভাব্য বিক্ষোভ মিছিলের আগাম খবর পেয়ে টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবোট ন্যাশনাল গার্ডের সেনাদের অঙ্গরাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় মোতায়েন করেছেন। সেই সঙ্গে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, কোনো ব্যক্তি বা কারও সম্পত্তির ক্ষতি করা হলে পুলিশ গ্রেপ্তার করবে। বিক্ষোভ হয়েছে শিকাগোতেও। দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন জানায়, শিকাগোর অভিবাসন আদালতের বাইরে লোকজন জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন। তবে সেখানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের খবর মেলেনি।