ইমাম হোসেন অপন : গত ৭ জুলাই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্ব বাণিজ্য নীতিতে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছেন। তিনি বিশ্বের ১৪টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকে পাঠিয়েছেন একটি চিঠি, যেখানে ঘোষণা করা হয়েছে—আগামী ১ আগস্ট ২০২৫ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে এসব দেশের নির্দিষ্ট পণ্যের ওপর ২৫% থেকে ৪০% পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হবে, যদি না নতুন বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদিত হয়।
এই নতুন নীতিকে বলা হচ্ছে “Reciprocal Tariff Policy” বা “পারস্পরিক শুল্কনীতি”। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র মূলত এমন দেশগুলোর ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করতে চায়, যারা আমেরিকান পণ্যের ওপর অন্যায্য হারে শুল্ক আরোপ করে থাকে।
বৈশ্বিক প্রভাব ও শুল্কহার
নতুন ঘোষণায় যেসব দেশ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছে :
• ২৫%: জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, টিউনিসিয়া, মালয়েশিয়া, কাজাখস্তান
• ৩০%: দক্ষিণ আফ্রিকা, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা
• ৩৫%: বাংলাদেশ, সার্বিয়া
• ৩৬%: কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড
• ৪০%: লাওস, মায়ানমার
এই তালিকায় বাংলাদেশের নাম থাকা বিশেষভাবে উদ্বেগজনক।
বাংলাদেশের রপ্তানি ঝুঁকি : ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনুস বরাবর পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করেছেন, ১ আগস্ট ২০২৫ থেকে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানিকৃত সকল পণ্যের উপর ৩৫% শুল্ক আরোপ করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী বাণিজ্য ঘাটতি, উচ্চ শুল্ক, এবং অ-ট্যারিফ বাধা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত এই ঘোষণায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য, যেখানে নীট পোশাক, জার্সি, হোম টেক্সটাইল এবং অন্যান্য হালকা শিল্পজাত পণ্য রপ্তানি হয়। শুল্ক আরোপের পরিণতি হিসেবে-
• মার্কিন বাজারে মূল্য প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে বাংলাদেশি পণ্য
• রপ্তানি আদেশ কমে যাবে, অন্য দেশ যেমন ভিয়েতনাম, মেক্সিকো, ভারত এগিয়ে যাবে
• শ্রমিক ছাঁটাই, কারখানা বন্ধ ও বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহে সংকট দেখা দিতে পারে
করণীয় ও কৌশলগত পরামর্শ-
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য কিছু বাস্তবধর্মী ও তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ প্রয়োজন :
১. যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বাণিজ্য সংলাপ পুনরায় শুরু করা
২.যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত প্রভাবশালী প্রবাসী বাংলাদেশিদের কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় সম্পৃক্ত করা
৩.আমেরিকান আমদানিকারকদের লবিং এর মাধ্যমে শুল্ক নীতিতে প্রভাব বিস্তার
৪.বাংলাদেশি পণ্যের মানবিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব তুলে ধরা, বিশেষ করে শ্রমিকদের জীবনযাত্রা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং সামাজিক প্রভাব
সরকারি-বেসরকারি সমন্বয়ে কৌশল নির্ধারণ ও কার্যকর যোগাযোগ গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।
এই নতুন শুল্কনীতি শুধু অর্থনৈতিক নয়, বরং একধরনের ভূরাজনৈতিক চাপ প্রয়োগ। বাংলাদেশের মতো রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতির জন্য এটি একটি জাগরণ বার্তা।
তবে সঠিক সময়ের কূটনীতি, বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্ব, এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট অনুধাবনের মাধ্যমে বাংলাদেশ এই সংকটকেও একটি সম্ভাবনায় রূপান্তর করতে পারে। এটি এখন কেবল বাণিজ্য বাঁচানোর বিষয় নয়—এটি জাতীয় অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণের প্রশ্ন।
ইমাম হোসেন অপন
সাংবাদিক, ব্যবসায়ী ও গবেষক
নির্বাহী পরিচালক – এইচ বি গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ ইনক। নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র